ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | ‘দুধসর’ পাতার রসে মিলছে করোনামুক্তি, দাবি কৃষিবিজ্ঞানী ড. এনায়েতের

‘দুধসর’ পাতার রসে মিলছে করোনামুক্তি, দাবি কৃষিবিজ্ঞানী ড. এনায়েতের

নিউজ ডেক্স : দুধসর গাছের পাতায় করোনা সারছে বলে দাবি করেছেন কৃষিবিজ্ঞানী ড. এনায়েত আলী। তিনি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বরেন্দ্র অঞ্চলের সরেজমিন গবেষণা বিভাগের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা।

কৃষিবিজ্ঞানী ড. এনায়েত আলী জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় ওই উদ্ভিদের ব্যবহারে তার গবেষণা শতভাগ সফল হয়েছে। উদ্ভিদটি রাজশাহী অঞ্চলে ‘দুধসর’ নামে পরিচিত হলেও কোথাও কোথাও মনসাসিজ নামে পরিচিত। এর বৈজ্ঞানিক নাম ‘Euphorbia nerifolia’ যেটি ‘Euphorbiaceae’ পর্বের উদ্ভিদ।

তিনি জানান, এই পাতার রস অ্যাজমা, নিউমোনিয়া ও ব্রংকাইটিস রোগের প্রতিষেধক হিসেবে বহুবছর ধরেই মানুষ ব্যবহার করছে। বিশেষ করে বরেন্দ্র অঞ্চলের আদিবাসীরা সর্দি-কাশি ও জ্বরে এর ব্যবহার বেশি করেন। ঔষুধী গুনসমৃদ্ধ এই গাছের পাতা কোভিড-১৯ জনিত করোনাভাইরাসের নিউমোনিয়া সারাতে অধিক কার্যকরী। শুধু তাই নয়, যেকোন ধরণের ছত্রাকনাশক হিসেবেও কাজ করে।

ড. এনায়েত বলেন, চীনে পিএইচডি করার সময় ‘Euphorbia nerifolia’ উদ্ভিদ সম্পর্কে ভালো ধারনা পাই। করোনা শুরুর পর থেকে আমি এই পর্বের উদ্ভিদ খুঁজতে শুরু করি। তখন দুধসর গাছটিকে পাই যেটি ‘Euphorbiaceae’ পর্বের। এটি সর্দি, কাশি ও নিউমোনিয়ার জন্য বেশ কার্যকর। তখনই দুধসর নিয়ে কাজ করি। গতবছর আমার ভাতিজা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়। তার অক্সিজেন লেভেল ৬৯ এ  মেছিলো। হাসপাতালে বেশ কঠিন সময় গেছে তার। তখন তাকে দিয়েই আমি প্রথম ট্রায়াল দেই। এতে সে দ্রুতই ভালো হয়ে যায়। এরপর আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মী করোনায় আক্রান্ত হলে তাদের এই পাতার রস খেতে দেই। তাদের ক্ষেত্রেও দ্রুতই ভালো সাড়া পাই। অনেকের শ্বাসকষ্ট সমস্যাও দ্রুত নির্মূল করছে এটি। এভাবে প্রায় ২ হাজার মানুষকে দিয়েছি। ভালোই ফল পেয়েছি।

কৃষি বিজ্ঞানী ড. এনায়েত আলী

তিনি আরো বলেন, এই উদ্ভিদে রয়েছে প্রায় ২৩ প্রকারের ডাই-টারফিনয়েড এবং এক ধরনের গ্লাইকোসাইড। এর মধ্যে সাতটি উপকরণ সরাসরি করোনার বিরুদ্ধে কাজ করে। এর মধ্যে ৩ বেটা ফ্রাইডেনাশল এবং টারফিনয়েডের রয়েছে দারুণ অ্যান্টিভাইরাল কার্যকারিতা। এই গাছের পাতা ভালো করে ধুয়ে পানের মত চিবিয়ে রস খেয়ে ছোবরা ফেলে দিলেই হয়। এতে কোন ক্ষতি নেই। তবে উপকার আছে।

এই কৃষিবিজ্ঞানী জানান, করোনাভাইরাসের প্রোটিন ‘এস’ ফুসফুসের কোষের এনজিওটেনসিং হিউমান কনভারটিং এনজাইম রিসেপটর-২ এর মাধ্যমে ডিফিউশন পদ্ধতিতে কোষে প্রবেশ করে। এরপর মেসেঞ্জার আরএনএ (এমআরএনএ) এর দুটি সাব-ইউনিট ৪০এস এবং ৬০এস আছে। যা ৪০৫ সাব ইউনিটের সঙ্গে কমপ্লেক্স তৈরি করে জেনোমিক ভাইরাল আরএনএ সিনথেসিস শুরু করে। এ অবস্থায় আক্রান্ত রোগী যদি দুধসরের পাতার রস খাওয়া শুরু করে তাহলে এটি প্রত্যক্ষভাবে ভাইরাল প্রোটিন সিনথেসিসে বাধা প্রদান করে।

যারা করোনামুক্ত হলেন : রাজশাহীর জেলা ও দায়রা জজ (সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) এনায়েত কবীর সরকার বলেন, ‘আমাদের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার সঙ্গে একদিন একটি সেমিনারে কথা হয়। তিনি সেসময় বলেন করোনাভাইরাসে আক্রান্তরা দুধসর পাতা খেয়ে বেশ উপকৃত হয়েছে। আমি তার মাধ্যমে একটি বাগান থেকে কিছু গাছ সংগ্রহ করে বাড়িতে লাগাই। আমি করোনা পজেটিভ ছিলাম এবং আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও পজেটিভ ছিল। তাদেরও কিছু পাতা পাঠাই। সবাই পাতা খেয়ে করোনামুক্ত হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, প্রচলিত চিকিৎসার পাশাপাশি আমরা পাতার রস খেয়েছি। আমার কাছে মনে হয়েছে, পাতার রস খাবার পর দ্রুত ভালো হতে পেরেছি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের ছাত্র মুহাইমিনুর রহমান বলেন, আমার করোনা পজেটিভ হবার পর দুধসর গাছের পাতার রস খেতে দেন তিনি। এই রস খেয়ে দ্রুত আমার কাশি কমতে থাকে। চার পাঁচ দিনের মধ্যেই আমি সুস্থ হয়ে উঠি।

রাজশাহীর বাণিজ্যিক অডিট সুপারিনটেনডেন্ট আশরাফুল ইসলাম বলেন, করোনা পজেটিভ হবার পর আমার অক্সিজেন লেভেল ৭৯ শতাংশে নেমেছিল। রামেক হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। চিকিৎসার পাশাপাশি দুধসর গাছের পাতার রস খাই। এটা খাবার সঙ্গে সঙ্গেই আমার অক্সিজেন লেভেল বেড়ে যায় এবং সুস্থ হয়ে উঠি।

বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের রাজশাহী জেলা অফিসের প্রজেক্ট অফিসার আসাদুজ্জামান বলেন, আমার ভাই চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হুমায়ুন কবীর করোনা পজেটিভ হয়েছেন। সোমবার তাকে এই পাতার রস খাওয়াই। মঙ্গলবার তিনি ফোন করে জানিয়েছেন যে তিনি এখন ভাল আছেন।

কৃষিবিজ্ঞানী ড. এনায়েত আলী বলেন, চীনে যখন ছিলাম, তখন দেখতাম আধুনিক চিকিৎসার পাশাপাশি ভেষজ চিকিৎসাও করেন। এ থেকেই আমার আগ্রহ বাড়ে। করোনা ছড়িয়ে পড়লে আমি মনস্থির করি এবিষয়ে কাজ করবো। সেই থেকে শুরু করি। পরে গবেষণায় জানতে পারি দুধসর গাছের পাতায় করোনা মুক্তির উপাদান আছে। অনেকেই এই পাতায় সুস্থ হয়েছেন। এখন সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা ও আরো গবেষণার প্রয়োজন। 

তিনি বলেন, এই পাতায় কোন ক্ষতি নেই। তবে উপকার আছে। এ থেকে যদি প্রাণ বাঁচানো যায় তবে আমার গবেষণা স্বার্থক হবে। তিনি সতর্ক করে বলেন, এই প্রজাতির আরো উদ্ভিদ আছে, যেগুলো বিষাক্ত। তাই দুধসর গাছ সতর্কতার সঙ্গে চিনে ব্যবহার করতে হবে।

চৌধুরী বাড়ীতে দুধসরের বাগান: নগরীর হেঁতেমখাঁ চৌধুরানী নসিমননেছা বাড়িতে অকারণেই গড়ে তোলা হয়েছে দুধসরের বাগান। কৃষিবিজ্ঞানী এনায়েত আলী একটি গাছের জন্য হণ্যে হয়ে শহর গ্রাম দৌড়ে বেরিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত নিজ অফিসের অদুরেই পেয়ে গেছেন বিশাল বাগান। কিন্তু চৌধুরী বাড়ীতে কেন এই বাগান? জানালেন চৌধুরী বাড়ির ছেলে আব্দুল আওয়াল খান চৌধুরী। 

তিনি বলেন, আমার বাবা আব্দুস সালেক খান চৌধুরী ৬০ এর দশকে কলকতা থেকে একটি গাছ এনে টবে লাগান। তিনি সে সময় বলেছিলেন এটা একটি মহাঔষুধী গুণের গাছ। কিন্তু তারা জানতেন না- আসলে কি অসুখের কাজ করে। এক সময় সালেক খান চৌধুরী মারা যান। গাছটি টবে অনেক বড় হয়ে যায়। এরপর তার পুত্রবধূ আমিনা চৌধুরী টব থেকে গাছের কিছু অংশ কেটে কেটে বাসার গেটের পাশ দিয়ে পুতে রাখেন। এতেই হয়ে যায় বিশাল বাগান। 

আমিনা চৌধুরী জানান, বাসার গেটে বখাটেদের উৎপাত থামাতেই তিনি গাছগুলো রোপন করেছিলেন। যেনো কিছুটা সবুজ হয়, আবার উৎপাতও কমে আসে। এরপর তার উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। কিন্তু এটা যে সত্যিই এতো বড় মহা ওষুধের গাছ তা তিনি জানতে পারেন কৃষিবিজ্ঞানী এনায়েত আলীর মাধ্যমে। তিনি বলেন, জানার পর বাসার সবাই এই গাছের পাতা প্রতিষেধক হিসেবে খাচ্ছি। -সমকাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!