ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | পানি ব্যবস্থাপনা শিখতে ইউরোপ-আমেরিকা যেতে চান ১৬ কর্মকর্তা

পানি ব্যবস্থাপনা শিখতে ইউরোপ-আমেরিকা যেতে চান ১৬ কর্মকর্তা

নিউজ ডেক্স : জাতীয় পানি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার (এনডব্লিউএমপি) জন্য উপযুক্ত দেশ নেদারল্যান্ডস। অথচ এ কাজের জন্য ইউরোপ-আমেরিকা-অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণের প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদেশে প্রশিক্ষণ বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। যেতে চান ১৬ কর্মকর্তা। এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনা রয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। সোমবার (৭ মার্চ) বিশেষ প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভায় কমিশনের মত তুলে ধরা হবে।

প্রস্তাবিত ভ্রমণ তালিকায় আছে পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার (ওয়ারপো) ১১ জন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পাঁচজন কর্মকর্তা। তবে নানান যুক্তি দেখিয়ে এমন প্রস্তাব বাতিল করার জন্য মতামত তুলে ধরেছে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগ।

পরিকল্পনা কমিশন জানায়, এ ধরনের প্রশিক্ষণের জন্য দক্ষ দেশ শুধু নেদারল্যান্ডস। এছাড়া বৈশ্বিক করোনা পরবর্তী চ্যালেঞ্জ ও সরকারের আর্থিক সাশ্রয়ের বিষয় বিবেচনা করে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ বাদ দেওয়া হয়েছে। বিদেশ ভ্রমণ বাদ দিয়ে ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার অ্যান্ড ফ্লাড ম্যানেজমেন্টের (আইডাব্লিউএফএম) মাধ্যমে এ ধরনের শর্ট কোর্সের আয়োজন করা যেতে পারে। বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের বিস্তারিত বিভাজন প্রকল্পে সংযোজন করা প্রয়োজন।

প্রকল্পের মোট ব্যয় ৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। অনুমোদনের পর এক বছরে বাস্তবায়ন করতে চায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রকল্পের মূল কাজ বলতে পরামর্শক খাত, বৈদেশিক প্রশিক্ষণ ও স্থানীয় প্রশিক্ষণ। ব্যয় সরকারি কোষাগার থেকে মেটানো হবে। সেজন্য ভ্রমণের খাত এমন অহেতুক ব্যয় পরিহার করার পরামর্শ দিয়েছে কমিশন। এছাড়া টিম লিডারসহ ২০ জন সিনিয়র ও পাঁচজন জুনিয়র পরামর্শক (১৬৪ জনমাস) বাবদ ৪ কোটি ৫৮ হাজার ৩৬ হাজার টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। ওয়ারপো একটি বিশেষজ্ঞ সংস্থা হওয়া সত্ত্বেও এত সংখ্যক পরামর্শক নিয়োগের বিষয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা চেয়েছে কমিশন।

প্রস্তাবিত প্রকল্পটি নিয়ে সোমবার (৭ মার্চ) নগরীর পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সভাকক্ষে বিশেষ প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (এসপিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন সদস্য (সচিব) শরিফা খান। সভায় পরিকল্পনা কমিশনের মতামত তুলে ধরা হবে।

PLACEHOLDER

বিদেশ ভ্রমণ প্রসঙ্গে কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্মপ্রধান (সেচ উইং) মুহা. এনামূল হক বলেন, বিদেশ ভ্রমণ নিয়ে সভায় আলোচনা হবে। শুধু যে নেদারল্যান্ডস বা অন্য কোনো দেশে যেতে হবে বিষয়টি তা নয়। বিষয়টি হলো ব্যয় কমাতে হবে। বিদেশে ট্রেনিং না করে নেদারল্যান্ডস থেকে প্রশিক্ষক আনতে পারি অথবা অনলাইনে ক্লাস করতে পারি। এতে দেশের টাকা সাশ্রয় হবে। মূলত এসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। বুয়েটে এটা নিয়ে কাজ হচ্ছে। ওখান থেকেও প্রশিক্ষণ নেওয়া যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দক্ষতা উন্নয়ন ও সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কর্মশালায় আটজনের জন্য ৪০ লাখ টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে প্রস্তাবনায়। দক্ষতা উন্নয়ন/সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কর্মশালার বিস্তারিত বিবরণ এবং এ খাতে ব্যয়ের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রয়োজন বলে জানায় কমিশন। বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, যার প্রধান উপজীব্য পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা। তাছাড়া পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ থেকে বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’র ওপর একটি অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করা হয়েছে। এ অবস্থায় ‘জাতীয় পানি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা’ শিরোনামে আরও একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন কেন প্রয়োজন সে বিষয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় যানবাহন ভাড়া বাবদ ৬০ লাখ, স্টেশনারি বাবদ ৮ লাখ, মুদ্রণ ও বাঁধাই বাবদ ৮ লাখ টাকা সংস্থানের প্রস্তাব করা হয়। এখান থেকে কমিয়ে যানবাহন ভাড়া বাবদ ৪০ লাখ, স্টেশনারি বাবদ ১ লাখ, মুদ্রণ ও বাঁধাই বাবদ এক লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা যেতে পারে বলে মত দিয়েছে কমিশন।

এছাড়া প্রকল্পের আওতায় প্যানেল অব এক্সপার্ট বাবদ ২০ লাখ টাকা, কর্মশালা সেমিনার বাবদ ২৯ লাখ, ৯ জনের স্থানীয় প্রশিক্ষণ বাবদ ৩৭ লাখ, জ্বালানি ও লুব্রিকেন্ট বাবদ ১০ লাখ, গ্যাস ও ফুয়েল বাবদ ১২ লাখ, প্রিন্টিং ও বাইন্ডিং বাবদ ৮ লাখ, সম্মানি বাবদ ২০ লাখ, আপ্যায়ন বাবদ ১০ লাখ, মাঠ পরিদর্শন বাবদ ১৫ লাখ, অনিয়মিত শ্রমিক বাবদ ১০ লাখ ও বিজ্ঞাপন বাবদ ৭ লাখ টাকার বরাদ্দ রাখার বিষয়ে মত কমিশনের।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য
প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ এর আলোকে জাতীয় পানিসম্পদ পরিকল্পনা (এনডব্লিউআরপি) প্রণয়ন করা। যাতে বাংলাদেশের পানিসম্পদের টেকসই ও সামষ্টিক ব্যবস্থাপনা করা যায়। এই মহাপরিকল্পনায় পানিসম্পদের তথ্য-উপাত্তের বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে পানিসম্পদের মূল্যায়ন, বণ্টন, ব্যবহার, সংরক্ষণ ও পানিসম্পদ সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নতুন উদ্ভাবনী দৃষ্টিভঙ্গি বিবেচনা করা হবে। এনডব্লিউআরপিতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে প্রাতিষ্ঠানিক পরিকল্পনা, দীর্ঘমেয়াদি পুনর্গঠন, জাতীয় পানি ব্যবস্থাপনা কৌশল। এছাড়া এনিডব্লিউআরপিতে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি প্রোগ্রামের পোর্টফোলিও বিবেচনা করা হবে।

PLACEHOLDER

পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার পরিচালক (পরিকল্পনা) কে এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, এক্সপোর্ট কান্ট্রি নেদারল্যান্ডস এটা ঠিক আছে। নেদারল্যান্ডস সারা বিশ্বে কাজ করে। তবে পানি ব্যবস্থাপনা সারা বিশ্বেই হয়। আমরা প্রস্তাব দিয়েছি যদি অনুমোদন দেয় তবে যাবো, না দিলে না। এটা এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে আসেনি।

ডেল্টাপ্ল্যান পরিকল্পনায় প্রকল্প চিহ্নিত
নেদারল্যান্ডসের আদলে গ্রহণ করা শতবর্ষী ডেল্টাপ্ল্যান তথা ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’কে দেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের চাবিকাঠি হিসেবে দেখছে সরকার। এটি বাস্তবায়নে ৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন। প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ লাখ ১৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। অথচ এই পর্যায়ে এসে নতুন করে কারিগরি প্রকল্প গ্রহণে প্রশ্ন তুলেছে কমিশন।

এ পরিকল্পনার বিশেষ দিক হচ্ছে এটি শুধু একটি কৌশলগত পরিকল্পনা নয়, এটি একটি টেকনো ইকোনমিক পরিকল্পনা। এ বিনিয়োগ পরিকল্পনার মধ্যে ৮০টি প্রকল্পের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬৫টি ভৌত অবকাঠামো সংক্রান্ত প্রকল্প, ১৫টি প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ও দক্ষতা উন্নয়ন এবং গবেষণা বিষয়ক প্রকল্প।

পরিকল্পনা বিভাগের সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ডেল্টাপ্ল্যানকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। এটা নিয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) সভায় আলোচনা হয়েছে। ডেল্টাপ্ল্যানকে সবার ধারণ করতে হবে এবং সব মন্ত্রণালয়কে ডেল্টার সঙ্গে অ্যালাইন করে প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) ম্যানডেটরি অবজেক্টিভ সবাইকে অবহিত করতে হবে। নতুন করে এটা নিয়ে পরিকল্পনা সংক্রান্ত প্রকল্প আছে কি না আমার জানা নেই। যদি থেকে থাকে তবে ভেবে-চিন্তে দেখতে হবে।’ -জাগো নিউজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!