ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | ভর্তি হলো কন্যাশিশু দিল শিশুপুত্রের লাশ

ভর্তি হলো কন্যাশিশু দিল শিশুপুত্রের লাশ

sharif-14-800x516

নিউজ ডেক্স : চরম দায়িত্ব অবহেলার পরিচয় দিয়েছেন নগরীর চাইল্ড কেয়ার হাসপাতালের দায়িত্বশীল চিকিৎসক। নিউমোনিয়া আক্রান্ত নবজাতক কন্যাশিশু নিয়ে চাইল্ড কেয়ারে ভর্তি হয়েছিলেন নোয়াখালীর রোকসানা। দুইদিন পর বলা হয় শিশুটি মারা গেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শিশুর লাশ মোড়ানো প্যাকেট গছিয়ে দেয় মা রোকসানাকে। ঘরে নিয়ে জানাজার আগে প্যাকেট খুলে দেখেন ভেতরে লাশটি একটি ছেলেশিশুর। রাতেই নোয়াখালী থেকে এম্বুলেন্স নিয়ে পাঁচলাইশ থানায় এসে বিষয়টি খুলে বলেন রোকসানা। অভিযোগ শুনে উল্টো হাসপাতালের পরিচালক ডা. ফাহিম রেজা রোকসানাকে শাসিয়ে বলেন– আপনি ‘ছেলেশিশুই জন্ম দিয়েছেন। রেজিস্টার ও ডেথ সার্টিফিকেটে ছেলেই লেখা আছে। আমাদের ভুল হওয়ার প্রশ্নই আসে না’।

ডা. ফাহিম রাতে এসব কথা বললেও ভোরে চাইল্ড কেয়ার হাসপাতালের এনআইসিইউ’র বেড থেকে রোকসানার নবজাতক কন্যাশিশু উদ্ধার করে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ। গত মঙ্গলবার রাতে নগরীর টিট্রমেন্ট সেন্টারের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত চাইল্ড কেয়ার হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটেছে। রোকসানার দাবি, সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক তার কন্যাশিশুটিকে বিক্রি বা পাচারের উদ্দেশ্যে একটি মৃত শশুর সাথে বদল করেছিলেন।

জানা যায়, নোয়াখালীর গ্রামের বাড়িতে একটি কন্যাশিশুর জন্ম দেন গৃহবধূ রোকসানা। জন্মের ছয়ঘন্টা পর শিশুটিকে মাইজদী হাউজিং সেন্ট্রাল রোডের মা ও শিশু হাসপাতালের তিন নম্বর কেবিনে ভর্তি করানো হয়। নিউমোনিয়া আক্রান্ত নবজাতক কন্যাশিশুর উন্নত চিকিৎসার্থে ১৪ এপ্রিল রাত দেড়টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলে আসেন তিনি। ঐদিন (১৪ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় শিশুটিকে চাইল্ডকেয়ার হাসাপতালের এনআইসিইউ’তে (নিউনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট) ভর্তি করেন রোকসানা। তিনদিনের মাথায় ১৭ এপ্রিল বেলা দশটায় বলা হয় রোকসানার শিশুটি মারা গেছে। যথারীতি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্যাকেট মুড়িয়ে লাশটি রোকসানার হাতে গছিয়ে দেয়। ঘরে ফিরে জানাজার আগে গোসল করাতে প্যাকেট খুলে দেখা যায় ভেতরে একটি ছেলেশিশুর লাশ। রাতেই (১৭ এপ্রিল) রোকসানা একটি এম্বুলেন্স ভাড়া করে শিশুর লাশ নিয়ে হাজির হন পাঁচলাইশ থানায়। পাঁচলাইশ থানা বিষয়টি সাধারণ ডায়েরি হিসাবে নথিভুক্ত করেন।

গৃহবধূ রোকসানা বলেন, ওই শিশুর মরদেহ নিয়ে আমরা সারারাত এম্বুলেন্সে বসেছিলাম থানার সামনে। ভোররাতে আমাকে জানানো হয়, আমার মেয়ে পাওয়া গেছে। আইসিইউতে পাশের সিটের শিশুর সঙ্গে বদল হয়েছে। সকালে একটি এম্বুলেন্স এসে ছেলেটির মরদেহ নিয়ে যায়, পরে আমার মেয়েকে চাইল্ড কেয়ার থেকে ফেরত দেয়া হয়। বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি। বর্তমানে শিশুটিকে রয়েল হাসপাতালের আইসিইউতে রাখা হয়েছে।

রোকসানা বলেন, চাইল্ড কেয়ার আমার কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়েছে। আমার সঙ্গে যা হয়েছে তা যেন আর কোনো মায়ের সঙ্গে না হয়। ওদের এনআইসিইউতে কোনো সিসি ক্যামেরা নেই। আমার ধারনা, তারা আমার সন্তানকে অন্য কোথাও বিক্রি বা পাচারের উদ্দেশ্যে রেখে দিয়েছিলো। যদি আমাকে অন্য কোনো কন্যার মরদেহ দেওয়া হতো আমি বুঝতেই পারতাম না। যেসব চিকিৎসক এ কাজে জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। তিনি বলেন, চাইল্ড কেয়ারে ভর্তি করানোর পর শেভরন ও ট্রিটমেন্টে পরীক্ষা করানো হয়। সেখানেও উল্লেখ আছে মেয়ে। হাসপাতালের রেজিস্টারে লেখা আছে মেয়ে। কিন্তু ডেথ সার্টিফিকেটে শুধু ছেলে লেখা ছিল। যখন বাবুর মরদেহ প্যাকেট করে দেওয়া হয় তখন তারা বলেছিল, ‘মা যেন বাবুর চেহারা না দেখে। বাবুর মুখে রক্ত লেগে আছে। তা দেখলে হার্ট এটাক করতে পারে।’

রয়েল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. বিধান রায় চৌধুরী জানান, শিশুটি বেশ অসুস্থ। জন্মের পর ব্রেনে অক্সিজেন পৌঁছেনি। খিঁচুনি ও ইনফেকশন আছে। আমরা মেডিকেল বোর্ড গঠন করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।

গতকাল বুধবার সকালে রোকসানার কাছে নবজাতক কন্যাশিশু ফেরত দিয়েছে চাইলন্ড কেয়ার কর্তৃপক্ষ অথচ মঙ্গলবার রাতে চাইল্ড কেয়ার হাসপাতালের পরিচালক ডা. ফাহিম হাসান রেজা বলেছিলেন, ‘ওই মা ছেলে সন্তানই জন্ম দিয়েছিলেন। রেজিস্টার ও ডেথ সার্টিফিকেটে ছেলে লেখা আছে। প্রতিটি শিশুর শরীরে ট্যাগ লাগানো থাকে। আমাদের ভুল হওয়ার কোন সুযোগ নেই।’

পাঁচলাইশ থানার পরিদর্শক (ওসি) মহিউদ্দিন মাহমুদ বলেন, প্রাথমিকভাবে সাধারণ ডায়েরি নিয়ে বিষয়টি তদন্ত শুরু করেছিলাম আমরা। আদালতের অনুমতি নিয়ে আমরা শিশুটির ডিএনএ টেস্ট করে মামলা নেওয়ার সিদ্ধান্তের কথাও ওই মাকে জানিয়েছিলাম। রাতেই চাইল্ড কেয়ার হাসপাতালে গিয়ে তদন্ত করে দেখা যায় একই দিনে দশ মিনিটের ব্যবধানে সমবয়সী একটি ছেলে ও একটি কন্যাশিশু ভর্তি করানো হয়েছে। চিকিৎসকদের ভুলের কারণে শিশুদের সিট বদল হয়ে গেছে। এতেই মারাত্মক এ ঘটনা ঘটেছে। ওসি মহিউদ্দিন বলেন, বিষয়টি অবহেলাজনিত কারণে হয়েছে না এর পেছনে অন্য কোনো কারণ রয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সূত্র : দৈনিক পূর্বকোণ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!