ব্রেকিং নিউজ
Home | উন্মুক্ত পাতা | অরণ্যে হেরার জ্যোতি, বায়তুশ শরফের অমরর্কীতি

অরণ্যে হেরার জ্যোতি, বায়তুশ শরফের অমরর্কীতি

ড. মুহাম্মদ ওয়ালী উল্লাহ মঈন : আধ্যাত্মিক, দ্বীনি, জাগতিক জ্ঞানার্জন এবং ইসলামী গবেষণার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে বায়তুশ শরফ একটি পরিচিত নাম।

ইসলামী সংস্কৃতি, সাহিত্য ও মননশীলতা অনুশীলনের এক অন্যন্য প্রতিষ্ঠান। মসজিদভিত্তিক শিক্ষা, ত্বরিকত চর্চা, সমাজসেবা, চিকিৎসা, এতিম প্রতিপালন ও কর্মসংস্থান সৃজনের পথিকৃৎ। বায়তুশ শরফের প্রাণ প্রতিষ্ঠাতা কুতবুল
আলম, সুলতানুল আউলিয়া শাহসূফী মীর মুহাম্মদ আখতার সাহেব (রহঃ, মৃত্যু ৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭১) এর মৃত্যুর পর
কঠোর সাধনা ও প্রচেষ্টার মাধ্যমে বায়তুশ শরফকে একটি আন্তর্জাতিক মানের মডেল ইসলামী গবেষণা, আধ্যাত্মিক ও দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রূপ দেন হাদিয়ে যমান, শায়খুল হাদীস আল্লামা শাহ মুহাম্মদ আবদুল জব্বার সাহেব (রহঃ,
মৃত্যু ২৫ মার্চ, ১৯৯৮)। পরবর্তীতে বাহরুল উলুম শাহ মাওলানা মোহাম্মদ কুতুবদ্দিন (রহঃ, মৃ. ২০ মে, ২০২০)
বায়তুশ শরফের পৃষ্ঠপোষকতা করেন। বর্তমানে বাহবারে বায়তুশ শরফ, বিশিষ্ট গবেষক, লেখক, অনুবাদক ও
প্রাবন্ধিক আল্লামা শায়খ মুহাম্মদ আবদুল হাই নদভী সাহেব (বারাঃ ফিঃ হায়াঃ)-এর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে হযরত
হুজুর কেবলা (রহ.) কর্তৃক সূচিত সামগ্রিক কর্মসূচী অগ্রসরমান।

দরবারে বায়তুশ শরফের ব্যতিক্রমধর্মী কর্মসূচীর মধ্যে অন্যতম হলো ত্বরিকতের সফরে শরঈ বিধানাবলীর প্রশিক্ষণ ও তাযকিয়াতুন নাফসের যথাযথ দিক-নির্দেশনা প্রদান করা। তাছাড়া ত্বরিকতের প্রশিক্ষণ ও দ্বীনের প্রচার-প্রসারে যমীনে ভ্রমণ করা আল্লাহর অলি ও দায়ীগণের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনুল করীমে সৃষ্টি জগতের নিদর্শনসমূহ অবলোকন, সৃষ্টি রহস্য নিয়ে গবেষণা, শিক্ষা ও মিথ্যাবাদীদের পরিণতি স্বচক্ষে দেখে ইবরত হাসিল (উপদেশমূলক শিক্ষা অর্জন) করার জন্য যমীনে ভ্রমণ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন: “তারা কি দেশ ভ্রমণ করেনি? তাহলে তারা জ্ঞানবুদ্ধিসম্পন্ন হৃদয় ও শ্রুতিশক্তিসম্পন্ন শ্রবণের অধিকারী হতে পারতো। বস্তুত চক্ষুতো অন্ধ নয়, বরং অন্ধ হচ্ছে বক্ষস্থিত হৃদয়”। (সূরা হজ্ব, আয়াত-৪৬)

আল্লাহ তাআলা তাহাজ্জুদের সালাত আদায়, ইবাদত ও যিক্র, আল্লাহর অনুগ্রহ- দয়া অনুসন্ধানে যমীনে ভ্রমণ ও ক্ষমা প্রার্থনার কথা কুরআনে উল্লেখ করেছেন (দ্র: সূরা মুযযাম্মিল, আয়াত-২০)। দ্বীনের দাওয়াত ও আত্মশুদ্ধিমূলক
কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আল্লাহর রাসূল ও আম্বিয়ায়ে কিরাম(আ:) তাঁদের সাথীগণসহ যমীনে ভ্রমণ করেছেন।
চোখের দৃষ্টি দিয়ে দুনিয়ার বাহ্যিক চাকচিক্য অবলোকন করা যায় কিন্তু অন্তরের দৃষ্টি দিয়ে আল্লাহর সৃষ্টির গুঢ় রহস্য ও অভ্যন্তরীণ বিষয়াদি দেখা সম্ভব, যদি বান্দা তাঁর ক্বলবকে যথোপযুক্ত হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। শরিয়তের বিধিবিধান পালনের পাশাপাশি ত্বরিকত চর্চার মাধ্যমেই এই জ্ঞান অর্জন করা যায়।

মাহবুবে সুবহানী বড়পীর হযরত শায়খ আবদুল কাদের জিলানী (রহ.) তাসাওউফ চর্চায় হযরত মূসা (আ:) এর আদর্শ
অনুসরণের উপর গুরুত্বারোপ করেছেন। হযরত খিযির (আ:) ও হযরত মূসা (আ:) এর মধ্যে সংঘটিত ঘটনাগুলো
এক্ষেত্রে আমাদের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। হযরত খিযির (আ:) এর সাথে সফরসঙ্গী হওয়ার প্রাক্কালে তিনি হযরত
মূসা (আ:) কে ধৈর্য্য ধারণের শর্তারোপ করেছিলেন (সূরা কাহফ, আয়াত-৬৮-৬৯)। সহীহ বুখারী শরীফে হযরত মূসা
(আ:) ও হযরত খিযির (আ:) এর মধ্যকার সংঘটিত বিখ্যাত শিক্ষণীয় ও ইলমে লাদুন্নী বিষয়ক হাদীসে নবী করীম
(স:) আক্ষেপ করে বলেন, “হায়! যদি মূসা সবর করতেন, আল্লাহ আমাদের নিকট তাঁদের উভয়ের আরো অধিক
খবরাখবর বর্ণনা করতেন”(সহীহ বুখারী, কিতাবুল ইলম)। ত্বরিকত চর্চার ক্ষেত্রে ধৈর্য্যরে আদর্শ হিসেবে হযরত
আইয়ুব (আ:) এর অনুসরণের কথা হযরত বড়পীর (রহ:) উল্লেখ করেছেন। তিনি ‘‘সিয়াহাহ” (আল্লাহর ইবাদত ও
উম্মাহকে দ্বীনের দাওয়াত দেয়ার জন্য ভূ-পৃষ্ঠে পরিভ্রমণ) এর জন্য হযরত ঈসা (আ:)কে অনুসরণীয় আদর্শ হিসেবে
বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আল্লাহর প্রতি মূখাপেক্ষিতা ও তাঁর নিকট একনিষ্ঠভাবে আশ্রয় গ্রহণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে
অগ্রবর্তী হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:)।

বায়তুশ শরফের বৈশিষ্ট্যসমূহের মধ্যে একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো ত্বরিকত চর্চা ও দ্বীনের প্রচারের জন্য উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আলেমসহ সফর করা। ইলমে শরিয়ত ও ত্বরিকতের সংমিশ্রণে শিক্ষামূলক এই সফরের গুরুত্ব অত্যধিক। উক্ত সফর সবর বা ধৈর্য্যের পরিক্ষা, দ্বীনি নসিহত শ্রবণ, ইসতিগফার-তাওবা, সফর অবস্থায় দোয়া কবুলের সুবর্ণ সুযোগের সদ্ব্যবহার, আল্লাহ তাআলার সৃষ্টিজগত সম্পর্কে নতুন নতুন ধারণা, যিকর, তাহাজ্জুদ সালাত আদায়সহ নানাবিধ উপকারিতায় পরিপূর্ণ থাকে। হযরত যুলকারনাইন ভু-পৃষ্ঠে ১২(বার) বছর ভ্রমণ করার পর এক পর্যায়ে সূর্যোদয়ের স্থানে উপনীত হলেন। তাঁর এই ভ্রমণে হযরত খিযির (আ:) সহ অসংখ্য আলেম ছিলেন। (দ্র: আল্লামা ইবনু হাযর আসকালানী, আল ইসাবা ফী তাময়ীযিস সাহাবা)।

সুন্নাতে রাসূল(সা:), সাহাবায়ে কিরাম (রিদ:) ও আওলিয়ায়ে কিরামের অনুসৃত রীতি অনুসরণপূর্বক বিগত
০৪/১২/২০২১ ঈসাব্দে সকাল ১১ টা থেকে ৪(চার) দিন ব্যাপি রাহবারে বায়তুশ শরফ আল্লামা শায়খ মুহাম্মদ
আবদুল হাই নদভী সাহেবের নেতৃত্বে অর্ধ-শত আলেমসহ তিন শতাধিক সফরসঙ্গী রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ির দূর্গম
এলাকায় অবস্থিত বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্সসমূহ সফর করেন। বায়তুশ শরফের প্রধান রূপকার হাদিয়ে যমান আল্লামা শায়খ মুহাম্মদ আব্দুল জব্বার সাহেব (রহ:) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এবং পরবর্তীতে ইমামুয যাকেরীন আল্লামা মুহাম্মদ নূরুল ইসলাম (নাযেম সাহেব) রহ: (মৃত্যু ২০ মে, ২০২০) কর্তৃক প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হওয়ার পর পার্বত্য এলাকার দ্বীনি প্রতিষ্ঠানসমূহ প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়। উক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহে একসাথে তিন/চারশত জন মেহমানের থাকা-আপ্যায়নের সুব্যবস্থাপনায় আমরা অভিভূত হয়েছি।

৪ ডিসেম্বর ২০২১, রোজ শনিবার সকাল ১১ টায় বায়তুশ শরফ, ধনিয়ালা পাড়া, চট্টগ্রাম থেকে রাহবারে বায়তুশ
শরফ আল্লামা শায়খ মুহাম্মদ আবদুল হাই নদভী সাহেবের নেতৃত্বে পবিত্র মক্কা মোকাররমার জান্নাতুল মুআল্লায়
শায়িত হযরত কেবলা (রহ.) এর রূহানী তাওয়াজ্জুহ, হুজুর কেবলা (রহ:) ও বাহরুল উলুম (রহ:) এর কবর যিয়ারত
করে দোয়ার মাধ্যমে রাঙ্গামাটি অভিমূখে সফর শুরু হয়। পথিমধ্যে রাউজান বায়তুশ শরফে দুপুরের খাবার গ্রহণের
মাধ্যমে অসাধারণ আপ্যায়ন ব্যবস্থা ছিল তৃপ্তির সাথে উপভোগ্য ও মনে রাখার মতো। আছরের সালাতের পূর্বক্ষণে
রাহবারে বায়তুশ শরফ ও তাঁর সফরসঙ্গীদের নিয়ে গাড়ী বহর রাঙ্গামাটি শহরে প্রবেশ করে। আঞ্জুমানে ইত্তেহাদ ও আঞ্জুমানে নওজোয়ান, রাঙ্গামাটি শাখার নেতা-কর্মীরা শহরের প্রবেশ মুখ থেকে অত্যন্ত উষ্ণ সংবর্ধনার মাধ্যমে মোটর শোভাযাত্রা ও তাকবীর ধ্বনিতে পীর সাহেব কেবলার কাফেলাকে অভ্যর্থনা জানিয়ে রাঙ্গামাটি বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। ভরা শীতের মৌসুমে ঘূর্ণিঝড় ‘‘জাওয়াদ” এর প্রভাবে বৈরি আবহাওয়া ও গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির মাঝে বাদে মাগরিব বার্ষিক সভা ও ঈছালে সাওয়াব মাহফিলে ধর্মপ্রাণ দ্বীনদার ও আশেকানে বায়তুশ শরফের উপস্থিতি চোখে পড়ার মত। রাহবারে বায়তুশ শরফ আল্লামা শায়খ মুহাম্মদ আবদুল হাই নদভী (বারা: ফী: হায়া:) ত্বরিকত, ইসলাহ, ইখলাছ ও শানে রেসালতের উপর অত্যন্ত সারগর্ভ আলোচনা পেশ করেন।

বাংলাদেশের অনগ্রসর ও দুর্গম পাহাড়ী এলাকায় বসবাসরত সুবিধাবঞ্চিত ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মাঝে
দ্বীনের আলো বিকিরণের জন্য সুদূর প্রসারী চিন্তা চেতনা নিয়ে মুজাদ্দেদে যমান আল্লামা শাহসুফী শায়খ মুহাম্মদ
আবদুল জব্বার সাহেব (রহ:) ১১/১০/১৯৮৮ ঈসাব্দে রাঙ্গামাটি বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্স-এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন
করেন। অত্র এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ আর স্থানীয় নেতৃবৃন্দের আন্তরিকতা ও উদারতায় সহজেই পর্যাপ্ত পরিমাণ জমির ব্যবস্থা হয়ে যায়। হযরত হুজুর কেবলা (রহ:) এর ইন্তেকালের পর হযরত বাহরুল উলুম (রহ.) এর
পৃষ্ঠপোষকতায় বায়তুশ শরফের ইমামুয যাকেরীন আল্লামা মুহাম্মদ নূরুল ইসলাম (রহ:) (নাযেম সাহেব) অতিকষ্টে
অক্লান্ত পরিশ্রম করে শত প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে রাঙ্গামাটি বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্স এর পরিপূর্ণ অবয়ব তিলে
তিলে গড়ে তুলেন। মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা ও হেফজখানা নিয়ে অত্র কমপ্লেক্স এখন বিশাল অবকাঠামো ও দৃষ্টি নন্দন ভবনের সমাহারে সমাদৃত। এই এলাকার বাসিন্দাগণ হুজুর কেবলা (রহ:) এর পাশাপাশি নাযেম সাহেব (রহ:) এর কথা উচ্চারণ করতেই অশ্রুশিক্ত নয়নে বুক ভাসিয়ে আল্লাহর কাছে তাঁদের মাগফিরাতের জন্য দোয়া করেন।

৫ ডিসেম্বর ২০২১ (সফরের ২য় দিন) ঈসাব্দে সালাতুল যুহরের পর রাঙ্গামাটি বায়তুশ শরফের পার্শ্ববর্তী ট্রাক
টার্মিনালের ঘাট থেকে দু’টি যাত্রীবাহী বড় লঞ্চযোগে রাঙ্গামাটি থেকে শামিল হওয়া মেহমানসহ চারশ জন সফরসঙ্গী নিয়ে রাহবারে বায়তুশ শরফের নেতৃত্বে লংগদু উপজেলার মাইনিমুখ গাঁথাছড়া বায়তুশ শরফের বার্ষিক সভা ও ইছালে সওয়াব মাহফিলে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে কাফেলা রওয়ানা হয়। রাঙ্গামাটি সদর থেকে মাইনিমুখ এলাকার দূরত্ব প্রায় ৭৬ কিলোমিটার। কাপ্তাই লেকের অপার জলরাশির উপর দিয়ে গহীন অরণ্যের বিশাল পর্বতমালার কোল ঘেঁসে ঐ দিনের বৈরি আবহাওয়া ও বৃষ্টির রিমঝিম শব্দে ক্বলবে আল্লাহর যিকর জাগরুক রেখে কাফেলায়ে বায়তুশ শরফের যাত্রা সকলের অন্তরে দ্বীনের অন্যরকম একটি সমীরণ ও শিহরণ জাগিয়ে তোলে।

মহান রাব্বুল ইজ্জতের রহমতের উপর ভরসা করে সুলতানুল আউলিয়া, কুতবুল আলম হযরত শাহসূফী মাওলানা মীর মুহাম্মদ আখতার সাহেব (র:) এর রূহানী ফুয়ূজ এর বরকতে হাদিয়ে যমান হযরত আল্লামা শায়খ মুহাম্মদ আবদুল জব্বার সাহেব (রহ:) ১৯৯০ ঈসাব্দের ২৫ অক্টোবর মাইনিমুখ গাঁথাছড়া বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্সের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। ইতোপূর্বে স্থানীয় জনগণের দাওয়াতে আশির দশকে হুজুর কেবলা (রহ.) লংগদু সফর করেন। হুজুর কেবলা (রহ:) এর রোপিত বায়তুশ শরফের বীজ আজ মহা মহীরূহে রূপ লাভ করেছে। বর্তমানে বিশাল জায়গাজুড়ে বায়তুশ শরফ আদর্শ দাখিল মাদ্রাসা (এমপিওভুক্ত) হিফজখানা, এতিমখানা, মসজিদ ও ছাত্রাবাসের দৃষ্টিনন্দন অবকাঠামো এবং ভবনের সমারোহে একটি পূর্ণাঙ্গ কমপ্লেক্সে পরিণত হয়েছে। মুহতারাম রাহবারে বায়তুশ শরফ আল্লামা শায়খ মুহাম্মদ আবদুল হাই নদভী, পীর সাহেব কেবলার নেতৃত্বে কাফেলার বহর নিয়ে লঞ্চ দু’টি মাইনিমুখ সীমানায় পৌঁছলে স্থানীয় আঞ্জুমানে ইত্তেহাদ, আঞ্জুমানে নওজোয়ান ও একই রকম পোশাকে সুসজ্জিত মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের বহনকারী দুইটি লঞ্চ বৈরি আবহাওয়া ও পানিপথের ঝুঁকি উপেক্ষা করে “আহলান ছাহলান মারহাবান” ধ্বনিতে আকাশ বাতাস মুখরিত করে রাহবারে বায়তুশ শরফকে স্বাগত জানানোর জন্য
এগিয়ে আসে। রাহবারে বায়তুশ শরফকে কাছে পাওয়ার আনন্দে স্থানীয় জনগণের আবেগ উচ্ছাসে মাইনিমূখ
লঞ্চঘাটে একটি নূরানী পরিবেশ ও অন্যরকম দ্বীনি আবহের সৃষ্টি হয়।

হযরত হুজুর কেবলা (রহ:), হযরত বাহরুল উলুম (রহ.), হযরত নাযেম সাহেব (রহ:) ও বর্তমান রাহবারে বায়তুশ
শরফ আল্লামা শায়খ মুহাম্মদ আবদুল হাই নদভী সাহেবের প্রতি এলাকাবাসী ও মাইনিমূখ বাজারের ব্যবসায়ীবৃন্দের
অগাধ শ্রদ্ধা, ভালোবাসা অতুলনীয় ও অবর্ণনীয়। স্থানীয়রা জানান, নব্বই দশকের শুরুর দিকে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে
মাইনিমুখ বাজারের সমস্ত দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভষ্মীভূত হয়। এ বিপদের মুহুর্তে হযরত হুজুর কেবলা (রহ:)
তখন জরুরী ত্রাণ সহায়তা ও নগদ অর্থ মাইনিমুখ বাজারে ক্ষতিগ্রস্থদের কাছে প্রেরণ করেন। বায়তুশ শরফের ত্রাণ
কার্যক্রমের পর সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়ান। হযরত হুজুর কেবলা (রহ:)
এর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও বরকতের নির্দশন স্বরূপ অনেক ব্যবসায়ী সেই নগদ অর্থ এখনো সংরক্ষণ করে রেখেছেন।
সত্তরের দশকের শেষ দিকে পার্বত্যাঞ্চলে মুসলিম জনগোষ্ঠীর স্থায়ী বাসস্থানের সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে সরকারি ব্যবস্থাপনায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বাস্তুহারা, নিঃস্ব, গরীব মানুষগুলোকে এই এলাকায় বসতি স্থাপনের সুযোগ করে দেয়া হয়। দুর্গম পার্বত্য এলাকায় অচেনা পরিবেশে নবাগত মুসলমানদেরকে দারিদ্রতার সুযোগে অনৈসালিক মিশনারী সংস্থাগুলো যেন ধর্মান্তরিত করার সুযোগ না পায়, তা মাথায় রেখে সুক্ষ্ম চিন্তা চেতনা নিয়ে আল্লামা শাহসুফী মুহাম্মদ আবদুল জব্বার সাহেব (রহ:) এখানে বায়তুশ শরফের বীজ বপন করেন। পরবর্তীতে মাওলানা মুহাম্মদ নূরুল ইসলাম (রহ:) এর অক্লান্ত পরিশ্রমে এই প্রতিষ্ঠান একটি দৃষ্টিনন্দন ও পরিপূর্ণ দ্বীনি প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে। কাপ্তাই লেকের অবারিত জলরাশি ও পাহাড় পরিবেষ্টিত এলাকায় সুন্দর, পরিপাটি ও গোছানো বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্সে মাহফিলের সুবিশাল প্যান্ডেল ও অন্যান্য ব্যবস্থাপনা দেখে সকলেই অভিভূত ও আবেগাপ্লোত হয়ে পড়েন।

মাহফিলে বাদে এশা রাহবারে বায়তুশ শরফ আল্লামা শাহ মুহাম্মদ আবদুল হাই নদভী সাহেব শরীয়তের ইবাদত
পালনে নিয়ত করার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সারগর্ভ আলোচনা পেশ করেন। তিনি বলেন, নিয়ত ছাড়া আল্লাহর কাছে
ইবাদত কবুল হয় না। তবে কুরআন তিলাওয়াত ও আল্লাহর রাসূল (স:) এর উপর দরূদ পাঠে কোন নিয়ত করতে
হয় না। নিয়তবিহীন এই ইবাদত আল্লাহর কাছে কবুল হয়। তিনি আত্মশুদ্ধির জন্য ত্বরিকতের প্রয়োজনীয়তা ও
কিয়ামতের ময়দানে শাফাআত লাভের জন্য কুরআন তিলাওয়াত ও রাসূল (স:) এর উপর দরুদ পাঠের গুরুত্ব
সম্পর্কে দালিলিক আলোচেনা করেন। লংগদু উপজেলা পরিষদের সম্মানিত চেয়ারম্যান, মাইনিমুখ ইউ.পি চেয়ারম্যান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণ মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন।

৬ ডিসেম্বর ২০২১ (সফরের ৩য় দিন) রাহবারে বায়তুশ শরফের ত্বরিকত ও দ্বীনি কাফেলা পঞ্চাশের অধিক আলেমসহ চারশত জন সফরসঙ্গী গাঁথাছড়া, মাইনিমুখ, লংগদু থেকে সালাতুল যুহরের পর বাঘাইছড়ি বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্স এর বার্ষিক সভা ও ইছালে সওয়াব মাহফিলের উদ্দশ্যে রওয়ানা দেয়। রাঙ্গামাটি সদর থেকে ১৪৬ কি.মি. ও লংগদু থেকে ৭০ কি.মি. উত্তরপূর্বে বাঘাইছড়ি উপজেলার অবস্থান। ভ্রমণ পিপাসু ও এডভেন্সার প্রিয় পর্যটকদের কাছে অতিপ্রিয় দৃষ্টিনন্দন এবং আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট ‘সাজেক ভ্যালি’ এই উপজেলায় অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের ২য় বৃহত্তম উপজেলা। কাপ্তাই লেকের স্বচ্ছ জলরাশির বুক চিরে দু’পাশে পাহাড়ের সবুজ বন-বনানীর সমারোহ অবলোকন করে দু’টি বড় লঞ্চযোগে প্রায় চার ঘণ্টার নৌ-পথ ভ্রমণের পর রাহবারে বায়তুশ শরফের কাফেলা বাঘাইছড়ি বাজারের লঞ্চঘাটে পৌঁছে। শীতের আমেজের মাঝে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে হঠাৎ বৈরি আবহাওয়ায় মুষলধারে বৃষ্টিপাতের মধ্যেও অভ্যর্থনা জানানোর জন্য লঞ্চঘাটে প্রচুর সংখ্যক আশেকানে বায়তুশ শরফের উপস্থিতিতে সকলেই অভিভূত হন এবং মুহুর্তেই সফরের ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।

আশির দশকের শুরুতে হাদীয়ে যমান আল্লামা শাহসূফী শায়খ মুহাম্মদ আবদুল জব্বার সাহেব (রহ:) বাঘাইছড়ি, লাইল্যারঘোনা এলাকার বির্শিষ্ট সমাজসেবক জনাব বাদশাহ মিয়া কন্ট্রাক্টরের বিশেষ দাওয়াতে তাঁর বাড়ীতে তশরীফ নিয়েছিলেন। তারপর ১৯৮৫ ঈসাব্দে বাঘাইছড়ি কাঁচালং দাখিল মাদ্রাসার বার্ষিক সভায় প্রধান মেহমান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তখন সফরসঙ্গী হিসেবে বাহরুল উলুম শাহ মাওলানা মুহাম্মদ কুতুব উদ্দিন (রহ:) ও ফখরুল ওয়ায়েজিন হযরত মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল মুমিন (রহ:) সহ অনেক ওলামায়ে কেরাম শরীক হয়ে ছিলেন।

দুর্গম পাহাড়ী এলাকার অনগ্রসর মুসলিম জনগণের দ্বীনি হেদায়াতপ্রাপ্তি ও ইলম অর্জনের জন্য বাঘাইছড়ি বায়তুশ
শরফ প্রতিষ্ঠা হযরত হুজুর কেবলা (রহ:) এর দোয়ার ফসল ও একটি জীবন্ত কারামত। তিনি জীবদ্দশায় দেখে যেতে
না পারলেও তাঁর সুযোগ্য জামাতা হযরত নাযেম সাহেব (রহ:) ২০০৫ ঈসাব্দে বাঘাইছড়ি বায়তুশ শরফ প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রম ও ইখলাসের ফসল এই দ্বীনি প্রতিষ্ঠান এখন দাখিল স্তর পর্যন্ত জব্বারিয়া আদর্শ মাদ্রাসা, নূরানী একাডেমি, হিফজখানা ও এতিমখানা নিয়ে পরিপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে। কমপ্লেক্সের সামনে এলাকাবাসী ও সরকারি সহায়তায় নির্মিত সুপরিসর সুন্দর দৃষ্টিনন্দন জামে মসজিদ এবং দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের শোভা বর্ধন করেছে। হযরত মাওলানা মুহাম্মদ নূরুল ইসলাম (রহ:) এর প্রতি পার্বত্য এলাকাবাসীর অকৃত্রিম ভালবাসা ও দোয়ার শেষ সীমানা কোথায় তা আমার জানা নেই। একজন মুখলেছ আল্লাহর বান্দার প্রতি মানুষের এত ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা থাকতে পারে তা স্বচক্ষে না দেখলে অতৃপ্ত থাকতাম। দুর্গম পর্বতশ্রেণি বেষ্টিত বাঘাইছড়িতে কমপ্লেক্সের অগ্রযাত্রা বায়তুশ শরফের মকবুল আল্লাহর অলিগণের জীবন্ত কারামত। এই এলাকা সফরের অভিজ্ঞতা না থাকলে তা কল্পনা করা অসম্ভব। এলাকাবাসী স্বাচ্ছন্দচিত্তে জানান, “বাঘাইছড়ি সদর এলাকা পাহাড়ী অঞ্চলের মাঝে সমতল ভূমি হওয়ায় বর্ষাকালে পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে বন্যায় নিমজ্জিত হয়, তখন এই বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্স আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে আমাদের বুকে টেনে নেয়”।

উক্ত কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত বার্ষিক সভা ও ঈছালে সওয়াব মাহফিলে ব্যবস্থাপনা কমিটির সুন্দর আয়োজন ও সুবিশাল
প্যান্ডেলে বৈরি আবহাওয়ার মাঝেও ভরপুর দ্বীনদার ভাইগণের উদ্দেশ্যে মুহতারাম রাহবারে বায়তুশ শরফ আল্লামা
শায়খ মুহাম্মদ আবদুল হাই নদভী সাহেব গুরুত্বপূর্ণ নসীহা পেশ করেন। বাঘাইছড়ি উপজেলার সম্মানিত চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র, স্থানীয় কাউন্সিলর ও গণ্যমান্য ব্যক্তিগণের উপস্থিতি মাহফিলকে আরো সুশোভিত করেছে।

০৭.১২.২০২১ (সফলের চতুর্থ দিন) রাহবারে বায়তুশ শরফ আল্লামা শায়খ মুহাম্মদ আবদুল হাই নদভী সাহেব (বারা:
ফী: হায়া:) এর চৌকস নেতৃত্বে অর্ধ শতাধিক আলেমসহ চারশ জন সফরসঙ্গী নিয়ে রাহবারে বায়তুশ শরফের
কাফেলা মারিশ্যা, বাঘাইছড়ি বায়তুশ শরফ থেকে সকাল ১০ টায় সড়ক পথে খাগড়াছড়ি শহরে অবস্থিত বায়তুশ
শরফ কমপ্লেক্সের বার্ষিক সভা ও ঈছালে সওয়াব মাহফিলের পানে রওয়ানা হয়। বাঘাইছড়ি থেকে সড়ক পথে
খাগড়াছড়ির দূরত্ব প্রায় ৫০ কিঃমিঃ। সুশৃংখল ও নিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থাপনায় দুর্গম পাহাড়ী উচু-নিচু, আঁকা-বাঁকা
পথে অসাধারণ দৃশ্যাবলী ও আল্লাহর নিয়ামতরাজি অবলোকন করে ত্বরিকতের এই কাফেলা অগ্রসর হয়। পাহাড়ের
কোল ঘেঁসে বয়ে যাওয়া রাস্তার পাশে কয়েক হাজার ফুট নিচে গিরিখাঁদের দিকে দৃষ্টিপাত হতেই মহান রাব্বুল
ইজ্জতের অফুরন্ত নেয়ামতের শোকর নিজের অজান্তেই মুখ থেকে নিঃসৃত হয়-আলহামদুলিল্লাহ।

পার্বত্য এলাকার অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর মাঝে দ্বীনের আলো ছড়িয়ে দেয়ার মানসে বায়তুশ শরফের প্রধান রূপকার
হাদীয়ে যমান, শাহসূফী আল্লামা মুহাম্মদ আবদুল জব্বার সাহেব (রহ:) বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা করার জন্যে
জায়গার সন্ধানে ২৫-২৮ নভেম্বর, ১৯৯১ সালে, চারদিন খাগড়াছড়ি সফর করেন। পরবর্তীতে ১৯৯৫ সালে তিনি
খাগড়াছড়ি বায়তুশ শরফ প্রতিষ্ঠা করেন।

পাহাড়ী পথে সাজেক ভ্যালির রুটে দিঘীনালা হয়ে মুহতারাম রাহবারে বায়তুশ শরফের কাফেলা দুপুর ১ টা নাগাদ
খাগড়াছড়ি শহরে প্রবেশ করে। শহরের প্রবেশমূখে খাগড়াছড়ি হর্টিকালচার গেইট থেকে আনজুমানে নওজোয়ানের
সদস্য ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা একই রকম পোশাকে সজ্জিতাবস্থায় বিশাল বাইক বহর নিয়ে মুহতারাম রাহবারে
বায়তুশ শরফকে উষ্ণ অভ্যর্থনার মাধ্যমে ত্বরিকতের এই কাফেলা অত্যন্ত সম্মানজনকভাবে খাগড়াছড়ি বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সালাতুল যুহর আদায়ের পর সুশৃংখল পরিবেশে সজ্জিত ও রুচিসমস্ত ডাইনিং হলে সকল অতিথির জন্য বায়তুশ শরফ দরবারের ঐতিহ্যে রুচিসম্মত দুপুরের খাবারের ব্যবস্থাপনা সত্যিই প্রশংসার দাবীদার।

খাগড়াছড়ি বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্সে বিপুল সংখ্যক অতিথির আপ্যায়ন, আবাসিক ব্যবস্থা, অত্যন্ত রুচিসম্মতপরিবেশবান্ধব সার্বিক ব্যবস্থাপনার মান, সুপরিসর মসজিদ, অজুখানা, ওয়াশরুম, মাদ্রাসার ক্লাসরুম, এতিমখানা, হেফজখানার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, অফিস, শিক্ষক মিলনায়তন, ডাইনিং হলের সুন্দর গোছানো ও পরিপাটি ব্যবস্থাপনা থেকে দেশের বিভিন্ন মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটি, প্রতিষ্ঠান প্রধান, শিক্ষার্থী ও অন্যান্য দরবারের পরিচালকগণের অনেক কিছু শেখার রয়েছে।

বৈরি আবহাওয়ার বিষয়টি মাথার রেখে খাগড়াছড়ি বায়তুশ শরফ কর্তৃপক্ষ স্টেইজ ও প্যান্ডেলের ব্যবস্থাপনায় বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন। বাদে মাগরিব ওয়ায়েজগণের প্রাঞ্জল আলোচনায় ভাবগম্ভীর পরিবেশ তৈরি হয়। বাদে এশা সারগর্ভ আলোচনায় রাহবারে বায়তুশ শরফ বলেন, আল্লাহর রাসূল (স:) এর অনুসরণই আল্লাহর ভালোবাসা ও রহমত পাওয়ার পূর্বশর্ত। সাহাবারে কিরাম (রিদ:) কর্তৃক আল্লাহর রাসূল (স:)কে সম্মান ও ভালোবাসার নিদর্শন সম্পর্কে তিনি বলেন, হযরত আব্বাস (রা:)কে একজন সাহাবী প্রশ্ন করলেন, বয়সে আপনি বড় নাকি মুহাম্মদ (স:) বড়? তিনি উত্তরে বলেন, আমার জন্ম মুহাম্মদ (স:) এর আগে হয়েছে, তবে তিনি আমার চেয়ে বড়। এভাবে সাহাবায়ে কিরাম (রিদ:) রাসূল (স:) কে সর্বোচ্চ সম্মানের আসনে স্থান দিয়েছেন। তিনি আলোচনায় বলেন, যুগে যুগে যারা আল্লাহ ও রাসূল(স:) এর সাথে বেয়াদবি করেছে তারা দুনিয়াতে লাঞ্চিত হয়েছে আর আখিরাতেও কঠিন শাস্তি ভোগ করবে। বায়তুশ শরফ কুরআন-সুন্নাহর উপর প্রতিষ্ঠিত একটি দরবার। এখানে কোন শিরক বিদআত ও ভন্ডামি নেই।

পাহাড়ী দুর্গম পথ, কাপ্তাই লেক ও কর্ণফুলী নদীর দীর্ঘ জলরাশি পাড়ি দিয়ে চারদিন ব্যাপী শরিয়ত ও ত্বরিকতের এই
সফর শেষ করে ০৮.১২.২০২১ ঈসাব্দ দুপুরে নিরাপদে চট্টগ্রাম ফিরে আসতে পারায় সকলে মহান আল্লাহর দরবারে
শুকরিয়া আদায় করেন। ফিরতি পথে মুহতারাম রাহবারে বায়তুশ শরফ ফটিকছড়ি বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেন। সেখানে উপস্থিত আশেকানগণের উদ্দেশ্যে তিনি গুরুত্বপূর্ণ নসীহা পেশ করেন।

মুহতারাম রাহবারে বায়তুশ শরফের সাথে সফরের অর্জন:-
বায়তুশ শরফের চলমান যুগোপযুগী কার্যক্রমের মধ্যে এই সফর একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। আল্লামা শায়খ মুহাম্মদ
আবদুল হাই নদভী, পীর সাহেব কেবলা (মাঃজিঃআঃ)-এর উপর দরবারে বায়তুশ শরফের কঠিন দায়িত্ব অর্পিত
হওয়ার পর পার্বত্য চট্টগ্রামে এটি তাঁর প্রথম সফর হওয়ায় এর তাৎপর্য আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। আর্ত-মানবতার সেবা,
দ্বীনি শিক্ষা প্রসারে বায়তুশ শরফের কার্যক্রম ও অবদান সম্পর্কে প্রত্যক্ষ ধারণা লাভের জন্য এই সফর অত্যন্ত
জরুরী। শরিয়ত-ত্বরিকতের প্রশিক্ষণ ও শিক্ষার উদ্দেশ্যে মুসাফির ও সফরের গুরুত্ব আল্লাহর কাছে অত্যধিক বিধায় আল্লাহর কাছে দোয়া কবুল হওয়ার একটি মোক্ষম সুযোগ, যেহেতু সফর অবস্থায় দোয়া কবুল হয়। এই সফরে প্রত্যেক মাহফিলে ওয়ায়েজগণের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা, মুহতারাম রাহবারে বায়তুশ শরফের মূল্যবান নসীহা ও বক্তব্য, হিফজসম্পন্নকারী হাফেজগণের পাগড়ী প্রদানের জান্নাতীদৃশ্য অবলোকন, তাওবা-ইসতিগফার, বায়য়াত গ্রহণ, শেষ রাতে তাহাজ্জুদ ও যিকর, জামায়াতে সালাত আদায়সহ, শরিয়ত ও ত্বরিকতের একটি ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ দ্বীনি পরিবেশের আবহ সকলের অন্তরে তৈরি হয়েছে। হাদীয়ে যমান শাহসূফী আল্লামা শায়খ মুহাম্মদ আবদুল জব্বার সাহেব (রহ:) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ‘‘রেনেসাঁ’’ শিল্পীগোষ্ঠীর পরিবেশিত হামদ ও নাতে রাসূল (স:) এর সুরের মোর্চনায় আকাশ বাতাস মুখরিত হয়েছে। নবগঠিত আঞ্জুমানের নওজোয়ানের শাখা কমিটির সদস্যবৃন্দকে রাহবারে বায়তৃুশ শরফ শপথ বাক্য পাঠ করান। বায়তুশ শরফের সকল কার্যক্রম আল্লাহ কবুল করুন। আমীন।

কৃতজ্ঞতা: মহান রাব্বুল আলামীনের উপর ভরসা করে রাহবারে বায়তুশ শরফ আল্লামা শায়খ মুহাম্মদ আবদুল হাই
নদভী সাহেব ত্বরিকতের উক্ত সফরের ব্যবস্থাপনা করায় আমরা তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ। রাঙ্গামাটি, মাইনিমুখ, বাঘাইছড়ি, খাগড়াছড়ি বায়তুশ শরফ আঞ্জুমানে ইত্তেহাদ ও আঞ্জুমানে নওজোয়ানের নেতৃবৃন্দ, মাদ্রাসার সভাপতি, সেক্রেটারী, কমিটির সদস্যবৃন্দ, মাদ্রাসার সুপার, সহ-সুপার, শিক্ষক-কর্মচারীবৃন্দ, বর্তমান-প্রাক্তণ ছাত্রবৃন্দ ও স্থানীয় ব্যবসায়ীবৃন্দের নিকট কৃতজ্ঞ। তাছাড়া পার্বত্য জেলা পরিষদের মাননীয় চেয়ারম্যান মহোদয়গণ, মাননীয় সংসদ সদস্যগণ, উপজেলার সম্মানিত চেয়ারম্যানগণ, ভাইস-চেয়ারম্যান, পৌরসভার সম্মানিত মেয়র ও কাউন্সিলরগণসর্বোপরি অত্র এলাকার সর্বস্তরের অধিবাসী ও ব্যবসায়ীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। বায়তুশ শরফের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করি। আল্লাহ্ এই সফরকে কবুল করুন। আমীন।

লেখক: গবেষক, প্রাবন্ধিক ও প্রভাষক, ইসলাম শিক্ষা বিভাগ, চট্টগ্রাম সরকারি মডেল কলেজ, খুলশী, চট্টগ্রাম।মোবাইল: ০১৭১৫১০০৫১১ ই-মেইল: drwali78@gmail.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!