Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | চট্টগ্রামে তিন মাসে সড়কে ঝরেছে ৮১টি তাজা প্রাণ

চট্টগ্রামে তিন মাসে সড়কে ঝরেছে ৮১টি তাজা প্রাণ

ac

নিউজ ডেক্স : থামছে না সড়ক দুর্ঘটনা, বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা। দিনদিন প্রাণঘাতী সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতের বহর ক্রমাগত বাড়ছে। অকালে ঝরছে অনেক তাজা প্রাণ। যাদের বেশিরভাগই তরুণ। এতে অনেক সম্ভাবনাময়ী তাজা প্রাণ ফুলে ফলে বিকশিত হওয়ার আগেই হারিয়ে যাচ্ছে, তেমনি তাদের ঘিরে স্বপ্নের জাল বোনা পরিবারগুলোর স্বপ্ন হয়ে যাচ্ছে ফিকে এবং বিবর্ণ। অন্যদিকে বেঁচে যাওয়া আহত অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করছে। সড়কে হতাহতের ঘটনা থামাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন কর্মসূচিসহ মামলা, জরিমানা, কারাদণ্ড দিয়েও প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না সড়ক দুর্ঘটনা। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ, চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) চট্টগ্রাম জোন, আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে। চলতি বছরের গত ৯৬ দিনে চট্টগ্রামে ৭১টি দুর্ঘটনায় ৮১ জন নিহত এবং ১৪৯ জন গুরুতর আহত হয়েছে। হতাহতের মধ্যে রয়েছে শিশু, ডাক্তার, স্কুল শিক্ষিকা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, কলেজ শিক্ষার্থী, স্কুল ছাত্র-ছাত্রী, বাবা-ছেলে, বৃদ্ধ, যাত্রী, পথচারী, গৃহবধূ, চালক, শ্রমিক, নিরাপত্তা কর্মী এবং সরকারি কর্মচারী।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসাবে দেশে যানবাহনের সংখ্যা প্রায় ৩৩ লাখ। এর মধ্যে চালকের লাইসেন্স আছে ১৮ লাখ। বাকী ১৫ লাখ যানবাহন চলছে লাইসেন্সবিহীন চালক দিয়ে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চট্টগ্রাম সার্কেলের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত-১১ ১২ ও ১৩ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াউল হক মীর, সোহেল রানা ও এস এম মনজুরুল হক সমন্বতিভাবে জরিমানা করেছে ৪২ লাখ ৪১ হাজার ৬শ টাকা। মামলা হয়েছে, ২ হাজার ৩শ ৬৯টি, কাগজপত্র জব্দ করেছে ২শ ৭৬টি গাড়ির ও ডাম্পিংয়ে পাঠিয়েছে ২০টি গাড়ি এবং কয়েকজনকে দিয়েছেন কারাদণ্ড। এপ্রিল মাসেও ভ্রাম্যমাণ তিনটি আদালতের অভিযান অব্যাহত আছে।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (ট্রাফিক) উত্তর ও বন্দর বিভাগের চলতি বছরের জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চে মোট মামলা হয়েছে ৯৭ হাজার ৭৬টি। জরিমানা আদায় করেছে ৩ কোটি ২৩ লক্ষ ৪২ হাজার ৭শ টাকা। চলতি এপ্রিল মাসেও জরিমানা, মামলা অব্যাহত আছে। তাছাড়াও চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ পুলিশের মামলা ও জরিমানা অব্যাহত আছে।

চলতি বছরে বেশ কিছু তাজা প্রাণ সড়ক দুর্ঘটনায় হারানোর পর জোরালো হয় পরিবহন সেক্টরে এই প্রাণঘাতী নৈরাজ্য বন্ধের দাবি। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা স্বীকার করছেন এই অনিয়ম আর বিশৃঙ্খলার কথা। তাই সমন্বিতভাবে এ খাতে শৃঙ্খলা ফেরানোর তাগিদ তাদেরও। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোসহ লাশের দীর্ঘ মিছিল থামাতে সম্প্রতি ছাত্রদের আন্দোলনের প্রতি সম্মান দেখিয়ে পরিবহন আইন করেছে সরকার। বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট সংস্থার নানামুখী তৎপরতা, পরিবহন আইন পাশের পরও সড়কে থামছে না হতাহতের সংখ্যা।

সর্বশেষ গতকাল শনিবার সকালে কর্ণফুলী থানাধীন শিকলবাহা কলেজ বাজার এলাকায় স্কুল ছাত্রী আহত হওয়ার ঘটনায় প্রায় সাড়ে তিনঘণ্টা চট্টগ্রাম-কঙবাজার মহাসড়কের এক অংশ অবরোধ ছিল। দুর্ঘটনার পরপর স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা আহত সহপাঠীর সুচিকিৎসাসহ স্পিড ব্রেকার নির্মাণ, জেব্রা ক্রসিং, ফুট ওভার ব্রিজ নির্মাণের দাবিতে সোচ্চার হয়। স্থানীয় প্রশাসন ছাত্র-ছাত্রীদের দাবি মেনে নিয়ে ৪টি স্পিড ব্রেকার নির্মাণ করেন পাশাপাশি অন্যান্য দাবি শীঘ্রই বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মহাসড়কের যাত্রীদের বিক্ষোভ ও অবরোধ থেকে মুক্তি দেন। এর আগে গত শুক্রবার মিরসরাই উপজেলার বারইয়ার হাটে গাড়ি চাপায় আনোয়ারা বেগম (৮১) নামে এক বৃদ্ধা নিহত হয়।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন চিকিৎসা কেন্দ্রের মতে চট্টগ্রামে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। কারণ সড়ক দুর্ঘটনার সব খবর সংবাদমাধ্যমে কিংবা পুলিশের নজরে যায় না। ভয়াবহ দুর্ঘটনাগুলো কেবল খবর হয় এবং পুলিশের মামলায় আসে। তারা জানান, প্রতিদিনেই সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি তো ঘটছেই, তদুপরি বহু মানুষ পঙ্গুত্ববরণ করছে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারশনের (আঞ্চলিক কমিটি) সভাপতি মোহাম্মদু মূছা বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে মালিক, শ্রমিক ও যাত্রী সবাইকে সচেতন হতে হবে। বর্তমানে যে হারে মোটর সাইকেল ও তিন চাকার অটোরিঙার অপ্রতিরোধ্য চলাচল, সেটাকে নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনতে হবে। শুধু চালক কিংবা গাড়ি শ্রমিকদের উপর দোষ চাপিয়ে, শাস্তি দিয়ে সমস্যার সমাধান হবে না। স্ব স্ব ক্ষেত্রে সবাইকে সচেতন হতে হবে। তাহলে হয়তো সড়ক দুর্ঘটনা রোধ সম্ভব।

নিরাপদ সড়ক চাই (নিসাচ) চট্টগ্রাম মহনগরীর সাধারণ সম্পাদক শফিক আহমেদ সজীব বলেন, নগরী এবং নগরীর বাইরে মহাসড়কে অনকাঙ্খিতভাবে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে। যাত্রী, চালক এবং পথচারী এই তিনটা হচ্ছে ট্রাফিক ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ স্টক হোল্ডার। এই তিন শ্রেণী যতদিন সচেতন হবে না ততদিন সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধ করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ পরিষদের মহাসচিব লুৎফুল আজম বলেন, সড়কে বেপরোয়া গতি নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা আনার কোন চেষ্টা দেখিনা। ফলে প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি বাড়ছে।

বিআরটিএ চট্টগ্রাম সার্কেলের উপপরিচালক মো. শহীদুল্লাহ্‌  বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ৩জন নিবার্হী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ৩টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা কার্যক্রম চলছে। সরকারের সব সংস্থা চালক, যাত্রী ও পথচারীরাসহ সবাই একযোগে সচেতনভাবে কাজ করলে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। সড়কে শৃঙ্খলা না ফেরা পর্যন্ত কোন ছাড় নেই বলে জানান তিনি। চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) কুসুম দেওয়ান দৈনিক আজাদী বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা বা গাড়ি চাপা দিয়ে হত্যার ঘটনায় এখন সরাসরি হত্যা মামলা হচ্ছে। সহজেই আসামীরা পার পেয়ে যাওয়ার দিন শেষ। পাশাপাশি পথচারীকে রাস্তার নিয়ম কানুন মেনে চলতে হবে। জনসাধারণ যদি সতর্কভাবে চলাচল করে এবং চালকরা যদি যানবাহন চালনায় সতর্কতা অবলম্বন করে তাহলে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব। পাঠ্য বইয়ে ট্রাফিক আইন কানুন নিয়ে কোনো অধ্যায় থাকলে শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো হতো।

অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, চালকের পাশাপাশি পথচারী এবং যাত্রীরাও আইনের আওতায় থাকলে সড়ক দুর্ঘটনা কমত। উদাহরণ দিয়ে বলেন অনেক সময় যাত্রীরা চালককে গাড়ি দ্রুত চালাতে উৎসাহ জোগায়। অন্যদিকে পথচারীরা অনেক সময় নিয়ম বহির্ভুতভাবে চলাফেরা করে এমনকি মোবাইলে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হয়। আইনে না থাকায় এতে আমরা কিছু করতে পারি না। সব মিলে সবার সর্তকতাটাই জরুরি বলে মনে করেন তিনি।

সূত্র : দৈনিক আজাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!