এলনিউজ২৪ডটকম : চট্টগ্রাম থেকে লোহাগাড়ার চুনতি পর্যন্ত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে অসংখ্য ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক রয়েছে। সড়কের দু’পাশ দখল করে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ যানবাহনের স্ট্যান্ড। সড়কে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক ও স্পিডব্রেকার থাকায় প্রতিনিয়ত যানজট সৃষ্টিসহ বৃদ্ধি পেয়েছে দুর্ঘটনা। মহাসড়কের পটিয়ার শান্তির হাট, মুন্সেফ বাজার, থানা মোড়, ডাকবাংলা, বাস স্ট্যান্ড, দোহাজারী বাজার, সাতকানিয়ার কেরানীহাট ও লোহাগাড়ার বটতলীতে প্রায়ই যানজট চরম আকার ধারণ করে।
সরেজমিনে দেখা যায়, পটিয়ার মইজ্জাটেক পর্যন্ত মনসার টেক, বাদামতল, গৈড়লার টেক, আমজুর হাট টেক, পটিয়া পোস্ট অফিস মোড়, আদালত গেইট মোড়, থানার মোড়, ডাক বাংলার মোড়, কমল মুন্সির হাট মিলে ৩০টি পয়েন্টে এবং চন্দনাইশ উপজেলার ২০ পয়েন্টে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক রয়েছে। চন্দনাইশ থেকে লোহাগাড়ার চুনতি পর্যন্ত ২০টির অধিক স্থানে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক রয়েছে।
সড়ক বিভাগের তথ্য মতে, পটিয়া মনসা থেকে দোহাজারী শঙ্খ ব্রিজ পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার সড়কে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে। এ সড়কে অধিকাংশ ছোট বড় যানবাহন চলাচল করছে অদক্ষ চালকের দ্বারা। এদের মধ্যে ১৮ বছরের নিচে শিশু কিশোর রয়েছে। ফলে সড়কটিতে রীতিমতো যানজট সৃষ্টিসহ দুর্ঘটনা সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অভিযোগ রয়েছে- সিএনজি, মাহেন্দ্র, হাইয়েচ, মাইক্রোসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল এবং দোকানপাট সংশ্লিষ্টদেরকে টাকার বিনিময়ে দু’পাশে রাখার সুযোগ করে দেয়।
গাড়ির চালকরা জানান, মহাসড়কের দু’পাশে এতবেশি বিভিন্ন দোকানপাট, গাড়ির স্ট্যান্ড ও গ্যারেজ গড়ে উঠেছে এবং সড়কটি এত বেশি আঁকাবাঁকা যে, প্রতিনিয়ত অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে গাড়ি চালাতে হয়। চট্টগ্রাম থেকে লোহাগাড়া পর্যন্ত ৬৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে দেড় ঘণ্টারস্থলে তিন ঘণ্টা সময় লেগে যায়।
একটি সূত্র থেকে জানা যায়, সড়কের দু’পাশে দোকানের মাধ্যমে দৈনিক ও মাসিক ভাড়ার বিনিময়ে ব্যবসা করার সুযোগ দিচ্ছে একটি মহল। সড়কের ফুটপাত দখল করে ফলের দোকান, চায়ের দোকান, মুচির দোকানসহ বিভিন্ন দোকান গড়ে উঠেছে। সড়কটির পটিয়া, দোহাজারী, কেরানীহাট ও লোহাগাড়ার বটতলীতে এ সকল স্থাপনা বেশি গড়ে উঠেছে।
আরকান সড়ক পরিবহন ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আলী জানান, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক এতোবেশি আঁকা-বাঁকা যে, অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে গাড়ি চালাতে হয়। দু’পাশে দোকানপাট গড়ে উঠার কারণে যানজট ও দুর্ঘটনা লেগেই আছে।
দোহাজারী সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ৪ লেনে উন্নীত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সড়কের চার লেনের কাজ শুরু হলে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলো ঠিক করা হবে। সড়কের ফুটপাতে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা বিভিন্ন যান-বাহনের স্ট্যান্ড-গ্যারেজ ও দোকানপাট উচ্ছেদ করা স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কাজ বলে তিনি জানান।
লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু আসলাম জানান, উপজেলার চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের বটতলীর ফুটপাত অবৈধভাবে গড়ে উঠা দোকানপাট ও বিভিন্ন যানবাহনের গাড়ির স্ট্যান্ড-গ্যারেজের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে ওই সড়কের ফুটপাতে অবস্থানরত যানজট সৃষ্টিকারী বহু বাস-মিনি বাস, মাইক্রো ও সিএনজি টেক্সি‘র বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, গত দুই বছরে দক্ষিণ চট্টগ্রামে প্রায় ২ শতাধিক লোক নিহত হয়েছে, আহতের পরিমাণ প্রায় ৫’শ। এছাড়াও এ সড়কে ফিটনেস বিহীন যানবাহনের সংখ্যা বেশি হওয়ায় দুর্ঘটনা রোধ করা যাচ্ছে না। অদক্ষ চালক ও ফিটনেস বিহীন যানবাহনের সংখ্যা কমে আসলে দুর্ঘটনার হার কমে আসবে বলে ধারণা করছেন সচেতন মহল।