Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | দৃশ্যমান হচ্ছে দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্প

দৃশ্যমান হচ্ছে দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্প

0

নিউজ ডেক্স : সরকার প্রধান শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্পের অন্যতম চট্টগ্রাম দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ অবশেষে দৃশ্যমান হতে চলছে। বর্তমানে প্রকল্পের উন্নয়ন কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার রেললাইনের নির্মাণ প্রকল্পে প্রায় ৫০ শতাংশের কাছাকাছি কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলায় ভূমি অধিগ্রহণের কাজও শেষ হয়েছে। আগামী ২০২২ সালের মধ্যেই এ প্রকল্পটি চালু হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন। সামগ্রিকভাবে দৃশ্যমান হয়ে উঠছে দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার রেললাইনের নির্মাণ কাজগুলো।

ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে প্রকল্প এলাকায় ব্যক্তি পর্যায়ে বেশ কিছু মামলা সংক্রান্ত জটিলতা এবং বনবিভাগের কিছু জমি সময়মত হস্তান্তর হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার ভিত্তিক এই প্রকল্পের উন্নয়ন কাজে বর্তমানে বেশ গতি ফিরেছে।

চলতিবছরের মাঝামাঝি সময়ে প্রকল্পের উন্নয়ন কাজের সার্বিক অগ্রগতি পরিদর্শনে কক্সবাজারে আসেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। রেলমন্ত্রী প্রকল্পের সাথে জড়িত সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সাথে কক্সবাজার সার্কিট হাউজে মতবিনিময় করেন। পরে তিনি কক্সবাজার সদর, রামু, চকরিয়া উপজেলার বিএমচর ইউনিয়নে প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখেন।

এসময় রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘কক্সবাজারে রেলপথ সংযুক্ত হলে এ অঞ্চলের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে। পর্যটকরা অত্যন্ত স্বাচ্ছন্দ্যে কক্সবাজার ভ্রমন করতে পারবেন।’  ‘প্রকল্পের সার্বিক কাজ বর্তমানে এগিয়ে চলেছে। কিছু জায়গা যেসব প্রতিবন্ধকতা আছে, আশা করছি খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে আমরা সেগুলোও দূর করতে পারবো।

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-ঘুমধুম রেললাইনের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মো. মফিজুর রহমান বলেন, এ রেললাইনের রাস্তা নির্মাণ কাজ, সেতু নির্মাণের কাজসহ প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন চলমান উন্নয়ন কাজ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলার ভূমি অধিগ্রহণও শেষ হয়েছে। রেললাইনের রাস্তা নির্মাণসহ অনেক কাজ দৃশ্যমান হয়ে গেছে। তাছাড়া কক্সবাজার সদরেই ঝিনুক আকৃতির রেলওয়ে স্টেশন নির্মিত হচ্ছে। ঝিনুক আকৃতির এই স্টেশন দেখলেই বোঝা যাবে এটি সমুদ্র  সৈকতের রেলওয়ে স্টেশন।

তিনি বলেন, কক্সবাজারের ঈদগাঁও মৌজায় ক্যাম্প অফিস কাম কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। রামুতে মেটেরিয়াল টেস্টিং ল্যাবরেটরি নির্মাণ শেষ হয়েছে। ১২ দশমিক ৮০ কিলোমিটার অংশে ব্যাকফিলিংসহ মোট ২৯ কিলোমিটার অংশে এম্বাস্কমেন্ট নির্মাণকাজ চলছে। ৪ দশমিক ৭০ কিলোমিটার অংশে জিও টেক্সটাইল ও সেন্ড ব্লাংকেট স্থাপন ও ১ দশমিক ১৮ কিলোমিটার অংশে পিভিডি স্থাপন করা হয়েছে।

সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৩৫ কোটি টাকা। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার এবং রামু-ঘুমধুম পর্যন্ত মিটারগেজ রেলপথ নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আইনি জটিলতায় ক্ষতিপূরণের টাকা দিতে কিছুটা ধীরগতি ও বন বিভাগের কিছু জায়গা না পাওয়ায় নির্মাণ কাজ পিছিয়ে গিয়েছিল। প্রকল্পের কিছু জমি বিভিন্ন মামলায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় প্রায় ৩৭৮ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ প্রদান বন্ধ থাকলেও তা সমাধানের পর্যায়ে চলে গেছে।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম হয়ে দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার যাওয়ার পথে রামু হবে জংশন স্টেশন। সেখান থেকে একটি লাইন চলে যাবে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের পাশে। আরেকটি লাইন পূর্বদিকে মিয়ানমারের কাছে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম যাবে। এ রেলওয়ে নেটওয়ার্ক মিয়ানমার-বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান-ইরান হয়ে যাবে ইউরোপের তুরস্ক পর্যন্ত। সৈকতের স্টেশনটি হবে বিশাল ঝিনুক আকৃতির। এই ঝিনুকের ভিতরেই হবে প্লাটফর্ম এবং যাত্রী আসা-যাওয়া ও বসার লাউঞ্জ। প্রকল্পের কাজের তদারকি করা হয়েছে খোদ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেই।

আরেকটি লাইন পূর্বদিকে মিয়ানমারের কাছে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম যাবে। এ রেলওয়ে নেটওয়ার্ক মিয়ানমার-বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান-ইরান হয়ে যাবে ইউরোপের তুরস্ক পর্যন্ত। সৈকতের স্টেশনটি হবে বিশাল ঝিনুক আকৃতির। এই ঝিনুকের ভিতরেই হবে প্লাটফর্ম এবং যাত্রী আসা-যাওয়া ও বসার লাউঞ্জ।

প্রকল্পের কাজের তদারকি করা হয়েছে খোদ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেই। দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে পর্যটক ও স্থানীয় জনগণের জন্য নিরাপদ, আরামদায়ক, সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রবর্তন হবে। সহজে ও কম খরচে মাছ, লবণ, কাগজের কাঁচামাল, বনজ ও কৃষিজ দ্রব্যাদি পরিবহন করা যাবে।

দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ৮৮ কিমি রামু থেকে কক্সবাজার ১২ কিমি এবং রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ হচ্ছে। ১২৮ কিমি রেলপথে স্টেশনের থাকছে ৯টি। এগুলো হলো- সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়া উপজেলার সাহারবিলের রামপুর, ডুলাহাজারা, ঈদগাও, রামু, কক্সবাজার, উখিয়া ও ঘুমধুম।

এতে কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলক সিগন্যাল সিস্টেম থাকবে ৯টি, ডিজিটাল টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেম থাকবে ৯টি। সাঙ্গু, মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মাণ করা হবে সেতু।

এ ছাড়া প্রকল্পের ৪৩টি মাইনর সেতু, ২০১টি কালভার্ট, সাতকানিয়ার কেঁওচিয়া এলাকায় একটি ফ্লাইওভার, ১৪৪টি লেভেল ক্রসিং এবং রামু ও কক্সবাজার এলাকায় দুটি হাইওয়ে ক্রসিং নির্মাণ করা হবে। আগামী ২০২২ সালের মধ্যে শতভাগ কাজ শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে দ্রুত এগিয়ে চলছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, রেললাইন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে করিডরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন হবে। এতে আঞ্চলিক, উপ-আঞ্চলিক রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে সিল্ক রুট (চীন-মিয়ানমার-বাংলাদেশ) ও ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে বিদ্যমান রেলপথটি গুরুত্বপূর্ণ সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করবে।

চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি আলহাজ ফজলুল করিম সাঈদী বলেন, আমরা একসময় স্বপ্ন দেখতাম, রেললাইনে চেপে সারাদেশে যাতায়াত করবো। এটি এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তবে রূপ পাচ্ছে সেই স্বপ্নের রেললাইন। তিনি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা আজ রাষ্ট্রক্ষমতায় আছেন বলেই কক্সবাজারবাসী দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন অবশেষে পুরণ হতে চলছে।

সূত্র : দৈনিক বায়ান্ন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!