Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | রোহিঙ্গাদের মারমূখী আচরণে আতংকে স্থানীয়রা

রোহিঙ্গাদের মারমূখী আচরণে আতংকে স্থানীয়রা

rohingya_exodus
কায়সার হামিদ মানিক, উখিয়া : চোখের সামনে স্ত্রী, কন্যা ও বোনকে ধর্ষণের পর হত্যা, ইতিহাসের বর্বরোচিত নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গারা এখন প্রতিশোধ পরায়ন ও প্রতিবাদি হয়ে উঠেছে। জাতিসংঘ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদল শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শনে গেলে রোহিঙ্গারা বর্মার দেশ আরার দেশ, রোহিঙ্গা হত্যার বিচার চাই এই শ্লোগানে শ্লেভগানে মুখরিত করে রাখে পুরো ক্যাম্প এলাকা।
সম্প্রতি বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিত্যপণ্য খাবার সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ডাব্লিউ এফ পির খাদ্য গোদামে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে ভাংচুরের চেষ্টা চালায়। এর আগে শবে বরাতের রাতে রোহিঙ্গা যুবকেরা ইয়াবা সেবন করলে স্থানীয়রা বাঁধা দেয়। এতে স্থানীয় ও রোহিঙ্গা ও পুলিশের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশসহ অনেকেই আহত হয়।
এতে স্থানীয় পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরীকে অভিযুক্ত করে উখিয়া থানায় মামলা হয়েছে। এই জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে স্থানীয়দের উস্কে দিয়ে সংঘটিত ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ এনে তাকে প্রধান আসামি করা হয়েছে বলে মামলার তদন্ত অফিসার উখিয়া থানার উপ-পরিদর্শক মিল্টন দে বিপিএম জানান। পুলিশের ওপর হামলা ও কর্তব্য কাজে বাধাঁ প্রদানের অভিযোগে এই মামলায় অজ্ঞাতনামা ৩শ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলাটি থানায় রেকর্ড হওয়ার পর থেকে চেয়ারম্যান আত্গোপনে থাকাসহ স্থানীয়দের গ্রেপ্তার ও পুলিশি হয়রানির আতঙ্কে গ্রামছাড়া হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে গত ৯ মে বুধবার চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী কক্সবাজার আদালতে হাজির হয়ে জামিন চাইলে আদালত জামিন না মন্জুর করে তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করেন।
ইতিমধ্যে শরণার্থী ক্যাম্পে সশস্ত্র রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী আল একিইনসহ বিচ্ছিন্নবাদি সংগঠনের বেপরোয়া কার্যক্রম ও আধিপত্য বিস্তারে প্রত্যাবাসন বিরোধী দ্বন্ধে খুন, অপহরণ, গোলাগুলি, মুক্তিপণ আদায়সহ বিভিন্ন নাশকতা ঘটছে। সশস্ত্র গ্রুপগুলোর হুমকির মুখে পড়েছে নিরীহ রোহিঙ্গা ও স্থানীয়রা। তাদের বেপরোয়া আচরণে স্থানীয়রা চরম আতংকে দিন কাটাচ্ছেন।
সামনে বর্ষাকালে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গা ডাকাতেরা স্খানীয়দের বাড়ি-ঘরে ডাকাতি লুটতরাজ চালাতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করছেন এখানকার নাগরিক সমাজ। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বেড়েছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার। ঝরছে রক্ত। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অবৈধ মাদকের ব্যবসা। আর এতে পিছনে থেকে আখের গোচাচ্ছে ক্যাম্পের চিন্থিত প্রভাবশালী মহল। তারা রোহিঙ্গা গ্রুপ গুলোকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এসব চিন্থিত প্রভাবশালী বিরুদ্ধে সরকারী গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সরকারের উচ্চ মহলে রিপোর্ট দিলেও তাদের অপতৎপরতা থেকে নেই। এমনই অভিমত স্থানীয় সুশীল সমাজের। স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের ইন্ধনে প্রত্যাবাসন বিরোধী এক শ্রেণির রোহিঙ্গা সশস্ত্র তৎপরতায় লিপ্ত। মূলত এদের হানাহানিতেই আবারো অশান্ত হয়ে উঠেছে শরণার্থী ক্যাম্প। এসব সন্ত্রাসী রোহিঙ্গা গ্রুপ বহিরাগত ভাড়াটিয়া হিসেবে ভূমি দখল, চাঁদাবাজি, মাদক, অপহরণ বাণিজ্য এবং এলাকার আধিপত্য লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ে। কম মজুরিতে যেমন রোহিঙ্গা শ্রমিক পাওয়া যায় তেমনি তাদের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির যুগ্ন সম্পাদক সাংবাদিক নুর মোহাম্মদ সিকদার বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের দীর্ঘসুত্রতার কারণে শরণার্থী ক্যাম্পে সংঘাত বাড়ছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা অত্যান্ত দুঃখ জনক। তিনি বলেন, ক্যাম্পে এখন যা ঘটছে তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা এ ধরণের কর্মকান্ড কোনোভাবেই সমর্থন করি না। আমরা এলাকার শান্তিপ্রিয় লোকজন হানাহানি মামলা হামলা মেনে নিতে পারি না। রোহিঙ্গাদের কারণে জনপ্রতিনিধিরা যেখানে নিরাপদ নয় সেখানে আমরা সবাই শঙ্খিত এবং আতঙ্কিত। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা মানবতার উজ্জল দৃষ্টান্ত রোহিঙ্গাদের মানবিক দিক বিবেচনা করা আমাদের সবারই দায়িত্ব। স্থানীয় এবং রোহিঙ্গাদের মাঝে বিচ্ছিন্ন করার যে ষড়যন্ত্র চলছে তা বন্ধ হওয়া দরকার।
মানবাধিকার কর্মী এডভোকেট সরওয়ার আলম বলেন, এক সময় রোহিঙ্গারা রাস্তায় নেমে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক অবরোধ করে রেখেছিল। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তারা বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে। লাখ লাখ রোহিঙ্গা এক সাথে রাস্তায় নামলে সামাল দেয়া মুশকিল হয়ে উঠবে। পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাওয়ার আগেই আমাদের সবদিক বিবেচনায় রাখতে হবে। এটা আমাদের কারো জন্য মঙ্গলজনক কিছুই নয়।
পালংখালী ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান মোজাফ্ফর আহমদ বলেন,জনপ্রতিনিধি হয়ে বর্তমানে কঠিন সময় পার করছি। গফুর চেয়ারম্যান বিহীন আমাদের অবস্থা এখন অত্যান্ত শোচনীয়। আমরা আমাদের অবস্থান সম্পর্কে যদি বুঝেও না বুঝার ভান করি, তাহলে পৃথিবীর কোন শক্তিই আমাদের বুঝাতে পারবে না। আজ এক জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে মামলা আগামীকাল অন্য আরেকটি ঘটনা ঘটবে না তার কী নিশ্চয়তা আছে। গফুর চেয়ারম্যান মাদক ও সশস্ত্র সন্ত্রাসী রোহিঙ্গা গ্রুপের বিরুদ্ধে এবং এনজিওদের অনিয়মের বিষয়ে কথা বলায় আজ তাকে মামলার শিকার হতে হয়েছে। আমরা পালংখালীর জনগণ শরণার্থী ক্যাম্পে অবৈধ অস্ত্রধারী রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার এবং ইয়াবাও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবি জানিয়ে আসছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!