ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | ভারতে লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলছে

ভারতে লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলছে

Election-BG-20190411031115

আন্তর্জাতিক ডেক্স : ভারতের লোকসভায় সাতদফার দীর্ঘ নির্বাচনে প্রথম দিনে ২০টির বেশি অঙ্গরাজ্যের মানুষ ভোট দিচ্ছেন। আগামী পাঁচ বছরের জন্য ১৩০ কোটি মানুষের ভাগ্য নির্ধারিত হবে এবারের নির্বাচনে।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে শুরু হয় ভোটগ্রহণ। দেশটির পার্লামেন্ট ‘ভারতীয় সংসদের’ নিম্নকক্ষ লোকসভার এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ভারতীয়রা বেছে নেবে আগামী পাঁচ বছর কারা ভারত শাসন করবে।

লোকসভার ৫৪৩টি আসনের মধ্যে আজ ভোট হবে ২০টি রাজ্যের ৯১টি আসনে। নির্বাচন সামনে রেখে গতকাল বুধবার থেকে দেশজুড়ে উচ্চ সতর্কতা (হাই অ্যালার্ট) জারি করেছে প্রশাসন। নির্বাচনের দুই দিন আগে পৃথক হামলায় ছত্তিশগড়ে পাঁচজন ও কাশ্মীরে একজন নিহত হওয়ায় এ সতর্কতা জারি করা হলো।

নির্বাচনে বিজেপি ও কংগ্রেসের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চাচ্ছেন গতবারের ভূমিধস বিজয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসতে। তবে বিভিন্ন জরিপ বলছে, এবারের নির্বাচনের ফলাফলের ব্যবধান হবে খুব সামান্য। অধিকাংশ জরিপ বলছে, এবার সামান্য ব্যবধানে বিজেপি জিতবে। তবে একা সরকার গঠন করতে পারবে না।

একনজরে নির্বাচন : লোকসভার ৫৪৩টি আসনে ভোট হচ্ছে। সাত দফায় ভোট শেষ হবে আগামী ১৯ মে। ফল ঘোষণা করা হবে ২৩ মে। আজ ভোট হবে ২০টি রাজ্যের ৯১টি আসনে। সরকার গঠন করতে লাগবে ২৭২টি আসন। এবারের নির্বাচনে মোট ভোটারের সংখ্যা ৯০ কোটি। নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রধান দলগুলো হচ্ছে নরেন্দ্র মোদির বিজেপি, রাহুল গান্ধীর কংগ্রেস, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস, প্রয়াত জয়ললিতার দল এডিএমকে, অখিলেশ যাদবের এসপি ও মায়াবতীর বিএসপি। আজকের ভোটে বিভিন্ন দলের মোট প্রার্থীর সংখ্যা এক হাজার ২৭৯।

গতবারের নির্বাচনে বিজেপি ২৮২টি আসনে বিজয়ী হয়েছিল। এনডিএ ও অন্যান দল পেয়েছিল ৫৪ আসন। কংগ্রেস পেয়েছিল ৪৪ আসন। ইউপিএ ও অন্যরা পেয়েছিল ১৬ আসন। তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছিল ৩৪ আসন। এ ছাড়া বিজেডি ২০, বাম ১২, টিআরএস ১১ ও অন্য দলগুলো পেয়েছিল ৩৩টি আসন।

নতুন ভোটার : এবার মোট ভোটারের মধ্যে নতুন ভোটারের সংখ্যা প্রায় ১৩ কোটি। এবার ভোটারের সংখ্যা বেড়েছে ৯ শতাংশ। গত নির্বাচনের চেয়ে এবার নতুন ভোটারের সংখ্যা অনেক কম। গতবার নতুন ভোটার ছিল ২৭ কোটি। এবারের নতুন ভোটারদের মধ্যে প্রায় দেড় কোটি ভোটারের বয়স ১৮ ও ১৯ বছরের মধ্যে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এবারও নতুন ভোটই দিল্লির মসনদ নির্ধারণ করবে।

রেড অ্যালার্ট জারি : নির্বাচন সামনে রেখে গতকাল ভারতজুড়ে ‘হাই অ্যালার্ট’ জারি করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার ছত্তিশগড়ে মাওবাদী হামলায় বিজেপির এক বিধায়কসহ পাঁচজন এবং কাশ্মীরে একজন নিহত হওয়ার পর নির্বাচনে রক্তপাতের আশঙ্কায় এই সতর্কতা জারি করা হয়। নিরাপত্তার অংশ হিসেবে আজকের নির্বাচন সামনে রেখে শুধু ছত্তিশগড়েই ৮০ হাজার নিরাপত্তা সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

প্রচারযুদ্ধ : এবারের নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপি হিন্দু জাতীয়তাবাদকে প্রধান হাতিয়ার করে মাঠে নেমেছে। বিশেষ করে গত ফেব্রুয়ারিতে কাশ্মীরের পুলওয়ামায় ৪০ জন ভারতীয় সেনা হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে ভারতীয় বাহিনীর পাল্টা আক্রমণকে নির্বাচনী প্রচারে কাজে লাগাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলটি। বিশ্লেষকরা বলছেন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে ব্যর্থ ও কৃষকদের ঋণ ইস্যুতে জর্জরিত মোদির সরকার পুলওয়ামার হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধের প্রচারের মধ্য দিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদি এরই মধ্যে জাতীয়তাবাদ উসকে দিতে পাকিস্তানের তীব্র সমালোচনার পাশাপাশি কংগ্রেসকেও পাকিস্তান সৃষ্টির জন্য দায়ী করে বক্তব্য দিচ্ছেন। সর্বশেষে গত মঙ্গলবার তিনি নতুন ভোটারদের উদ্দেশ করে বলেছেন, তাদের প্রথম ভোটটা যেন কাশ্মীরে গত ফেব্রুয়ারিতে নিহত সেনাদের উৎসর্গ করা হয়। তিনি মূলত তরুণ ভোটারদের হিন্দু জাতীয়তাবাদ দ্বারা আকৃষ্ট করতে চাইছেন।

নির্বাচনে বিজেপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেসের সভাপতি রাহুল গান্ধী এবারের নির্বাচনী প্রচারের মূল হাতিয়ার করেছেন বেকারত্ব, যার প্রধান লক্ষ্য তরুণদের ভোট টানা। পুলওয়ামার ঘটনা নিয়ে মোদির বাড়াবাড়ি প্রচারের প্রেক্ষাপটে এরই মধ্যে কংগ্রেসের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ভারতীয় শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন সেনাবাহিনীকে জড়িয়ে প্রচার চালাতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

মোদির প্রচারে প্রচারে ধাক্কা : দিল্লি থেকে কালের কণ্ঠ’র বিশেষ প্রতিনিধি জয়ন্ত ঘোষাল জানিয়েছেন, গত ১০ দিনে মোদি ৩৩টি জনসভায় ভাষণ দিয়েছেন। আর রাহুল ১৯ দিনে ৩৮টি জনসভায় ভাষণ দিয়েছেন। আজকের নির্বাচনে কেন্দ্রীয় সরকারের ছয়জন মন্ত্রীর অগ্নিপরীক্ষা হচ্ছে। তাঁদের মধ্যে নীতীন গড়করি ও ভি কে সিংহ রয়েছেন।

অন্যদিকে প্রথম দফা নির্বাচনের এক দিন আগে মোদি সরকার দুটি বিষয়ে ধাক্কা খেল। প্রথমত, আজ নির্বাচন কমিশন জানিয়ে দিয়েছে, মোদির ওপর তোলা ফিচার ছবি সেন্সর বোর্ড অনুমোদন দিলেও এটি এখন প্রদর্শন করা যাবে না। কারণ এটি ভোটের সময় আচরণবিধি ভঙ্গ করবে।

দ্বিতীয় ধাক্কা হলো, সুপ্রিম কোর্টে রাফাল কেলেঙ্কারি নিয়ে শুনানি গতকাল এক নয়া মোড় নিয়েছে। রাফাল নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট সরকারকে নোটিশ দিয়েছেন। এর আগে সরকার আদালতকে জানিয়েছিল, রাফালবিষয়ক কিছু ফাইল চুরি হয়ে যায় কিন্তু আদালত আজ এই যুক্তি মেনে নিতে রাজি হননি। উল্টো ব্যাখ্যা চেয়েছেন।

মায়াবতী বলেছেন, আদালতের এই রায়ের পর প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ইস্তফা দেওয়া উচিত। প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামান পরে সাংবাদিক বৈঠক করে বোঝানোর চেষ্টা করেন, আদালতের নির্দেশ সরকারের বিরুদ্ধে নয়। রাহুল ও অন্য সব বিরোধী নেতা গতকাল রাফাল বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের শুনানি নিয়ে তীব্র সমালোচনায় মেতে ওঠেন।

এদিকে রাহুল গান্ধী গতকাল আমেথি যান। সেখানে তিনি তাঁর মনোনয়নপত্র দাখিল এবং রোড শোও করেন। অন্যদিকে মোদি গতকাল গুজরাটে গিয়ে জনসভা করে আক্রমণ করলেন রাহুল গান্ধীকে। দুর্নীতির অভিযোগ তুললেন রহুলের বিরুদ্ধে।

বেশির ভাগ নির্বাচনী সমীক্ষা বলছে, মোদি আবার প্রধানমন্ত্রী হবেন, কিন্তু বিজেপি একা সরকার গড়তে পারবে না। সরকার হবে বিজেপির শরিকদের সমর্থন নিয়ে।

চার রাজ্যের বিধানসভার ভোটও আজ : লোকসভা নির্বাচন শুরুর দিনে চারটি রাজ্যের বিধানসভার নির্বাচনও শুরু হচ্ছে। রাজ্যগুলো হচ্ছে অন্ধ্র প্রদেশ, ওড়িশা, সিকিম ও অরুণাচল। এর মধ্যে আজ এক দফায় অন্ধ্র প্রদেশ, সিকিম ও অরুণাচলে ভোট হবে। ওড়িশায় চার দফায় ভোট হবে, যার প্রথম দফা আজ। সূত্র : এএফপি, সিএনএন, এনডিটিভি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!