ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | চট্টগ্রামের প্রভাবশালী জুয়াড়িরা আত্মগোপনে

চট্টগ্রামের প্রভাবশালী জুয়াড়িরা আত্মগোপনে

529

নিউজ ডেক্স : পুলিশের তালিকায় নগরীতে জুয়ার আসর মাত্র ৩২টি! বাস্তবে এ সংখ্যা দুই শতাধিক। এসব জুয়ার আসরে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা লেনদেন হচ্ছে। জুয়ার পাশাপাশি এখানে চলে অশ্লীল নৃত্য, মাদক সেবন এবং পতিতাবৃত্তিও। এই অবৈধ কাজ অনেকের নেশা থেকে পেশায় পরিণত হয়েছে। জুয়া খেলে অনেকে ফতুর হয়ে যাওয়ার অসংখ্য নজির রয়েছে।

অনেক সময় দেখা যায়, জুয়ার আসরে হাজির হয় স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের লোকজন। জুয়ার কারণে পরিবারগুলোর মধ্যে অশান্তি ও বিচ্ছেদের অসংখ্য ঘটনা ঘটছে। তবে ঢাকায় ক্যাসিনোতে অভিযান এবং একের পর এক প্রভাবশালীদের গ্রেফতারের ঘটনায় চট্টগ্রামের প্রভাবশালী জুয়াড়িরা গা ঢাকা দিয়েছে। নগরের বিভিন্ন ক্লাব ও বারে অভিযান শুরুর আতঙ্ক থেকে নগর জুড়ে দাবড়ে বেড়ানো জুয়াড়িদের দেখা মিলছে না। নগরীর অতি প্রভাবশালী মানুষদের ধারে কাছে থাকা এসব জুয়াড়িদের অনেকেই গতকাল আর প্রভাবশালীদের ধারে কাছে দেখা যায়নি।

এছাড়া পুলিশের পক্ষ থেকে সকল ধরনের জুয়া বন্ধ করার নির্দেশনা আসলে সে ভয় আরও পোক্ত হয়। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার মো: মাহবুবর রহমান বলেন, নগরীতে সকল জুয়ার আসর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এরপরও যদি কেউ চালানোর চেষ্টা করে তবে তারা যতোই প্রভাবশালী হোক না কেন তাদের গ্রেফতারে আমাদের সর্বাত্মক প্রস্তুতি আছে।

জানা যায়, সিএমপির তালিকামতে, নগরীর কোতোয়ালী থানা এলাকায় একটি, সদরঘাট থানায় তিনটি, চান্দগাঁও থানায় তিনটি, বায়েজিদ বোস্তামী থানা এলাকায় একটি, ডবলমুরিংয়ে একটি, হালিশহরে সাতটি, পাহাড়তলীতে চারটি, পতেঙ্গায় দুটি, কর্ণফুলীতে একটি, ইপিজেডে ছয়টি ও বন্দরে তিনটি জুয়ার আসরের কথা উল্লেখ আছে। তবে বাস্তবতা হলো, চট্টগ্রামে অনেক ক্লাব রয়েছে যারা প্রতিদিন জুয়ার বোর্ড থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করে থাকে। প্রতিষ্ঠিত ক্লাব ছাড়াও নগরীর কয়েকটি অভিজাত এলাকায় বিভিন্ন বাসাবাড়ি কিংবা অফিসের নির্দিষ্ট কক্ষে জুয়ার আসর বসে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের জ্ঞাতসারেই প্রতিটি জুয়ার আসর বসে থাকে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

অনুসন্ধানে জানা গেছে সিএমপি কমিশনার যোগ দেওয়ার পর থেকেই জুয়া, মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। এরপরও কিছু অসাধু পুলিশ সদস্য, প্রভাবশারী রাজনৈতিক নেতা কর্মী, স্থানীয় সন্ত্রাসীদের আশীর্বাদে নগর জুড়ে চলছিল জুয়ার রমরমা আসর। জুয়ার আসর বসার অভিযোগ উঠা অন্যতম ক্লাবগুলোর মধ্যে রয়েছে- আবাহনী, মোহামেডান, মুক্তিযোদ্ধা ক্লাব, ওয়াজিউল্লাহ ইনস্টিটিউট, ফ্রেন্ডস ক্লাব ও আকবর শাহ অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক ক্লাব।
হালিশহরের জে ব্লকের আবাহনী ক্লাবটিতে চট্টগ্রামের প্রভাবশালী এক যুবলীগ নেতার মদদ রয়েছে। এ ক্লাবের জুয়ার আসরের লেনদেন কোনো দিন কোটি টাকা পর্যন্ত ছাড়িয়ে যায় বলে জানা গেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে ক্লাবটির ভেতরে তিন-চারটি কক্ষে থাকা জুয়ার আখড়াগুলো বন্ধ করে দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়।

নগরীর একে খান মোড় এলাকায় একটি ভবনের তিনতলা ও চারতলা ভাড়া নিয়ে অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক ক্লাব নাম দিয়ে জুয়ার আসর বসানো হয়েছে। প্রতিদিন শতাধিক লোক সেখানে জুয়া খেলে ও মাদক গ্রহণ করে। বায়েজিদের আমিন কলোনি এলাকার আশপাশে অন্তত ছয়টি স্থানে জুয়ার আসর বসে। আমিন কলোনি বেলতলা এলাকা, আমিন কলোনির মাঠ এলাকা, টেঙটাইল জিএম বাংলো পাহাড়ের উপর, রউফাবাদ রেলক্রসিং এলাকা, স্টারশিপ গলি,শান্তিনগর কলোনিতে জুয়ার আসর বসে বলেও স্থানীয়রা তথ্য দিয়েছেন।

বাকলিয়া থানা এলাকার শাহ আমানত সেতু এলাকা ঘিরে রয়েছে ১২টি জুয়ার আসর। এরমধ্যে চাক্তাই সি-বিচ কলোনির জুয়ার আসর অন্যতম। এছাড়া কর্ণফুলীর তীরে সীমার বাপ নামে পরিচিত খোরশেদ আলম, আবদুর রহমান ও কায়সারের মালিকানাধীন জুয়ার আসর রয়েছে। এছাড়া চাক্তাই চামড়ার গুদাম এলাকায় রয়েছে মমিন ও মামুনের জুয়ার আসর।

কোতয়ালী থানাধীন জলসা মার্কেটের ষষ্ঠ তলায়, গোয়ালপাড়া এলাকায়, আলকরণে সিলকন হোটেল গলিতে, কাজির দেউড়ি এলাকায়, স্টেশন রোডের ফলমন্ডি এলাকায় রেলওয়ে মেন্স সেন্টার, পলোগ্রাউন্ড মেলা কমিউনিটি সেন্টার, এনায়েত বাজার বাটালি রোড, নন্দনকানন আরএফ পুলিশ প্লাজায় চলে জুয়ার আসর।

ডবলমুরিং থানাধীন দেওয়ানহাট ব্রিজের নিচে, আগ্রাবাদ সাউথ ল্যান্ড সেন্টার ভবনের পঞ্চম তলায়, পান্না পাড়ায়, মনসুরাবাদ মাঠের সামনে, ভেলোয়ার দীঘির পাড়ে, ঝর্ণাপাড়া, হাজী পাড়ায়, পাঠানটুলী জুয়ার আসর বসে। এছাড়াও সদরঘাট রোডে হোটেল শাহজাহান, চকবাজার আলিফ প্লাজা, চান্দগাঁও আবাসিক এ ব্লকে দৃষ্টি ভবন, শমসের পাড়া জানু মিস্ত্রির বাড়ি, বহদ্দারহাট মদিনা হোটেলের পাশের বিল্ডিং, খুলশী ৪ নম্বর, মেহেদীবাগ ন্যাশনাল হাসপাতাল সংলগ্ন গলি, ডিসি রোড খালপাড়ে চলে জুয়ার আসর।

আইন কী বলে?
জুয়া এ দেশে নিষিদ্ধ। ১৮৬৭ সালে প্রণীত বঙ্গীয় প্রকাশ্য জুয়া আইন বাংলাদেশে এখনো প্রযোজ্য। সেই আইন অনুযায়ী, যেকোনো ঘর, স্থান বা তাঁবু জুয়ার আসর হিসেবে ব্যবহৃত হলে তাঁর মালিক বা রক্ষণাবেক্ষণকারী, জুয়ার ব্যবস্থাপক বা এতে কোনো সাহায্যকারী তিন মাসের কারাদন্ড বা অনূর্ধ্ব ২০০ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হতে পারেন। এ রকম কোনো ঘরে তাস, পাশা, কাউন্টার বা যেকোনো সরঞ্জামসহ কোনো ব্যক্তিকে ক্রীড়ারত (জুয়ারত) বা উপস্থিত দেখতে পাওয়া গেলে তিনি এক মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা ১০০ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। পুলিশ জুয়ার সামগ্রীর খোঁজে যেকোনো সময় (বলপ্রয়োগ করে হলেও) তল্লাশি চালাতে পারবে বলেও আইনে উল্লেখ রয়েছে। তা ছাড়া বঙ্গবন্ধু রেসকোর্স ময়দানকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘোষণা করার সময়েই এ দেশে সব রকমের রেস জুয়া বন্ধের কথা বলেছিলেন। -আজাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!