ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | কারো প্রভাবে কাজ হবে না, টাকা দিন কথা বলুন : খেলাপিদের হাইকোর্ট

কারো প্রভাবে কাজ হবে না, টাকা দিন কথা বলুন : খেলাপিদের হাইকোর্ট

নিউজ ডেক্স : খেলাপি ঋণ না দিয়ে মন্ত্রী বা কারো প্রভাবে কোনো কাজ হবে না বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। পিপলস লিজিংয়ের খেলাপি ঋণ পরিশোধ করার বিষয়ে এক খেলাপি ও তার আইনজীবীকে উদ্দেশ করে বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক বেঞ্চ এ কথা বলেন।

আদালতে তলবে সশরীরে উপস্থিত হওয়ার নির্ধারিত দিনের দ্বিতীয় দফায় ১৩৭ জনের মধ্যে আজ ৪৫ ঋণগ্রহীতা হাইকোর্টে হাজির হন। তখন তাদের মধ্যে কেউ কেউ টাকা পরিশোধের সময় চান, আবার কেউ কেউ কিস্তি পরোশোধ করছেন বলেও আদালতকে জানান।

তেমনি এক বিশিষ্ট ব্যবসায়ীর পরিচয় জেনে আদালত তাকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনার ব্যবসা তো ভালোই। তো আপনার কত টাকা।’ জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাকে দেয়া নোটিশে লেখা আছে ৩৮৪ কোটি টাকা। আমি প্রতি মাসে ২০ লাখ টাকা করে কিস্তি পরিশোধ করছিলাম।’

তিনি জানান, আদালতের আদেশে অ্যাকাউন্ট অচল (ফ্রিজ) হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ করে আসছিলেন। কিন্তু অ্যাকাউন্ড ফ্রিজ হয়ে যাওয়ায় ২০১৯ সালের জানুয়ারির পর থেকে আর কোনো কিস্তি দেয়া হচ্ছে না। এ পর্যায়ে আদালত বলেন, ‘আগে ওইসব কিস্তির টাকা দিয়ে আসুন, এরপর এসে কথা বলবেন, আপনার কাছে কত পাওনা, আর কত দেবেন। বোর্ড বসবে অথবা প্রতিষ্ঠানের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেবেন।’

হাইকোর্ট বলেন, ‘অ্যাকাউন্ট থেকে পেমেন্ট দিতে তো বাধা নেই। আমি এখনই অর্ডার দিয়ে দিচ্ছি। আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে পেমেন্ট দিতে কোনো বাধা থাকবে না। কিন্তু ব্যক্তিগত খরচের জন্য টাকা তুলতে পারবেন না। বাংলাদেশ ব্যাংককেও এমন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যে, যারা টাকা পেমেন্ট করতে চান তাদের অ্যাকাউন্ট থেকে যাতে টাকা পেমেন্ট করা যায়।’

এরই একপর্যায়ে পিপলস লিজিংয়ের খেলাপিদের উদ্দেশ করে হাইকোর্ট বলেন, ‘আপনাদের অ্যাকাউন্ট থেকে শুধু টাকা যাবে, আসবে না।’ এ সময় শুনানিতে কোনো কোনো ঋণগ্রহীতা মারা গেছেন, এখন তার কী হবে-সেসব ব্যাখ্যাও চান আদালত। এ সময় আদালত বলেন, ‘আগে একটা কিস্তি পরিশোধ করুন, তারপর কথা বলুন।’

এ পর্যায়ে এক খেলাপির ১১৬ কোটি টাকা, অপর একজনের ২৬ কোটি থেকে সুদ হয়ে আরো বেশি টাকার অঙ্ক দাঁড়িয়েছে এবং এভাবে পর্যায়ক্রমে এক একজন খেলাপির কারো ৬২ কোটি, কারো ৭২ কোটি এবং দুই-আড়াই কোটি টাকার আলোচনা হয়। এদিন পর্যায়ক্রমে ৪৫ জনের স্বাক্ষর এবং কার কী পরিমাণ টাকা, কিস্তি দিচ্ছেন কিনা এসব জানেন আদালত।

এদিন আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড থেকে ঋণগ্রহীতাদের উদ্দেশ্য করে হাইকোর্ট বলেন, ‘আগে তো এক কিস্তি পরিশোধ করুন, তারপর কথা বলুন। প্রতিষ্ঠানটিকে বাঁচাতে হবে। আগে টাকা দেবেন তারপর আলোচনা। পিপলস লিজিংয়ের টাকা, চোর বাটপারদের টাকা না। টাকা না দিলে জেলে (কারাগারে) ঢুকিয়ে দেব। এটি একটি তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান। এখানে জনগণের টাকা। এটা চোর বাটপারদের টাকা না। আপনাদের ধারণা যত হয়, সেটাই দেন।’

ঋণগ্রহীতাদের উদ্দেশ্য আদালত বলেন, ‘আপনারা তো জমা রাখা টাকা তুলে নিয়েছেন। আর যারা এই প্রতিষ্ঠানে টাকা জমা রেখেছেন, তারা তো না খেয়ে ঘুরছেন রাস্তায়।’

এ সময় আদালত বলেন, ‘টাকা না দিয়ে কোনো মন্ত্রী বা কারো প্রভাবে কাজ হবে না। আইনের মধ্যে থেকেই টাকা দিতে হবে। কোর্ট যেহেতু ডেকেছে, প্রথম একটা ইনস্টলমেন্ট দেন তারপর বাকী আলোচনা বোর্ড বা কমিটির সঙ্গে করবেন। কোম্পানি বাঁচিয়ে রাখতে হলে আপনারা টাকা না দিলে কীভাবে হবে?’

এরপর এক আইনজীবী হাইকোর্টকে বলেন, ‘আপনারা যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন তাতে আমানতকারীরা আলোর মুখ দেখছেন। বাইরে আলোচনা হচ্ছে, এভাবে যদি আরও দু-একটি প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করা যায় তাহলে বিনিয়োগকারীরা সাহস পাবেন। এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা হবে।’

তখন বিচারপতি বলেন, ‘এটাতো কোর্টের কাজ না। এর জন্য যাদের দায়িত্ব রয়েছে তারা কেন এটা করছেন না। আমাদের কাজ হলো প্রতিষ্ঠান ওয়েন্ডিং আপ (অবসায়ন) করা। এখন প্রতিষ্ঠানটিকে বাঁচাতে চাই বলে এসব করতে হচ্ছে।’

এ সময় আদালত বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘কোম্পানি রান করবে, না হয় একত্রীকরণ বা অন্যকিছুর মধ্যে ঢুকিয়ে দেবে।’ পরে শুনানি মূলতবি করা হয়।

‘এখন শুধুমাত্র একজন অবসায়ক ও তার একজন আইনি পরামর্শক মিলে কাজ করছেন। যদি এখানে ১০ জনের একটা কমিটিকে বসানো হয়, তাদের মাসিক পরিশোধ করতে হবে। অফিসের ভাড়া দিতে হবে।’

‘ওদেরকে (বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন) দুই বছর ধরে বলছি, হয় তারা একটা বোর্ড গঠন করুক অথবা কমিটি বসুক। কোর্টতো এ কাজ করতে পারে না। আমার রেগুলার কাজের বিঘ্ন ঘটছে। দুই বছর ধরে অপেক্ষা করে আছি, বাংলাদেশ ব্যাংক কী করে, বিএসইসি কী করে তা দেখার জন্য।’

বিচারক বলেন, ‘পিপলস লিজিং যেহেতু পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি, বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্ব ছিল উদ্যোগী হওয়ার। কিন্তু তারা তা না করায় এখন আদালতকে দেখতে হচ্ছে।’ 

আদালতের নির্দেশে নিয়োগ পাওয়া আইনজীবী মেজবাহুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ গ্রহণ করা সর্বনিম্ন পাঁ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ পর্যন্ত ঋণগ্রহীতা এমন ২৮০ জনকে তলব করেছিলেন হাইকোর্ট। তলবে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ৫১ জন হাজির হয়েছিলেন। আজ দ্বিতীয় দফায় ৪৫ জন ঋণগ্রহীতা হাজির হন।’

তিনি জানান, গত দুইদিনে যারা আসেননি তাদেরকে আগামী ৯ মার্চ আবারও সশরীরে উপস্থিত হতে বলেছেন আদালত। আদালতের তলবে যারা আজকে আসেননি, তাদেরকে আরেকবার সুযোগ দেয়া হবে। ওই দিনও তারা আদালতে হাজির না হলে প্রয়োজনে বিশেষ বার্তায় তাদের আদালতে আসার জন্যে বলা হবে। তাতেও না আসলে গ্রেফতার করে কোর্টে হাজির করা হবে বলে জানান আদালত।

আইনজীবী মেজবাহুর রহমান আরো বলেন, ‘আগামী ৯ মার্চ এ মামলার পরবর্তী তারিখ পড়েছে। ওই দিন বাকি ঋণ খেলাপিদের হাজির হতে বলা হয়েছে।’

আর এদিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম, দুর্নীতি বন্ধে সমন্বিতভাবে কীভাবে কাজ করা যায় সে বিষয়ে সেদিন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যানের বক্তব্য শুনবে। ভার্চুয়াল আদালতে যুক্ত হয়ে তাদের বক্তব্য দিতে বলা হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটিকে বাঁচাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যানের বক্তব্য শুনবে বলেও গত ২৩ ফেব্রুয়ারি জানিয়েছিলেন হাইকোর্ট। আগামী ৯ মার্চ এ বিষয়েও শুনানি হতে পারে।

আদালতে সাময়িক অবসায়ক (প্রবেশনাল লিকুইডেটর) মো. আসাদুজ্জামান খানের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন আইনজীবী মেজবাহুর রহমান। ঋণ খেলাপিদের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার বেলায়েত হোসেন, ড. সৈয়দা নাসরিন ও আব্দুস সাত্তার পালোয়ানসহ আরও অনেকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী কাজী এরশাদুল আলম। জাগো নিউজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!