Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | রোহিঙ্গারা সামাজিক দূরত্ব লকডাউন কিছুই মানছে না

রোহিঙ্গারা সামাজিক দূরত্ব লকডাউন কিছুই মানছে না

নিউজ ডেক্স : বিশ্বে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) নিয়ে কোনো মাথাব্যাথা নেই কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের। এখানে নেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক ব্যবহার বা লকডাউনের বালাই। রোহিঙ্গা শিশু, নারী বা পুরুষ কারোই এ নিয়ে ভ্রুক্ষেপই নেই। যে যার মতো করে ভাবছে এ ভাইরাস নিয়ে।

কেউ কেউ মনে করছে, তাদের সমস্যা সমাধান হলেই ভাইরাস আপনাআপনি চলে যাবে। কেউ মনে করছে রোগ দিয়েছেন আল্লাহ্, সারাবেনও আল্লাহ্। আবার অনেকে মনে করে, আমরা নিজেরাই মজলুম নিযার্তিত। আমাদের করোনা রোগে ধরবে না।

ফলে শত শত মুসল্লি নিয়ে মসজিদে নামাজ আদায় যেমন চলছে তেমনি শত শত লোকসমাগম ঘটিয়ে বাজারও চালু রয়েছে। মেয়েরা পানি নিচ্ছে নির্দিষ্ট পয়েন্টে গিয়ে। সেখানে মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব। শিশুরা ক্যাম্পের ছোট ছোট গলিতে চলাফেরা করছে তাদের মতোই।

বেশিরভাগ রোহিঙ্গা জানে না করোনাভাইরাস সংক্রমণ হতে বাঁচতে হলে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে, মুখে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।

সরেজমিন টেকনাফের জাদিমোড়া, শালবাগান, নয়াপাড়া, লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য উঠে আসে।

গত শুক্রবার সকাল ১১টা হতে সন্ধ্যা ৫টা পর্যন্ত এসব ক্যাম্পের মসজিদ, বাজার, দোকান, ঘর-বাড়ি ইত্যাদি দেখে কোথাও মনে হয়নি এখানে লকডাউন চলছে। করোনাভাইরাস নামের মহামারী সংক্রমণ রোধে কোনো কার্যকর কর্মকাণ্ড আছে।

ক্যাম্পের অভ্যন্তরে চলছে টমটম, অটোরিকশা, বাজারে শত শত মানুষ সামাজিক দূরত্ব না মেনেই কেনাকাটা চালিয়ে যাচ্ছে। চায়ের দোকানে চলছে জম্পেশ আড্ডা। জুমার নামাজে শত শত মানুষ নামাজ আদায় করছে। শিশুরা ক্যাম্পের অলিগলিতে খেলছে। দুপুর ২টার দিকে নারী-পুরুষ ও শিশুরা নির্দিষ্ট স্থান হতে পানি সংগ্রহ করছে। কোথাও কোথাও সকাল হতে এসব স্থানে সারিবদ্ধভাবে কলসি বা জারিকেন বসিয়ে রেখেছে পানি সংগ্রহের জন্য।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা রূপবাহান জানান, আগে এনজিও’র কর্মীরা এসে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে থাকার জন্য, বেশি বেশি হাত ধোয়া ও দূরে দূরে অবস্থান করার জন্য পরার্মশ দিলেও এখন তাদের দেখা যায় না। তিনি আরো বলেন, ‘ঘরে ঘরে সাবান আগে থেকে দিয়ে যাচ্ছে তবে বর্তমানে হাসপাতালে ভালো চিকিৎসা পাচ্ছে না অসুস্থরা।’

শালবাগান ক্যাম্পের রোহিঙ্গা দোকানদার সলিম উল্লাহ বলেন, ‘আগে জনপ্রতি দৈনিক ২০ লিটার পানি সরবরাহ করা হতো। এখন করোনাভাইরাসজনিত সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য বেশি পানি ব্যবহারের কথা বলা হলেও দৈনিক ১০ লিটারের বেশি পানি পাওয়া যাচ্ছে না। এতে করে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ও বাংলাদেশ সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। পানি সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে।’

শালবাগানে অক্সফাম ওয়াটার ট্রিটম্যান্ট প্ল্যান্ট বাস্তবায়ন করলেও এখন কাজ করছে এনজিও ফোরাম। এনজিও ফোরামের মাঠ কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ বলেন, ‘দৈনিক দু’বেলা পানি সরবরাহ দিয়ে থাকি। এছাড়া করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা ক্যাম্পের ঘরে ঘরে গিয়ে সচেতনতা কার্যক্রমও চালিয়ে যাচ্ছে।’

লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের রোহিঙ্গা যুবক আনোয়ার বলেন, ‘করোনা হতে বাঁচতে মুখে মাস্ক ব্যবহারসহ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করছি কিন্তু বেশিরভাগ রোহিঙ্গা এসব মানতে নারাজ। তারা মনে করে রোগ দিয়েছে আল্লাহ্। রোগ সারাবেনও আল্লাহ্।’

শালবাগানের মৌলভী কেফায়েত উল্লাহ বলেন, ‘সারাবিশ্বে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। মহামারী আকার ধারণ করেছে। আগে এ ধরণের ভাইরাস হলে দোয়া-দরুদ পরে এলাকা বন্ধ করা হতো। মহামারী চলে যেত। আমাদের আশা ক্যাম্পে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা তেমনটি নাই। যেহেতু আমরা মজলুম বা নির্যাতিত। আল্লাহ্ আমাদের প্রতি রহম অর্থাৎ দয়াবান হবেন। আমরা প্রতিনিয়ত নামাজ পড়ে কান্নাকাটি করছি।’

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন সরকারি আদেশে সম্প্রতি কক্সবাজার জেলা লকডাউন ঘোষণা করেছেন। তিনি জানান, কক্সবাজার জেলা লকডাউনের মধ্যেই উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাস্পও এর আওতায় পড়েছে। এরপর হতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শুধু অতি জরুরি কর্মকাণ্ড ছাড়া অন্য সব কাজ বন্ধ রয়েছে।

কক্সবাজারস্থ শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (যুগ্ম সচিব) মাহাবুব আলম তালুকদার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইসোলেশন ইউনিট প্রস্তুত শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ইউএনএইচসিআর এ বিষয়ে কাজ করছে। রোহিঙ্গাদের মধ্যে এখনো করোনার প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়েনি।’ নতুন করে কোনো দেশী বা বিদেশী যাতে ক্যাম্পে ঢুকতে না পারে সেই বিষয়ে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে মাঝেমধ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নৌবাহিনী, সেনাবাহিনী, র‌্যাব, পুলিশ, আনসারসহ উপজেলা প্রশাসনের টিম করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে টহল দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বলে জানান টেকনাফ উপজেলা সহকারী কমিশনার( ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবুল মনছুর।

তবে ক্যাম্পের নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত একটি বাহিনীর এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ক্যাম্পের অবস্থা নাজুক। তারা লকডাউন, সামাজিক দূরত্ব কিছুই মানছে না। তবে আগের মতো ক্যাম্প হতে লোকালয়ে যাচ্ছে না। আমরাও সেখানে আগের মতো যাচ্ছি না। দৈনিক আজাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!