ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | এনার্জি ড্রিংক আমদানি ও বাজারজাত বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসটিআই

এনার্জি ড্রিংক আমদানি ও বাজারজাত বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসটিআই

banned-20180925170423

নিউজ ডেক্স : দেশের বাজারে এনার্জি ড্রিংকের উৎপাদন, আমদানি ও বাজারজাত বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)। বাজারে বিক্রীত এনার্জি ড্রিংকে মাত্রাতিরিক্ত ক্যাফেইন থাকায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

গত ২৯ জুলাই বিএসটিআইয়ের সভায় ‘এনার্জি ড্রিংক’ শিরোনামে জাতীয় মান প্রণয়ন না করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবং কার্বোনেটেড বেভারেজ ব্যতীত ‘এনার্জি ড্রিংক’ বা অন্য কোনো নামে পণ্য উৎপাদন, আমদানি ও বাজারজাতের কোনো সুযোগ নেই মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

বিএসটিআইয়ের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও পরিচালক (সাবেক) আইএফএসটি, বিসিএসআইআর ও সফট ড্রিংক অ্যান্ড বেভারেজ শাখা কমিটির সভাপতি ড. মো. জহুরুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

সভায় উপস্থিত এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, বাজারে বিক্রীত সফট ড্রিংকের ক্যাফেইনের মাত্রা প্রতি কেজিতে ১৪৫ এমজি থাকলেও এনার্জি ড্রিংকে এ মাত্রা প্রতি কেজিতে ৩২০ এমজির বেশি পাওয়া গেছে।

energy-drink1-20180925173605

এনার্জি ড্রিংকের নামে নেশাজাতীয় পানীয় বন্ধে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।

প্রসঙ্গত, রাজধানীসহ সারাদেশে মাত্রাতিরিক্ত ক্যাফেইনমিশ্রিত বিভিন্ন ধরনের এনার্জি ড্রিংক অবাধে বিক্রি হচ্ছে। গত বছর খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ বাজার থেকে সাতটি কোম্পানির উৎপাদিত এনার্জি ড্রিংক সংগ্রহ করে রাজধানীর তিনটি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার জন্য পাঠায়।

energy-drink2-20180925173623

সূত্র জানায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) এর নিয়মানুসারে যে কোনো পানীয়তে ক্যাফেইনের মাত্রা ২০০ পর্যন্ত স্বাভাবিক বলে ধরা হয়। কিন্তু দেশের তিন ল্যাবরেটরির পরীক্ষাতেই ওই সাতটি এনার্জি ড্রিংকে ক্যাফেইনের মাত্রা ৭০০ এর কাছাকাছি পাওয়া গেছে।

জাতীয় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে জানান, ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় সাতটি ড্রিংকসে তিনগুণের বেশি ক্যাফেইনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। তবে কোম্পানিগুলোর নাম প্রকাশ করতে তিনি রাজি হননি।

ওই কর্মকর্তা জানান, উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বেপরোয়া বাজারজাতকরণের নীতি ও সুকৌশলে নির্মিত বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপনে প্রলুব্ধ হয়ে শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষ স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এসব পানীয় পান করছে।

তিনি আরও জানান, গ্রাম-গঞ্জের ছোট টং দোকান ও হাট-বাজার থেকে শুরু করে শহরের বড় বড় শপিং মল ও ফুড কোর্টে অন্যান্য কোমল পানীয়ের চেয়ে অতিরিক্ত ক্যাফেইন মিশ্রিত এনার্জি ড্রিংক বিক্রি দিনদিন বাড়ছে। সম্প্রতি জন্মদিনের অনুষ্ঠানেও এনার্জি ড্রিংক খাওয়ানোর নতুন ধারা চালু হয়েছে। এছাড়া গ্রামেগঞ্জে শিশুদের মধ্যেও এসব ড্রিংকের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে।

energy-drink3-20180925173643

বাংলাদেশ জাতীয় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য ও অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবির মিলন এ প্রসঙ্গে  বলেন, বাজারে বিভিন্ন নামে যে এনার্জি ড্রিংক আছে সেগুলো ‘এনার্জি ডিংক’ নামে বিক্রি করা যাবে না। বিক্রি করতে হলে অন্য নামে কিংবা সফট ড্রিংকের রেসিপি বা উপাদান দিয়ে বানাতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘সফট ড্রিংকে যে পরিমাণ ক্যাফেইন থাকার কথা তা রাখতে হবে। প্রতি কেজিতে ১৪৫ এমজির বেশি ক্যাফেইন মেশানো যাবে না। কোনো ধরনের উত্তেজক উপাদানও মেশানো যাবে না।’

বিভিন্ন স্বাস্থ্য সাময়িকীতে উল্লেখ করা হয়েছে, অতিরিক্ত ক্যাফেইন লিভারে চর্বি জমে। হৃদপিণ্ডের রক্ত সরবরাহকারী ধমনীতে রক্ত চলাচল ধীর করে দেয়। এছাড়া বুক ধরফরানি, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, উচ্চরক্তচাপ, ঘুমের ব্যঘাত, শরীরে অ্যাড্রেনালিন নামক হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি করে টানটান উত্তেজনা বৃদ্ধি ও কর্মক্ষমতা হ্রাস করে।

দিনের পর দিন অতিরিক্ত ক্যাফেইন শরীরে প্রবেশের ফলে অসুখ সারাতে ব্যবহৃত ওষুধও কাজ করে না বলে স্বাস্থ্য সাময়িকী থেকে জানা যায়।

মাত্রাতিরিক্ত ক্যাফেইনমিশ্রিত বিভিন্ন ধরনের এনার্জি ড্রিংক নেশার জগতে নীরব সংযোজন বলেও অনেক সমাজবিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞ মনে করছেন। তাদের মতে, বিভিন্ন নেশাজাতদ্রব্য মাদকাসক্তরা গোপনে সেবন করলেও এনার্জি ড্রিংকের আসক্তি বাড়ছে প্রকাশ্যেই।

অত্যাধিক স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকায় গত ৩০ অক্টোবর ১৮ বছরের কম বয়সী শিশুদের কাছে এনার্জি ড্রিংক বিক্রি নিষিদ্ধের পরিকল্পনা করে যুক্তরাজ্য সরকার।

সূত্র : জাগো নিউজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!