ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | লোকসানের বলয় থেকে বেরুতে পারছে না রেলওয়ে

লোকসানের বলয় থেকে বেরুতে পারছে না রেলওয়ে

বাংলাদেশ-রেলওয়ে

নিউজ ডেক্স : ঢাকা–চট্টগ্রাম রেলপথ ডাবল লাইনে উন্নীতকরণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হলেও লোকসানের বলয় থেকে বেরুতে পারছে না রেলওয়ে। নানা অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম এবং দুর্নীতির ফলে এক বছরেই বাংলাদেশ রেলওয়েকে লোকসান দিতে হয়েছে সাড়ে ১৮শ’ কোটি টাকারও বেশি। রেলের উন্নয়নে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলেও পরিকল্পিত এবং সমন্বিত উদ্যোগের অভাবে সব আয়োজনই যেন মুখ থুবড়ে পড়ছে। রেলের কোচ আমদানি করা হলেও ইঞ্জিন আমদানি বন্ধ রয়েছে বহুদিন ধরে। ফলে কোচ এসে অলস পড়ে থাকলেও ইঞ্জিনের অভাবে ট্রেন চালানো দায় হয়ে পড়ছে। প্রতিদিনই ইঞ্জিনের সংকট মোকাবেলা করে কোনো মতে জোড়াতালি দিয়ে ট্রেন চালাতে হচ্ছে। অপরদিকে ট্রেনে উঠে বিভিন্ন বগিতে খালি সিট থাকলেও কাউন্টারে টিকেট না পাওয়ার সেই পুরনো রোগ এখনো সারানো সম্ভব হয়নি। হাজার হাজার মানুষ টাকা দিয়েও টিকেট পান না। অথচ ট্রেন খালি যায়, আর লোকসানের অংকটা কেবলই বাড়তে থাকে। সম্প্রতি রেল সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে এমনটাই অভিযোগ উঠে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, অত্যন্ত নিরাপদ এবং জনপ্রিয় বাহন হিসেব ট্রেন বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। বিশ্বের নানা দেশে ট্রেনের বিকাশ স্বপ্নকে ছাড়িয়ে গেছে। এমনকি প্রতিবেশি দেশ ভারতেও ট্রেনের জয়যাত্রা অন্য অনেক কিছুকে ছাড়িয়ে গেলেও বাংলাদেশের অবস্থা বেহাল। সরকার ট্রেনের উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। ঢাকা–চট্টগ্রাম রেলপথ ডাবল লাইনে উন্নীত, দোহাজারী থেকে ঘুনধুম পর্যন্ত ট্রেন লাইন সম্প্রসারণ, ডেমু ট্রেন আমদানি, কোচ আমদানি, রেলওয়ে স্টেশনে ট্র্যাকবৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড গ্রহণ করেছে। গত অর্থবছরে শুধু রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে শুরু হয়েছে অন্তত ১৫ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। কিন্তু এত আয়োজনের পরেও রেলওয়ের লোকসানের চাকা কিছুতেই যেন থামছে না।

সম্প্রতি জাতীয় সংসদে রেলমন্ত্রী বলেন, গত অর্থবছরে রেলওয়ে লোকসান দিয়েছে ১ হাজার ৮৫২ কোটি ৯৪ লাখ ৬৬ হজার টাকা। ওই বছর রেলের আয় ছিল ১ হাজার ২৮৯ কোটি ৩৫ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। আর ব্যয় ছিল তিন হাজার ১৪২ কোটি ৩০ লাখ ৩০ হাজার টাকা। নীট লোকসান ১ হাজার ৮৫২ কোটি ৯৪ লাখ ৬৬ হজার টাকা।

লোকসানের জন্য বাংলাদেশ রেলওয়েতে বিরাজিত নানা অনিয়ম, দুর্নীতি এবং সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করে বলা হয়েছে, রেলে যথেষ্ট কাজ হয়েছে এবং হচ্ছে। কিন্তু সমন্বয়হীনতা প্রকট। যেটার প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি সেটি আগে না করারও একটি প্রবণতা রয়েছে রেলে। রেলের পূর্বাঞ্চলে বগির সংকট রয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি সংকট রয়েছে ইঞ্জিনের। রেলপথ সংস্কার, লাইন ডাবল ও ট্র্যাক বাড়ানোসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলছে। আনা হয়েছে বগি। কিন্তু গত প্রায় ৫ বছর ধরে একটি ইঞ্জিনও আমদানি করা হয়নি। এখন লাইন আছে, বগি আছে কিন্তু ইঞ্জিন না থাকায় প্রত্যাশিত সুফল থেকে বঞ্ছিত রেলওয়ে।

গতকাল বাংলাদেশ রেলওয়ের শীর্ষ একাধিক কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা গেছে, ইঞ্জিন সংকটের কথা বহুদিন ধরে বলা হচ্ছে। রেলের শীর্ষ পর্যায়েও জানানো হয়েছে। কিন্তু ইঞ্জিন আমদানির ব্যাপারে এক ধরনের উদাসীনতা রয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর এবং সিলেট নিয়ে গঠিত রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে প্রতিদিন গড়ে ১১১টি ইঞ্জিন লাগে। অথচ এর বিপরীতে রেলওয়ের যান্ত্রিক বিভাগ থেকে প্রতিদিন গড়ে ১০৩টি ইঞ্জিন যোগান দেয়া হয়। প্রতিদিন গড়ে আটটি ইঞ্জিনের অভাব থাকে। এটি গড় হিসেব। কোনো কোনো দিন এই সংখ্যা ১৫টি পর্যন্ত ছাড়িয়ে যায়। গত প্রায় তিন বছর ধরে ইঞ্জিন নিয়ে জোড়াতালি চলছে।

কর্মকর্তারা জানান, পূর্বাঞ্চলে বর্তমানে সর্বমোট ১৫০টি ইঞ্জিন রয়েছে। এরমধ্যে গড়ে ৫০টি ইঞ্জিন অচল থাকে। গতকালও বিকল ইঞ্জিনের সংখ্যা ৪৭টি ছিলে বলে রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এসব ইঞ্জিন মেরামত হচ্ছে। কর্মকর্তারা বলছেন, আজ দু’টি মেরামত করে আনা হলে কাল আবার তিনটি মেরামতের জন্য পাঠানো হচ্ছে। এখন এমনটাই চলছে রেলওয়েতে।

রেলের ভয়াবহ অবস্থা উল্লেখ করে একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পৃথিবীর সব দেশেই অতিরিক্ত ইঞ্জিন থাকে। যেগুলো স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়। জরুরি প্রয়োজনে যাতে ট্রেন চলাচলে কোনো বিঘ্ন না ঘটে। অথচ আমাদের অতিরিক্ত–তো দূরের কথা, প্রয়োজনীয় ইঞ্জিনও নেই। একটি রেল ইঞ্জিনের গড় আয়ুষ্কাল ধরা হয় বিশ বছর। পূর্বাঞ্চলের ১৫০টি ইঞ্জিনের ১০৩টির এই আয়ুষ্কাল পার হয়েছে বহু আগে। বাকি ৪৭টির মেয়াদও আগামী বছর দুয়েকের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।

ইঞ্জিন আমদানি অত্যন্ত জরুরি হলেও কেন আনা হচ্ছে না তা খতিয়ে দেখা দরকার বলে উল্লেখ করেন ওই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ২০১১ সালে কোরিয়া থেকে ২০টি এবং ২০১৩ সালে ১৯টি ইঞ্জিন আমদানি করা হয়। এই ৩৯টি ইঞ্জিন তখনকার প্রেক্ষিতে সংকট মেটালেও বর্তমানে আবারো প্রকট হয়ে উঠেছে। ইঞ্জিন সংকটের কারণে রেলের যাত্রী এবং পণ্য পরিবহনসহ সব ধরনের কার্যক্রমে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। যার ধকল সামলাতে রেলের লোকসানের পরিমাণ কেবলই বাড়ছে।

যাত্রীদের হাতে টিকেট না পৌঁছাটাও রেলওয়ের লোকসানের একটি বড় কারণ বলে দাবি করেন সংশ্লিষ্টরা। যাত্রীরা দাবি করছেন, ট্রেন খালি গেলেও তারা টিকেট পান না। রেলের সিট থাকা পর্যন্ত প্রতিটি টিকেট যাতে বিক্রি হয় তা নিশ্চিত করা গেলে লোকসান বহুলাংশে কমে আসতো বলে মন্তব্য তাদের।

বিষয়টি নিয়ে গতকাল রেলের পদস্থ একজন কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি টিকেট বিক্রিতে অনিয়মের কথা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, যতক্ষণ টিকেট থাকে, ততক্ষণ বিক্রি করা হয়। অনলাইন এবং মোবাইল অ্যাপসে টিকেট বিক্রির ব্যবস্থা থাকায় গোঁজামিলের কোনো সুযোগ নেই বলেও দাবি করেন তিনি।

সূত্র : দৈনিক আজাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!