Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | পাহাড়ে আধিপত্য : ২০ বছরে ৭৩১ খুন

পাহাড়ে আধিপত্য : ২০ বছরে ৭৩১ খুন

image-83011

নিউজ ডেক্স : আধিপত্য দখলে পাহাড়ি সংগঠনগুলোর মধ্যকার দ্বন্দ্ব-সংঘাতে সেখানে রক্ত ঝরছেই। সর্বশেষ গত সোমবার রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের বাঘাইহাটের গঙ্গারাম মুখ এলাকার দক্ষিণ করল্যাছড়ি গ্রামে প্রতিপক্ষের গুলিতে মারা যায় ইউপিডিএফের (ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট) তিনজন নেতাকর্মী। এ নিয়ে গত ২০ বছরে প্রাণ হারাল ৭৩১ জন।

সোমবারের ঘটনায় নিহতরা হলেন ইউপিডিএফের সদস্য স্মৃতি চাকমা (৫০), অতল চাকমা (৩০) এবং ইউপিডিএফ সহযোগী সংগঠন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের বাঘাইছড়ি উপজেলা শাখার সদস্য সঞ্জীব চাকমা (৩০)। এ ছাড়া আহত  হয় ইউপিডিএফ সদস্য কানন চাকমা (৩০)।

এ ঘটনার জন্য জেএসএস সংস্কার দলকে দায়ী করেছে ইউপিডিএফ। আর অভিযোগ অস্বীকার করে জেএসএস এমএন লারমা দলের সহ-তথ্য প্রচার সম্পাদক প্রশান্ত চাকমা দাবি করেন, এ ঘটনায় ইউপিডিএফের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে হয়েছে।

পাহাড়ি সংগঠনগুলোর দ্বন্দ্ব-সংঘাত চলে আসছে বহুদিন আগে থেকে। ১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বিরোধিতা করে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে পরের বছর ২৬ ডিসেম্বর তৎকালীন জেএসএসের (জনসংহতি সমিতি) সহযোগী সংগঠন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি প্রসীত খীসার নেতৃত্বে ইউপিডিএফ নামে নতুন সংগঠন গঠন হয়। প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে সংগঠনটি সরকারের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনকারী দল সন্তু লারমার নেতৃত্বে থাকা জেএসএসের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়ে। এলাকার আধিপত্য নিতে গিয়ে লিপ্ত হয় সংঘর্ষে। এতে উভয়পক্ষের সাড়ে ছয় শর বেশি নেতাকর্মী মারা যান।

এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জরুরি অবস্থার সময় ২০১০ সালে মূল জেএসএস থেকে সরে গিয়ে সুধাসিন্ধু খীসা, তাতিন্দ্রলাল তালুকদার পেলে, শক্তিমান, অংশুমান চাকমাদের নেতৃত্বে গঠন হয় জেএসএস এমএন লারমা নামে নতুন দল।

এ দলটি প্রসীতের ইউপিডিএফের সঙ্গে সখ্য গড়ে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে এবং সন্তু লারমা জেএসএসের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। আধিপত্য দখল নিয়ে সংঘটিত হয় একাধিক হত্যাকাণ্ড। মারা যায় উভয়পক্ষের নেতাকর্মী।

এক পর্যায়ে ২০১৫ সালের শেষের দিকে তিনটি দলের মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে দলীয় কার্যক্রম চলে। বন্ধ হয় সংঘাত।

এর মধ্যে ইউপিডিএফে নেতৃত্বের পরিবর্তন এলে পছন্দমতো পদ না পেয়ে বিদ্রোহ করে কিছু নেতাকর্মী ইউপিডিএফ থেকে সরে যায়। তারা প্রথমে জেএসএস এমএন লারমা দলের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থাকলেও এমএন লারমা তাদের দলে অন্তর্ভুক্ত করেননি। একপর্যায়ে ২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর খাগড়াছড়িতে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তপন জ্যোতি চাকমা বর্মা গঠন করে ‘ইউপিডিএফ গণতন্ত্র’ নামে নতুন দল। দলটি জেএসএস এমএন লারমা দলের সঙ্গে সখ্য গড়ে মূল ইউপিডিএফের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে নতুন করে সংঘাত শুরু হয়।

২০১৭ সালে ৫ ডিসেম্বর রাঙামাটির নানিয়াচর উপজেলার ১৮ মাইল এলাকায় ইউপিডিএফ সমর্থক অনাদী রঞ্জন চাকমাকে হত্যার মধ্যে দিয়ে শুরু হয় নতুন করে সংঘাত। পরে খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফ নেতা মিঠুন চাকমা, রাঙামাটির অনল বিকাশ চাকমাকে হত্যা করা হয়। অপহরণ করা হয় ইউপিডিএফ সহযোগী সংগঠন হিল উইমেনস ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মন্টি চাকমা ও রাঙামাটি সাধারণ সম্পাদক দয়াসোনা চাকমাকে। এ অপহৃতদের গত ২০ এপ্রিল মুক্তি দেওয়া হয়।

৩ মে নানিয়াচর উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেএসএস এমএন লারমা দলের সহ-সভাপতি শক্তিমান চাকমাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

পরদিন শক্তিমানের শেষকৃত্যে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়ার পথে রাঙামাটির বেতছড়ি এলাকায় সন্ত্রাসীরা গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি করলে গণতান্ত্রিক ইউপিডিএফের সভাপতি তপনজ্যোতি চাকমাসহ মারা যায় পাঁচজন। এ হত্যাকাণ্ডের জন্য ইউপিডিএফকে দায়ী করা হয়। সর্বশেষ গত সোমবার মারা গেল ইউপিডিএফের তিনজন। এ নিয়ে গত ছয় মাসে মারা গেল ২১ জন।

পাহাড়ে আঞ্চলিক সংগঠনগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তি সম্পাদনের পর থেকে এখন পর্যন্ত চারটি আঞ্চলিক দলের মধ্যে থেকে মারা গেছে ৭৩১ জন। এর মধ্যে মূল জেএসএসের ৩৯৪ জন। ইউপিডিএফের ২৮৯ জন। জেএসএস এমএন লারমা দলের কর্মী-সমর্থক ৪৭ জন। সদ্য গঠন হওয়া গণতান্ত্রিক ইউপিডিএফের প্রাধান তপনজ্যোতি চাকমা।

যৌথ বাহিনীর অভিযান চলছে

গত ৩ মে শক্তিমান হত্যার পরদিন তপনজ্যোতি চাকমাসহ পাঁচজনের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। শুরু হয় যৌথ বাহিনীর অভিযান, যা এখনো অব্যাহত আছে।

খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার আলী আহমদ খান বলেন, পাহাড়ে যৌথ বাহিনীর অভিযান চলছেই।

হত্যা মামলাগুলো আলোর মুখে দেখে না

পাহাড়ে হত্যাকাগুলোর তদন্ত আলোর মুখ দেখেনি। এ কারণে চুক্তি-পরবর্তী সাত শতাধিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনার একটিরও বিচার হয়নি। সর্বশেষ শক্তিমান ও তপনজ্যোতি চাকমাদের হত্যার ঘটনায় নানিয়াচর থানায় দুটি হত্যা মামলা হয়েছে। এ মামলা ইউপিডিএফের একাধিক নেতা ছাড়াও আসামি করা হয়েছে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলার একাধিক ইউপি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে।

সূত্র : ঢাকাটাইমস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!