এলনিউজ২৪ডটকম : লোহাগাড়া উপজেলার উত্তর কলাউজান খালাঁদাদ খান পাড়ার মৃত আবুল কাশেমের অসহায় কন্যা জন্নাত আরা বেগম ১২ বছর ধরে স্ত্রী হিসাবে স্বামীর স্বীকৃতি ও তার সন্তানের পিতার অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছে। ১২ বছর আগে প্রতিবেশী ধনাঢ্য নুরুল হকের সন্তান আজিজুল হক বিয়ের আশ^াস দিয়ে তার সাথে শারীরীক সম্পর্ক গড়ে তুলে। এতে জন্নাত আরার গর্ভে সন্তান হয়। সন্তান ভুমিষ্ট হবার পর বিয়ের আশ্বাস দিলেও শেষে প্রতারনাই করা হয় তার সাথে! শেষে চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইবুনাল-২ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন জন্নাত। মামলা নং-১৭৪/০৫ইং। আদালত বাদীর মামলা আমলে নিয়ে গত ২০০৭ইং সালের মার্চের ৬ তারিখ শিশু সন্তান ইসমাইল,গর্ভজাত মাতা জান্নাত আরা ও সন্তানের পিতা দাবীকৃত আসামী আজিজুল হক তিন জনের ডি.এন.এ টেষ্ট করার নির্দেশ দেন। বর্তমান তার সন্তানের বয়স ১২ বছর। তার নাম ইসমাইল হোসেন বাবর। সে ৪র্থ শ্রেনীতে পড়ে। এখনও আজিজুল হক জন্নাত আরাকে বিয়ের আশ^াস দিয়েই আছেন। জন্নাত সন্তান নিয়ে খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করলেও আজিজুল হক পারিবারিক চাপে অন্য একটি মেয়েকে বিয়ে করে এখন ৪ সন্তানের বাবা।
এদিকে গত সপ্তাহ দশদিন আগেও সে গভীর রাতে গোপনে জন্নাত আরার সাথে গোপনে মেলামেশা করতে গিয়ে জান্নাত আরার সৌর-চিৎকারে এলাকাবাসীর হাতে ধৃত হয়। এরপর তাকে থানা পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ওখান থেকে টাকারজোর ও প্রভাব কাটিয়ে ডিএনএ টেষ্ট করে শিঘ্রই জন্নাতকে বউ করে ঘরে তুলবে আশ্বাস দিয়ে রেহাই পায়। কিন্তু বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এ ব্যাপারে লেখা-লেখি হবার কথা শুনে সে গা ঢাকা দিয়ে আছে এবং বর্তমানে সে বিদেশ পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে খবর পাওয়া যায়। জন্নাত আরার দরিদ্র পিতা এজন্য ১২ বছর আগে আদালতে মামলাও করেছিলেন। কিন্তু প্রতিপক্ষের টাকার জোর, কুটকৌশলে বার-বার হেরে যাচ্ছে তারা। অপরদিকে আজিজুলের পরিবারের দায়ের করা মিথ্যা মামলায় জন্নাত আরা তার মা ভাইসহ সকলে একাধিকবার জেল খেটে সর্বশান্ত হয়ে পড়েছে। জন্নাত আরা জানান, ১২ বছর আগে প্রতিবেশী ধনাঢ্য নুরুল হকের সন্তান আজিজুল হক বিয়ের আশ^াস দিয়ে তার সাথে শারীরক সম্পর্ক গড়ে তুলে। এতে জন্নাত আরার গর্ভে সন্তান হয়। বর্তমান তার সন্তানের বয়স ১২ বছর। তার নাম ইসমাইল হোসেন বাবর। সে ৪র্থ শ্রেনীতে পড়ে। এখনও আজিজুল হক জন্নাত আরাকে বিয়ের আশ^াস দিয়ে দিয়েই আছেন। সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করলেও আজিজুল হক পারিবারিক চাপে অন্য একটি মেয়েকে বিয়ে করে এখন ৪ সন্তানের বাবা। তাদের বিয়ের ব্যাপারে প্রতিবেশীরা শতাধিক বার স্থানীয় বৈঠকের মাধ্যমে বিয়ের আয়োজন করলেও আজিজুলের বাবা ও তার পরিবার বার বার অগ্রাহ্য করে যাচ্ছে। এমনকি বিগত ১২ বছর আগে জন্নাত আরার দিনমজুর বাবাকে বাড়ীতে ডেকে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক পিটুনি দেয় নুরুল হক। এতে অপমানে আঘাতে এক সপ্তাহর মধ্যেই স্ট্রোক করে তার মৃত্যু ঘটে। জন্নাত আরা বলেন, আমার দায়ের করা মামলায় ২০০৭ সালে ডিএনএ টেষ্ট এর আদেশ হলেও আজিজুল বিভিন্ন কৌশলে আদালত থেকে সময় নিয়ে-নিয়ে ডিএনএ পরীক্ষার বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছে। যার কারনে এখনও ডিএনএ পরীক্ষাটি করা সম্ভব হয়নি। এখন আজিজুল গোপনে বিদেশে পাড়ি জমানোর চেষ্টায় আছে। জন্নাত আরার মা নুর জাহান চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলেন, ওরা অনেক পয়সাওয়ালা। আমার মেয়ের জীবন শেষ করে দিল তার উপর আজ ১২ বছর ধরে ওরা আমাদের মামলা হামলা দিয়ে হয়রানি করে যাচ্ছে। এমনকি প্রথমবার যখন ওদের দায়ের করা মামলায় আমাদের যখন জেলে নিয়ে যায় তখন আমার লাগানো ৭ বিঘা জমির পাকা ধান ওরা কেটে নেয়। এছাড়াও এ পর্যন্ত কয়েকবার আমাদের বাড়ীতে লুটপাট করে। ওরা প্রভাবশালী ও পয়সাওয়ালা হওয়ায় কেউ ওদের বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস করে না। এ ব্যাপারে আজিজুলের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ১৩ বছর আগে মেয়েটির গর্ভের সন্তানটি আমার নয়। এছাড়াও তার সাথে আমার কোন সম্পর্কও ছিল না বলে উল্লেখ করে।
এদিকে জাতীয় পরিচয় পত্র ও জন্ম সনদে জন্নাত আরার স্বামী হিসেবে আজিজুল হকের নাম রয়েছে এবং তার সন্তান মোঃ ইসমাইল হোসেন বাবরের জন্মসনদেও রয়েছে পিতা হিসেবে আজিজুল হকের নাম।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকাবাসী জানিয়েছেন, পয়সার গরমে নুরুল হক ও তার ছেলে আজিজুল হক এলাকার কারো কথা মানতে চায় না। অথচ তার সন্তান আজিজুল হক মেয়েটির জীবনটাই নষ্ট করে দিয়েছে। তার উচিত ছিল মেয়েটিকে ঘরের বউ হিসেবে মেনে নেওয়া। আজিজুল হক ও জন্নাত আরার সম্পর্কের কথা সকলেই এক বাক্যে স্বীকার করেছেন।
তারা বলেন, অন্যান্য মেয়েদের মত জন্নাত আরা ব্যর্থ হয়ে বা অপবাদ পেয়ে আতœহত্যা করেনি বরং চরম দরিদ্রের মধ্যে দিনাতিপাত করেও অধিকার আদায়ে ১২ বছর ধরে সংগ্রাম করে যাচ্ছে জন্নাত আরা। জন্নাত আরা স্ত্রী ও সন্তানের অধিকার ফিরে পেতে দেশের নারী অধিকার সংগঠনগুলো ও সংশ্লিষ্ট সকলের র্সাবিক সহায়তা কামনা করছেন।
এ ব্যাপারে লোহাগাড়া থানার ওসি মোঃ শাহজাহান পিপিএম বার জানান, ঘটনাকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের মামলা চলছে। সম্প্রতি গভীর রাতে আজিজকে জন্নাত আরার বাড়ীতে অবৈধ প্রবেশকালে আটক করার খবর পেয়ে থানা পুলিশ তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। পরে আদালতের নির্দেশানোসারে ডি.এন.এ টেষ্ট করার অঙ্গিকার নিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয় । এ ব্যাপারে গত ১৪ জানুয়ারী লোহাগাড়া থানায় অভিযোগ করেন জন্নাত আরা বেগম। অভিযোগে উল্লেখ করা হয় এ মাসের ৩১ তারিখ মামলার তারিখ নির্ধারিত থাকায় আজিজুল বিদেশ পালিয়ে যাবার পায়তারা করছে । এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আইনী সহায়তা কামনা করছে অসহায় জন্নাত আরা। সে সবার কাছে আকুতি করে বলতেছে বাচ্চা জন্ম দিয়ে পিতা যখন সন্তান অস্বীকার করছে তখন আমি একটা বাচ্ছা নিয়ে কার কাছে যাবো!
লোহাগাড়া উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মর্কতার সাথে কথা হলে তিনি জানান অধিকার বঞ্চিত যে কোন নারী অভিযোগ করলে আমরা ব্যবস্থা নেব ।
অপরদিকে, আজিজুল হকের সাথে যোগাযোগ করতে না পারায় এ ব্যাপারে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।