ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | নগর ছাত্রলীগের সিংহভাগ নেতাকর্মীই দু’ধারায় বিভক্ত

নগর ছাত্রলীগের সিংহভাগ নেতাকর্মীই দু’ধারায় বিভক্ত

Untitled-1

নিউজ ডেক্স : নগর ছাত্রলীগের সিংহভাগ নেতাকর্মীই দু’ধারায় বিভক্ত। এক পক্ষ নগর আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং অপর পক্ষ সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। দু’গ্রুপের নেতাকর্মীরা দলীয় এবং জাতীয় প্রত্যেকটা কর্মসূচি পালন করে আসছেন পৃথকভাবে। এছাড়া পরস্পরের সঙ্গে একাধিকবার সংঘর্ষও হয়েছে। ফেসবুকেও নিয়মিত পাল্টাপাল্টি ‘পোস্ট’ করেন তারা। সব মিলিয়ে দুই গ্রুপের কর্মীরা পরস্পরের বিরুদ্ধে নেতিবাচক মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটান প্রায়। এমন পরিস্থিতিতে এসে গত রোববার প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত নগর ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতা দেখা করেছেন আ.জ.ম নাছির উদ্দীনের সঙ্গে। কাজীর দেউড়িস্থ স্টেডিয়াম এলাকায় বৈঠকও হয়েছে। এরা হচ্ছেন নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর।

সিটি মেয়রের সঙ্গে এ দুই ছাত্রলীগ নেতার দেখা করার খবরটি জানাজানি হওয়ার পর চলছে নানা আলোচনা–সমালোচনা। কেউ কেউ প্রশ্ন করছেন, মহিউদ্দিন চৌধুরীর অবর্তমানে নগর ছাত্রলীগে নতুন মেরুকরণ হচ্ছে কী? অনেকে আবার মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারি হিসেবে পরিচিত ছাত্রলীগ কর্মীরা মেয়র নাছিরের দিকে ঝুঁকছেন কিনা সেই প্রশ্নও করছেন। তবে ছাত্রলীগ কর্মীদের দেখা করার বিষয়টিকে স্বাভাবিক উল্লেখ করে অনেকে বলছেন, ছাত্রলীগের অবিভাবক সংগঠন আওয়ামী লীগ। মেয়র নাছির নগর আওয়মী লীগের সাধারণ সম্পাদক। সেই হিসেবে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা অবিভাবক সংগঠনের নেতা নাছিরের কাছে সাংগঠনিক পরামর্শ চাওয়াটা ইতিবাচক। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দীর্ঘদিনের বিভক্তি ভুলে ছাত্রলীগের কর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা উচিত বলেও মনে করেন তারা।

এদিকে মেয়র নাছির ও নগর ছাত্রলীগের ঘনিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, আগামী ১১ ও ১২ মে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সম্মেলন ও কাউন্সিল। কাউন্সিল অধিবেশনের বিষয়টি নিয়েই নগর ছাত্রলীগের দুই নেতা দেখা করেছেন মেয়র নাছিরের সঙ্গে। চট্টগ্রাম মহানগরী থেকে কাউন্সিলর হিসেবে যোগ দিতে যাওয়া নেতাকর্মীদের তালিকা যাচাই–বাছাই নিয়ে আলোচনা হয়েছে ওই বৈঠকে। বৈঠকে মেয়র ছাত্রলীগ কর্মীদের দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় এমন কাজ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন ছাত্রলীগের দুই নেতাকে এবং সাংগঠনিক কাজে বিরোধ মেটানোর পরামর্শ দেন। দুই ছাত্রলীগ নেতাও এ ব্যাপারে মেয়রকে আশ্বস্ত করেন।

এদিকে মেয়রের সঙ্গে দেখা করার বিষয়ে প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারি ছাত্রলীগের একটি অংশ নেতিবাচক সমালোচনা করছেন। যারা নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অব্যহতি পাওয়া নুরুল আজিম রনির অনুসারি হিসেবে পরিচিত। এই অংশটির দাবি, প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরী আউটার স্টেডিয়াম খেলার মাঠে সুইমিং পুল নির্মাণের বিরোধিতা করেছিলেন। নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি গত বছরের ১৭ এপ্রিল সুইমিং পুল এলাকায় বিক্ষোভ করেছিলেন। ওইদিন পুলিশের গুলিতে মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারি একাধিক ছাত্রলীগ কর্মী আহত হয়েছিলেন। ইমু এবং দস্তগীর সেই সুইমিং পুল এলাকায় গিয়েই দেখা করেছেন মেয়রের সঙ্গে। তাই বিষয়টিকে তারা সহজভাবে নিচ্ছেন না। এছাড়া ২০১৩ সালে নগর ছাত্রলীগে কমিটি ঘোষণার পর মেয়র অনুসারি ছাত্রলীগ কর্মীরা তার বিরোধিতা করেছিলেন। ২০১৪ সালের ১৬ জানুয়ারি সার্কিট হাউজে মহিউদ্দিন ও নাছির অনুসারিদের মধ্যে সংঘর্ষও হয়েছিল। এতে নাছির অনুসারি একাধিক ছাত্রলীগ কর্মী আহত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে লালদীঘি মাঠে আওয়ামী লীগের একাধিক সমাবেশে মারমুখী অবস্থানে ছিলেন তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু বলেন, ‘আগামী ১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগের কাউন্সিল। বিষয়টি অবহিত করতে গিয়েছিলাম। যেহেতু তিনি (আ.জ.ম নাছির উদ্দীন) পার্টির (নগর আওয়ামী লীগ) সাধারণ সম্পাদক, তাকে অবহিত করতে হবে। তিনি পার্টির সেক্রেটারি, তাকে তো মানতে হবে। তাছাড়া জাকারিয়া দস্তগীর নগর ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন, তাকেও পরিচয় করিয়ে দিয়েছি।’

‘দীর্ঘদিন ধরে প্রয়াত আলহাজ্ব এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরী এবং আ.জ.ম নাছির চৌধুরীর অনুসারি ছাত্রলীগ কর্মীদের মধ্যে দূরত্ব ছিল। এখন সেই সেই দূরত্ব কমবে? এমন প্রশ্নে ইমরান আহমেদ ইমু বলেন, ‘মহিউদ্দিন ভাই কখনো বলেন নি, ‘পার্টির সাধারণ সম্পাদককে মানবে না।’ আসলে আমরা আগেও গিয়েছিলাম। কিন্তু এখন অতি উৎসাহি কেউ কেউ কেন সমালোচনা করছে তা বুঝতে পারছি না’।

জানতে চাইলে নগর ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর বলেন, ‘নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেয়ার পর নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করেছি। এই ধারাবাহিকতায় সাধারণ সম্পাদক নাছির সাহেবের সঙ্গেও দেখা করলাম। এটা একধরনের সৌজন্য সাক্ষাত। এছাড়া আগামী ১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলন। সেই বিষয়েও অবহিত করেছি এবং আলোচনা হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে অতি উৎসাহি অনেকে বুঝে, না বুঝে সমালোচনা করছেন। ফেসবুকে যারা সমালোচনা করছেন তাদের বিষয়ে কী বলব? ফেসবুক দিয়ে তো সংঘটন চলবে না।’

সাক্ষাতে মেয়রের পক্ষে কোনো বক্তব্য ছিল কিনা জানতে চাইলে জাকারিয়া দস্তগীর বলেন, ‘দুজনই (মাহতাব–নাছির) মুরব্বি সংগঠনের (আ.লীগ) নেতা। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য একই ছিল। বেঁচে থাকার সময় মহিউদ্দিন চৌধুরীও বলতেন, ‘সামনে নির্বাচন। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। সংগঠন বাঁচলে, আওয়ামী লীগ ঠিকলে, সবাই বাঁচবে।’

‘দূরত্ব থাকার পরেও নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সিটি মেয়রের সঙ্গে দেখা করা প্রসঙ্গে প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারি এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ–সম্পাদক হাবিবুর রহমান তারেক বলেন, ‘ছাত্রলীগ সহযোগী সংগঠন। মুরব্বী সংগঠনের কাছে যেতেই পারে। পছন্দ–অপছন্দ ভিন্ন বিষয়। নিজেদের মধ্যে দূরত্ব থাকলেও সংগঠনের তি করা তো উচিত না। যারা নেতিবাচক সমালোচনা করছেন তারা বিভেদ সৃষ্টি করতে চাচ্ছেন।’

এ প্রসঙ্গে সিটি মেয়রের অনুসারি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ–সম্পাদক ফয়সাল বাপ্পী বলেন, ‘ছাত্রলীগের অবিভাবক সংগঠন আওয়ামী লীগ। সেই হিসেবে ছাত্রলীগের উচিত অবিভাবকের কথা এবং পরামর্শ মনে চলা। আসলে মুরুব্বী সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে মেনেই ছাত্রলীগ করতে হবে। তাদের পরামর্শ মেনে গ্রশুপিং প্রত্যাহার করা উচিত। ওই জায়গা থেকে ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে যদি নগর ছাত্রলীগের সভাপতি–সাধারণ সম্পাদক মেয়রের সঙ্গে দেখা করেন তাহলে তাদেরকে স্বাগত জানাই।’ প্রসঙ্গক্রমে সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ‘মাথা ব্যাথার নাম ছাত্রলীগ। তারা নিয়মশৃঙ্খলার মধ্যে আসুক এবং আ.লীগের নেতাকর্মীদের উচিত, তাদের (ছাত্রলীগ) ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার না করে সাংগঠনিক কাজে ব্যবহার করা।’

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি ও নগর আওয়ামী লীগের সহ–সভাপতি আলহাজ্ব খোরশেদ আলম সুজন বলেন, ‘নগর ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর জাকারিয়া দস্তগীর নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে সৌজন্য সা াতের সিদ্ধান্ত নেন। ওই হিসেবেই তারা মেয়রের সঙ্গে দেখা করতে গেছেন। এখানে সরলতা বা জটিলতার কিছু নেই।’

‘দীর্ঘদিন ধরে প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরী ও আ.জ.ম নাছির অনুসারি ছাত্রলীগের মধ্যে দূরত্ব আছে। এখন সেই দূরত্ব কমার সম্ভাবনা আছে কিনা জানতে চাইলে খোরশেদ আলম সুজন বলেন, ‘ছাত্রলীগ সহযোগী সংগঠন। তাদের সঙ্গে আ.লীগের দূরত্ব নেই। সামনে নির্বাচন, আমরাও চাই বিরোধ কমে আসুক। তবে নীতির জায়গায় যে দূরত্ব সেটা হয়তো থেকে যাবে।’

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘আমার দরজা সবার জন্য উন্মুক্ত। মেয়র হিসেবে এবং দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমার কাছে যে কেউ আসতেই পারে। নগর ছাত্রলীগের সভাপতি বা ভারপ্রাপ্ত সাধারণ হিসেবে তারা সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে আমার সঙ্গে আলোচনা করেছে এবং কিছু নির্দেশনা চেয়েছে, আমিও তাদের কিছু ‘এডভাইস’ করেছি। যেহেতু ছাত্রলীগ সহযোগী সংগঠন সে েতে্র সহযোগিতা চাইলে তো অবশ্য সহযোগিতা করবো।

সাংগঠনিক বিষয়ে কি আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে আ.জ.ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘সামনে ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলন, কাউন্সিল আছে। সেখানে কীভাবে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে অংশ নিবে এবং কার্যক্রম পরিচালনা করবে সে বিষয়ে কথা হয়েছে। আমি বলেছি, নিজেদের মধ্যে দূরত্ব না রেখে ইতিবাচক মানসিকতা রেখে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য। সহযোগী সংগঠন হলেও ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের দায় অনেক সময় আওয়ামী লীগের উপর চলে আসে। তাই তাদের বলেছি, এমন কোনো কর্মকাণ্ড না করার জন্য যাতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়। সামনে নির্বাচন আসছে, যেন আমাদের বিভিন্ন অর্জনগুলো হ্মান না হয় সে ব্যাপারে দায়িত্বশীল কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে বলেছি।’ ‘দেখা করতে আসা নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের আচরণে ইতিবাচক মনোভাব ছিল কিনা জানতে চাইলে আ.জ.ম নাছির বলেন, ‘আসা মানেই তো পজিটিভ।’

সূত্র: দৈনিক আজাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!