ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | মশলার বাজার ঊর্ধ্বমুখী

মশলার বাজার ঊর্ধ্বমুখী

rupcare_masala-2

নিউজ ডেক্স : কোরবানির ঈদের সময় ঘনিয়ে আসছে। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে ঊর্ধ্বমুখী মশলার বাজার। গতকাল মঙ্গলবার চাক্তাই–খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে এলাচ, জিরা, দারুচিনি, লবঙ্গ ও গোল মরিচের দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় সব মশলার দাম কেজিতে ২০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আড়তদারদের দাবি, বাজারে মশলার সরবরাহে সংকট রয়েছে। যা মজুদ ছিল তা ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। অন্যদিকে আমদানিকারকরা বলছেন, বন্দরে কন্টেনার জটের কারণে পণ্য খালাস প্রক্রিয়ায় ধীরগতির ফলে সরবরাহে সংকট হয়েছে। চাক্তাই–খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত এক মাসের ব্যবধানে এলাচের দাম কেজিতে ১৬০ টাকা বেড়ে মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২৫০ থেকে ১ হাজার ৩৮০ টাকায়। এছাড়া দারুচিনি ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে কেজি ২১০ টাকায়। চিকন জিরা ৩৫০ থেকে ৩৬৫ টাকা ও মিষ্টি জিরা বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৭ টাকায়। অন্যদিকে গোল মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৪২৫ থেকে ৫৩০ টাকার মধ্যে। এছাড়া লবঙ্গ মানভেদে বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৮৫০ থেকে ৯২৫ টাকায়।

খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এলাচ কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪২৫ টাকা থেকে ১ হাজার ৫৩০ টাকায়। এছাড়া দারচিনি কেজিপ্রতি ২৮০ টাকা, জিরা ৪৫০ টাকা, গোল মরিচ ৬২০ টাকা ও লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০ টাকায়। কয়েকজন খুচরা বিক্রেতা বলেন, পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন বাজেটে বাড়তি সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়েছে। এ কারণে মসলার দাম বাড়ছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চাক্তাই–খাতুনগঞ্জ সাধারণ আড়তদার কল্যাণ সমিতির সভাপতি সোলায়মান বাদশা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারদরের অনুপাতে মশলার বাজার বাড়েনি। তাছাড়া মশলার আমদানি খরচ আমাদের প্রতিবেশী যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি। তার মধ্যে বন্দরের সাম্প্রতিক সময়ের সমস্যার কারণে আমদানিকারকদের জরিমানা দিতে হচ্ছে। জরিমানার অংকটাও পণ্যের আমদানি খরচের সাথে যুক্ত হচ্ছে।

গুলিস্তান ফিডের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ ফারুক বলেন, মশলা জাতীয় পণ্যের বাজার কখনো স্থিতিশীল থাকে না। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে বুকিংয়ের শেষ মওসুম, তাই দামও একটু বাড়তি। আগামী মাসে নতুন পণ্য বাজারে আসবে। তখন হয়ত বাজারদর একটু কমবে। এছাড়া মশলার মধ্যে এলাচ আসে লাতিন আমেরিকার গুয়েতেমালা থেকে। আগে এক সময় ওই দেশ থেকে পণ্য আসতে সময় লাগত ৩৫–৪০ দিন। অথচ এখন ক্ষেত্র বিশেষে ৯০ দিন পর্যন্ত লেগে যাচ্ছে। অনেক সময় নির্ধারিত সময়ে এলেও জাহাজ বহির্নোঙরে পড়ে থাকে। এসব কারণে জরিমানা গুনতে হয়।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, গত ৪০ বছরে বন্দরে জেটির সংখ্যা বেড়েছে মাত্র সাতটি। বর্তমানে জেটি হওয়ার দরকার ৬০টি। কিন্তু আছে মাত্র ২০টি। ফলে জাহাজ যথাসময়ে বার্থিং করতে পারছে না। দিনের পর দিন বহির্নোঙরে পড়ে থাকতে হচ্ছে। অন্যদিকে বন্দরে আমদানি–রপ্তানির গতি বাড়াতে দ্রুত বে–টার্মিনাল নির্মাণ প্রয়োজন। পাশাপাশি অফডকও বাড়াতে হবে। নাহলে ব্যবসায়ীদের কষ্ট লাঘব হবে না।

এদিকে চকবাজারের খুচরা ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন বলেন, প্রতি বছর ঈদের অতিরিক্ত চাহিদার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পাইকাররা দাম বাড়াচ্ছেন। গত কয়েক দিন ধরে বেশ কিছু মশলার দাম বেড়েছে। ঈদের আগে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় পাইকাররা নানা সংকটের কথা বলে ইচ্ছে করেই দাম বাড়াচ্ছেন বলে মনে করেন তিনি।

অনূকূল ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী সজীব কুমার সিংহ বলেন, বাজারে এখনো মশলার সংকট রয়েছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমে গেছে। বন্দরে কন্টেনার জটের কারণে প্রায় সময় ব্যবসায়ীকে অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হচ্ছে। এছাড়া পরিবহন খরচও বেড়েছে।

সংকটের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বাংলাদেশ গরম মশলা ব্যবসায়ী সমিতির সহ–সভাপতি অমর কান্তি দাশ বলেন, এখন অনেকেই মশলা আমদানি করছেন। তাই কৃত্রিম সংকট তৈরি করার কোনো সুযোগ নেই। বাজারে পর্যাপ্ত মশলা আছে বলেও দাবি করেন তিনি।

কয়েকজন আমদানিকারক বলেন, বর্তমানে মশলা আমদানিতে আমদানি শুল্ক দিতে হয় প্রায় ৬১ শতাংশ। অথচ প্রতিবেশী দেশ ভারত, মিয়ানমার ও পাকিস্তানে এটি ২০ শতাংশের বেশি নয়। ফলে ভারতের আমদানিকৃত মশলা চোরাই পথে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এতে সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে খাতুন ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক জামাল হোসেন বলেন, অতিরিক্ত আমদানি শুল্ক হওয়ার কারণে প্রায় চোরাই পথে মশলা আসে। ভারতের সীমান্ত দিয়ে জিরা আসে বেশি। ফলে মশলার বাজার কখনো স্থিতিশীল থাকে না। মশলার বাজারের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় চোরাকারবারিদের হাতে। বিভিন্ন উপলক্ষ এলে তারা দাম বাড়ায়।

-আজাদী প্রতিবেদন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!