Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | ওভারব্রিজের উচ্চতা নিয়ে রেলওয়ের আপত্তি, ৩ বছরেও হয়নি সমাধান 

ওভারব্রিজের উচ্চতা নিয়ে রেলওয়ের আপত্তি, ৩ বছরেও হয়নি সমাধান 

নিউজ ডেক্স : তিন বছর আগে রেলওয়ের পরামর্শে সাড়ে সাত মিটার উচ্চতায় ওভারব্রিজ বসানোর প্রক্রিয়া শুরু করে সিডিএ। কিন্তু হঠাৎ বিগড়ে বসে রেলওয়ে।সাড়ে সাত মিটার নয়, সাড়ে আট মিটার উচ্চতায় হবে ওভারব্রিজ। কিন্তু ততক্ষণে হয়ে গেছে অনেক দেরি। উঠে গেছে পিলার, বানানো শেষ গার্ডারও।  

এমন চিত্র বায়েজিদ লিংক রোডের ফৌজদারহাট এলাকায় রেললাইনের ওপর নির্মাণাধীন ওভারব্রিজের। রেল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন বিপদে ফেলেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (সিডিএ)। তিন বছর পেরিয়ে গেলেও এখন আসেনি সমাধান। ফলে বন্ধ রয়েছে কাজ। সিডিএ’র দাবি, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের অদক্ষতার মাশুল দিতে হচ্ছে তাদের। তবে এ নিয়ে এখনই কোনো মন্তব্য করতে রাজি নয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।  

সিডিএ সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৭ সালে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬ দশমিক ৪ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের কাজ হাতে নেয়। ওই সময় দুই লেইনের একটি ওভারব্রিজ নির্মাণ হলেও পুরোপুরি কাজ শেষ হওয়ার আগেই বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে নতুন পরিকল্পনার আওতায় ২০১৬ সালে প্রায় ৩২০ কোটি টাকা ব্যয়ে বায়েজিদ সংযোগ সড়কটি চার লেনে উন্নীত করা হয়। এর মধ্যে ২০২০ সাল নাগাদ প্রকল্পের চার লেইনের কাজ শেষ হলেও রেললাইনের নতুন ওভারব্রিজের কাজ শেষ না হওয়ায় যান চলাচলে ফিরছে না গতি। সিডিএ রেললাইনের ওপর ব্রিজ নির্মাণে ৭ দশমিক ৫ মিটার উচ্চতার পিলার নির্মাণ করে। কিন্তু রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ভবিষ্যতে ডাবল কনটেইনার ট্রেনের পরিকল্পনা সাজাতে গিয়ে নতুন করে ওভারব্রিজের উচ্চতা ৮ দশমিক ৫ মিটার নির্ধারণ করে দেয়। এতে বিপত্তি বাধে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়া নিয়ে। তিন বছরেও উচ্চতা নিয়ে কোনো সমাধান না পেয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকের পাশপাশি মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে নালিশ করে এসেছেন সিডিএর কর্মকর্তারা।  

সরেজমিন দেখা যায়, বায়েজিদ লিংক রোডের ফৌজদারহাট এলাকায় তিনটি রেললাইন চলে গেছে। এর একটি চট্টগ্রাম বন্দরের সিজিপিওয়াই ইয়ার্ডে (বন্দরের সঙ্গে যুক্ত রেললাইন) এবং অপর দুটি ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের। এই তিনটি রেললাইনের ওপর ওভারব্রিজ নির্মাণের জন্য ৪, ৫, ৬ ও ৭ নম্বর পিলার নির্মাণ শেষ। কিন্তু বসানো হয়নি কোনো গার্ডার।  

সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ২০১৭ সালে আমরা এ প্রজেক্ট চালু করেছি। এর আগের বছর এ উচ্চতা ছিল সাড়ে ছয় মিটার। ২০১৮ সালে এটির উচ্চতা সাড়ে সাত মিটার হয়েছে। সাড়ে সাত মিটার ধরে নিয়ে আমরা দুপাশের কাজ করে এসেছি। অথচ ২০২০ সালে ডাবল কনটেইনার ট্রেনের জন্য তারা (রেলওয়ে) আবারও এক মিটার বাড়িয়ে সাড়ে আট মিটারে উচ্চতা করেছে। হঠাৎ করে আমরা উচ্চতা বাড়াতে পারবো না। ২০ থেকে ২৫ বছর আগে ইউরোপ-আমেরিকায় ডাবল ট্র্যাকের ট্রেন রয়েছে। অযোগ্য, অদক্ষতার কারণেই তারা প্রতি বছর একেক রকম উচ্চতা বাড়াচ্ছে। কেবল এখানেই নয়, রেলওয়ের এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে গেলে দেশের ৯৯ শতাংশ ব্রিজ ভেঙে ফেলতে হবে। এসব কাজের অনুমোদন না দিলে ডিসেম্বরে টানেল যুক্ত হওয়ায় পর যানজটে ম্যাচাকার একটা অবস্থা হবে।  

বাংলাদেশ রেলওয়ের অ্যাডিন্যান্স অনুযায়ী, মিটারগেজ রেললাইন দিয়ে একটি কনটেইনার নিয়ে যেতে তিন দশমিক ৮ মিটার এবং ব্রডগেজের জন্য ৪ দশমিক ৮ মিটার উচ্চতা প্রয়োজন হয়। তবে সময়ে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তারা কখনও সাত দশমিক দুই মিটার, কখনও সাত দশমিক পাঁচ মিটার উচ্চতা নির্ধারণ করেছেন। সর্বশেষ ডাবল কনটেইনার ট্রেনের পরিকল্পনা সাজাতে গিয়ে ওভারব্রিজের ক্ষেত্রে ৮ দশমিক ৫ মিটার উচ্চতা নির্ধারণ করেছে। এক্ষেত্রে কোনো ওভারব্রিজ নির্মাণ করতে গেলে রেললাইনের ওপর অংশে এ পরিমাণে উচ্চতা রেখেই কাজ করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফর মিয়া বলেন, রেললাইনের ওপর ওভারব্রিজ নির্মাণে উচ্চতার নিয়মটি অনেক আগের। নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে রেললাইন চলাচল নিশ্চিতের লক্ষ্যে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উচ্চতা নির্ধারণ করা হয়েছে। আমি নতুন যোগদান করেছি। তাদের (সিডিএ) পক্ষ থেকে আমাদের এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। তবে নিয়ম অনুসারে উচ্চতা কম হওয়ার কারণে হয়তো অনুমোদন দেওয়া হয়নি।  
 
তবে রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, রেললাইনের ওপর ওভার ব্রিজের নির্মাণে সিডিএ ও রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছে। চুক্তিতে চলতি প্রকল্পটি বিদ্যামান অবস্থায় শেষ করার বিষয়ে সিডিএর পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে রেলওয়ে কোনো প্রজেক্ট হাতে নেওয়া হলে পরবর্তীতে নিয়ম অনুযায়ী দু বছর আগে ওভার ব্রিজটি ভেঙ্গে ফেলা হবে।  

চুক্তির বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস আরও বলেন, দুই পক্ষের সমন্বয়ে একটি কমিটি বর্তমান অবস্থাতেই ওভারব্রিজ নির্মাণের বিষয়ে সুপারিশ করেছে। চট্টগ্রামের উন্নয়ন হলে যে দেশের উন্নয়ন হবে এটি অনেকে বুঝতে পারছেন না। আমরা বাধ্য হয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে জানিয়েছি। সর্বশেষ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছি। ওই চিঠি অনুমোদনের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে যাবে। এরপর চিঠিটি রেলমন্ত্রণালয়ে যাবে। আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে সুপারিশ করেছে। চুক্তিটি রেলমন্ত্রীর অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। -বাংলানিউজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!