Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | জামায়াতের বিপরীতে প্রার্থী চায় বিএনপির একটি অংশ

জামায়াতের বিপরীতে প্রার্থী চায় বিএনপির একটি অংশ

111-800x335

নিউজ ডেক্স : ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনের মধ্যে একটি মাত্র আসন চট্টগ্রাম-১৫ (লোহাগাড়া-সাতকানিয়া) জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামীকে ছেড়ে দিয়েছিল বিএনপি। অবশিষ্ট ১৫টি আসনে বিএনপি প্রার্থী দিয়েছিল। এবারও একই আসনটি জোটের কাছে দাবি করেছে বলে জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। এর আগে ২০০১ ও ২০০৮ যথাক্রমে অষ্টম ও নবম সংসদ নির্বাচনে আসনটি জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীকে ছেড়ে দেয় বিএনপি। ওই দুইটি নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থী জয়লাভ করেন। তবে আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনে একক নির্বাচন করলে এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন বেশ কয়েকজন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য তিনজন হলেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক শেখ মহিউদ্দিন, জেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও লোহাগাড়া উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি নাজমুল মোস্তাফা আমিন এবং জেলা বিএনপির স্ব-নির্ভর বিষয়ক সম্পাদক ও সাতকানিয়া উপজেলার সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান। অপরদিকে জোটগত কিংবা একক নির্বাচন করলে জামায়াতের প্রার্থী হবেন সাবেক এমপি মাওলানা আ ন ম শামসুল ইসলাম।

আসন্ন নির্বাচনে মনোনয়ন প্রসঙ্গে জামায়াতে ইসলামী দক্ষিণ জেলার আমীর জাফর সাদেক বলেন, ‘জামায়াতের কেন্দ্রীয় পার্লামেন্টারি বোর্ড থেকে জোটের কাছে চট্টগ্রাম-১৫ (লোহাগাড়া-সাতকানিয়া) আসনটি দাবি করা হয়েছে। এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী হবেন সাবেক এমপি মাওলানা আ ন ম শামসুল ইসলাম।’

বিএনপি থেকে মনোনয়ন দৌঁড়ে থাকা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক শেখ মহিউদ্দিন বলেন, ‘স্কুল জীবন থেকে ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত আছি। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়েও রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম। এরপর বিএনপির সাতকানিয়া উপজেলা ও দক্ষিণ জেলার বিভিন্ন কমিটিতে ছিলাম। বর্তমানে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি। সুতরাং আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের ব্যাপারে আমি অত্যন্ত আশাবাদী।’

বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী দক্ষিণ জেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও লোহাগাড়া উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি নাজমুল মোস্তাফা আমিন বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতির সাথে জড়িত। লোহাগাড়া এবং দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাথে সম্পৃক্ত থেকে দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সুখ-দুঃখে পাশে থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আশা করি সেই বিবেচনায় দল আমাকে মনোনয়ন দেবে।’

বিএনপি থেকে অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী দক্ষিণ জেলা বিএনপির স্ব-নির্ভর বিষয়ক সম্পাদক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘ছাত্র অবস্থা থেকে আমি রাজনীতির সাথে জড়িত। সাতকানিয়া বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। রাজনীতির কারণে কারাবরণ করেছি। সুতরাং দল আমাকে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দেবে বলে আমি আশাবাদী।’

এদিকে বিএনপির একটি সূত্র জানায়, বহুধা বিভক্ত লোহাগাড়া ও সাতকানিয়া বিএনপি। গ্রুপিংয়ের কারণে বিএনপি এ দুই উপজেলায় কখনো শক্ত অবস্থানে যেতে পারেনি। সর্বশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীরা এই দুই উপজেলায় দাঁড়াতে পারেনি। বিপরীতে জামায়াত দুই উপজেলায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানের সবগুলো পদে জয়লাভ করে। সুতরাং এ আসনে নির্বাচন করতে চাইলে বিএনপিকে আগে দলের গ্রুপিং বন্ধ করতে হবে। নেতাদের এক সাথে বসতে হবে। দলের বিবাদ মেটাতে হবে। না হয় নির্বাচনে ভাল ফল অর্জন অনেকটা দুরূহ হবে।

বিএনপির সূত্রটি আরো জানায়, সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় বিএনপির একটি অংশ জোটের শরিক জামায়াতে ওপর রুষ্ট। এ কারণে তারা নিজেদের প্রার্থী চায় এ আসনে। তবে বিএনপির অন্য একটি অংশ দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিতে দ্বিধা করেন না। এ অংশটি দল কিংবা জোটের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে কখনো দ্বিমত করে না।

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনের মধ্যে চট্টগ্রাম-১৫ (লোহাগাড়া-সাতকানিয়া আংশিক) সংসদীয় আসনটিতে জামায়াতে ইসলামীর প্রভাব রয়েছে। স্বাাধীনতা পর বিগত ১০টি সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপির প্রার্থী তিনবার করে জয়লাভ করেছেন। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি জিতেছে দুইবার করে।

পরিসংখ্যান মতে, ১৯৭৩ সালে ৭ মার্চ প্রথম সংসদ নির্বাচনে এ আসনে জয়লাভ করেন আওয়ামী লীগের এম সিদ্দিক। ১৯৭৯ সালে ১৮ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন বিএনপির মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী। ১৯৮৬ সালে ৭ মে তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করেন জাতীয়পার্টির ইব্রাহিম বিন খলিল। এই নির্বাচনের তিন বছরের মধ্যে ১৯৮৮ সালে অনুষ্ঠিত হয় চতুর্থ সংসদ নির্বাচন। ওই নির্বাচনে জাতীয়পার্টির ইব্রাহিম বিন খলিল পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একই আসনে ১৯৯১ সালে ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন জামায়াতে ইসলামীর শাহজাহান চৌধুরী। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন বিএনপির কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বীর বিক্রম। একই বছর ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচনেও জয়লাভ করেন বিএনপির কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বীর বিক্রম। এরপর ২০০১ সালে পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন জামায়াতে ইসলামীর শাহজাহান চৌধুরী। নবম সংসদ নির্বাচনেও জামায়াত এ আসনটি ধরে রাখতে সক্ষম হয়। তবে সেবার দলটি তাদের প্রার্থী পরিবর্তন করে। ২০০৮ সালের এ নির্বাচনে জয়ী হন জামায়াতের আ ন ম শামসুল ইসলাম। সবশের্ষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী। এর আগে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দান করেন।

সূত্র : দৈনিক পূর্বকোণ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!