ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | ফ্রি-স্টাইল ফুটবলে গিনেস বুকে চট্টগ্রামের মুসতাকিম

ফ্রি-স্টাইল ফুটবলে গিনেস বুকে চট্টগ্রামের মুসতাকিম

নিউজ ডেক্স : একটা সময় যখন ফুটবল বেশ রমরমা অবস্থায় ছিল তখন দেখা যেত গ্যালারী ভর্তি দর্শকের সামনে খেলা শুরুর আগে কয়েকজন বালক বল নিয়ে নানা কসরত করত। যা ছিল দর্শকদের জন্য খেলার আগে বাড়তি আনন্দ। এই বল নিয়ে কসরত করতে করতে চট্টগ্রামের এক তরুণ পৌঁছে গেল গিনেস বুকে। সেই যুবকের নাম মুসতাকিম উল ইসলাম।

তিনি চট্টগ্রামের কলেজিয়েট স্কুল থেকে এবারের এসএসসি পাস করে এখন কলেজে ভর্তির অপেক্ষায়। গত দুই বছর ধরে করোনার সাথে যুদ্ধ করছে বিশ্ব। এই করোনাই মুসতাকিমকে নিয়ে গেল গিনেস বুকে। ফুটবলের প্রতি দারুণ আকর্ষণ মুসতাকিমের। বন্ধুদের সাথে মনের আনন্দে খেলত ফুটবল। কিন্তু করোনা আর লকডাউনে যখন সবকিছু বন্ধ তখন তার মাথায় এলো ভিন্ন এক চিন্তা। তা হচ্ছে ফুটবল নিয়ে ফ্রি স্টাইলে কসরত করা। কখনো পায়ে, কখনো মাথায় আবার কখনো হাতে বল ঘুরাতো মুসতাকিম। কোনো ধরনের হাতের স্পর্শ ছাড়ায় মাথার চারপাশে ফুটবল ঘুরিয়ে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। ৩০ সেকেন্ডে ২৭ বার বল ঘুরিয়ে রেকর্ড করেছেন এ যুবক। এর আগে রেকর্ডটি ছিল ২৫ বার।

মা শাহীনুর আকতার স্বর্না জানান, মুসতাকিমকে কখনো পড়ার জন্য বলতে হয়নি। সে সব সময় মেধাবী এবং অধ্যবসায়ী। পড়া শেষ করে যখনই সময় পেয়েছে ফুটবল নিয়ে অনুশীলন করেছে। যেহেতু ছেলে পড়ালেখায় কোনো ধরনের ফাঁকি দিচ্ছে না তাই বাবা-মাও ছেলেকে এই কাজে বাধা দেয়নি। নগরীর হালিশহরে বাস করে মুসতাকিমের পরিবার। বাবা শরিফুল ইসলাম মার্কেন্টাইল ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখায় কর্মরত। মা শাহীনুর আকতার স্বর্না শিক্ষকতা করেছেন দশ বছর। বুটিক ব্যবসাও ছিল তাঁর। মুসতাকিম পুরষ্কারও পেয়েছেন একাধিকবার। তাই হয়তো ছেলেকে উৎসাহিত করেছেন তার শখের কাজে। দুই ছেলেকে নিয়ে শরীফুল-স্বর্নার সব স্বপ্ন। যদিও ছেলের ইচ্ছে সে ইঞ্জিনিয়ার হবে। শুধু ইঞ্জিনিয়ার নয় শখের বসে শেখা ফুটবল নিয়ে এই কসরতের কাজটাকে আরো বহুদূর নিয়ে যেতে চায় মুসতাকিম। একাধিক রেকর্ড গড়ার স্বপ্ন তাঁর মধ্যে।

করোনাকালে ঘর থেকে যখন বের হওয়া যেত না তখন মুসতাকিম কখনো ছাদে, কখনো ড্রইং রুমে আবার কখনো নিজের ঘরে অনুশীলন চালিয়ে গেছেন। যখন লকডাউন কিছুটা শিথিল হয় তখন যেখানে সুযোগ পেয়েছে সেখানে গিয়ে নিজের অনুশীলন চালিয়ে গেছেন। নগরীর সিআরবিতেও অনুশীলন এবং প্রদর্শনী করেছে মুসতাকিম। যার ফল পেলেন এই তরুণ গিনেস বুকে জায়গা করে নিয়ে।

বাংলাদেশে যারা ফুটবল নিয়ে ফ্রি স্টাইল করে তাদের পরামর্শ ও অনলাইন টিউটোরিয়ালের সহায়তায় আস্তে আস্তে ফ্রি স্টাইল রপ্ত করে মুসতাকিম। ২০২১ সালের ১৯ মে গিনেস কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন তিনি। তারা মানদণ্ড বেঁধে দেন। সেই মানদণ্ড অনুযায়ী ফ্রি স্টাইলের ভিডিও করে ২১ জুন গিনেস কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠায় মুসতাকিম। গত বছরের ৩০ নভেম্বর বিশ্ব রেকর্ড হওয়ার সংবাদ আসে তাঁর কাছে। গত ২৯ ডিসেম্বর গিনেস বুক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সে বিশ্ব রেকর্ডের সনদ পায়।

উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তির জন্য এরই মধ্যে ঢাকা নটরডেম কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে এসেছে মুসতাকিম। চট্টগ্রাম কলেজেও ভর্তির সুযোগ পাবে তেমনটি আশা তাঁর মায়ের। তবে পড়ালেখা ঠিক রেখে যেকোনো বাড়তি কাজ যা তার জন্য সাফল্য বয়ে আনবে তেমন কিছু করতে আপত্তি নেই মুসতাকিমের মায়ের। ছেলেকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন পরিবারের। তাই ছেলেকে সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন তারা। লক্ষ্য ছেলে একজন ভাল মানুষ হবে, সৎ মানুষ হবে। আরো অনেক রেকর্ড গড়বে। -আজাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!