ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | কোটা আন্দোলনের নেতাকে ছাত্রলীগের মারধর

কোটা আন্দোলনের নেতাকে ছাত্রলীগের মারধর

image-86902

নিউজ ডেক্স : সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করতে আসা আন্দোলনকারী সংগঠনের এক নেতাকে পিটিয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুর গুরুতর আহত হয়েছেন।

নুরসহ আহত হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন। তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে নুরের অবস্থা গুরুতর বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের সামনে এই মারধরের ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করা শিক্ষার্থীরা পালিয়ে গেলেও ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

সরকারি চাকরিতে কোটা থাকবে না বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণার পর আন্দোলনকারীরা দ্রুত প্রজ্ঞাপনের দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন। গত ২৭ জুন প্রধানমন্ত্রী সংসদে আবার জানান, কোটা থাকবে না। তবে এতদিন ধরে চলে আসা পদ্ধতি কীভাবে বাতিল করা যায়, সে জন্য একটি কমিটি কাজ করছে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে। তাদের প্রতিবেদন আসার পরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

তবে কোটা আন্দোলনকারীরা কয়েক দিন ধরেই সামাজিক মাধ্যমে শিক্ষার্থীদেরকে আবার আন্দোলনে নামার আহ্বান জানাচ্ছিলেন। আন্দোলনকারী নেতা রাশেদ খাঁন সম্প্রতি ঢাকার বাইরে থাকা শিক্ষার্থীদেরকে দ্রুত ঢাকায় ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন।

সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে কর্মসূচি ঘোষণার কথা ছিল আন্দোলনকারীদের।

অন্যদিকে সকাল ১০টায় মধুর ক্যান্টিনের সামনে কর্মসূচি ছিল ছাত্রলীগের। সেখান থেকে তারা কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এসে বাধা দিতে থাকে কোটা আন্দোলনকারীদের।

এ সময় পিটুনিতে কোটা আন্দোলনের নেতা নুরুল হক নুর, মশিউর রহমান, জালাল, রাসেল রানাসহ অনেকে আহত হন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বেলা পৌনে ১১টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করতে আসেন কোটা নিয়ে আন্দোলনকারী সংগঠনের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন, যুগ্ন আহ্বায়ক নুর হোসেন নূরসহ আরও কয়েকজন।

এ সময় নুর হোসেন নুরের শার্ট টেনে ধরে গ্রন্থাগারে ঢুকান ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মেহেদী হাসান রনি। এ সময় ছাত্রলীগের স্কুল ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক জয়নুল আবেদীন তাকে পেটাতে শুরু করে। তার সঙ্গে থাকা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীও তখন তাকে লাথি, ঘুষি চড়, থাপ্পর দিতে থাকে। এক পর্যায় নুর মাটিতে পরে গেলে শোয়া অবস্থায় তাকে লাথি মারা হতে থাকে। পরে তাকে গ্রন্থাগারের বাইরে টেনে নিয়ে এসে মারধর চলতে থাকে।

বেলা ১১টার কিছু পরে গ্রন্থাগারের প্রধান অধ্যাপক এস এম জাবেদ আহমেদ এগিয়ে এসে নুরকে রক্ষা করার চেষ্টা করেন। এ সময় তাকেও লাঞ্ছিত করা হয়। পরে এই অধ্যাপকের সহযোগিতায় নুরকে গ্রন্থাগারের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়।

জানতে চাইলে কোটা সংস্কারে আন্দোলন করা সংগঠনের যুগ্ন-আহ্বায়ক রাশেদ খাঁন বলেন, ছাত্রলীগ অনেকের উপর হামলা করা হয়েছে। নুরের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ কোটা ছিল। ছিল ৪০ শতাংশ জেলা ও ক্ষতিগ্রস্ত নারী কোটা ১০ শতাংশ। পরে যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের বদলে সব নারীর জন্য এবং জেলা কোটা কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। সংযোজন হয় পাঁচ শতাংশ ক্ষুদ্র ‍নৃগোষ্ঠীর কোটা এবং এক শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা।

নানা সময় মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে। তবে এবার কোনো বিশেষ কোটার কথা না বলে কোটা সংস্কারের দাবি নিয়ে মাঠে নামে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ নামে একটি সংগঠন। তারা সব মিলিয়ে কোটা ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানতে থাকে।

গত ৮ এপ্রিল রাজধানী শাহবাগ এবং পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের পর আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। আর ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে ঘোষণা দেন, কোনো কোটাই থাকবে না।

এরপর থেকে কোটা আন্দোলনকারীরা নানা সময় কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপনের দাবি জানিয়ে আসছে।

কয়েকটি দেশ সফর শেষে দেশে ফিরে প্রধানমন্ত্রী ২ মে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তিনি কোটা বাতিলের বিষয়ে যে কথা বলেছেন, সেটা পাল্টাবেন না।

সবশেষ গত ২৭ জুন জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোটা বাতিলের বিষয়ে তিনি যে ঘোষণা দিয়েছেন, সেটা পাল্টাবে না। তবে এত বছর ধরে চলে আসা কোটা পদ্ধতি কীভাবে বাতিল করা যায় সে বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি কাজ করছে। তারা প্রতিবেদন দিলেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!