নিউজ ডেক্স : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন স্বচ্ছ, অবাধ, ভীতিহীন, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, এবং সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার নির্বাচন কমিশনকে পূর্ণ সহায়তা দেওয়ার সব ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, তার সময়ে কোনো নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়নি।
বুধবার (১৪ জুন) জাতীয় সংসদ অধিবেশনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য কাজিম উদ্দিন আহম্মেদের এক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে তিনি এ কথা জানান। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। এ দিন প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান বাংলাদেশের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা। সংবিধানের ১১৮ (৪) অনুচ্ছেদে উল্লেখ রয়েছে, ‘নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকিবেন এবং কেবল এই সংবিধান ও আইনের অধীন হইবেন’। এছাড়া ১২৬ অনুচ্ছেদে উল্লেখ রয়েছে, ‘নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা সকল নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য হইবে’। আওয়ামী লীগ যখনই সরকার গঠন করেছে, তখনই সুষ্ঠু, অবাধ, ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং নির্বাচন কমিশন যাতে স্বাধীনভাবে দায়িত্বপালন করতে পারে সেজন্য সব ধরনের সহায়তা দিয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন স্বচ্ছ, অবাধ, ভীতিহীন, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, এবং সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার নির্বাচন কমিশনকে পূর্ণ সহায়তা দেওয়াসহ প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন ২০১২’ প্রণয়ন করেছি। এই আইন অনুযায়ী ০৬ সদস্যের সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন যেকোনো সময়ের চেয়ে শক্তিশালী, নিরপেক্ষ এবং প্রশাসনিক ও আর্থিকভাবে স্বাধীন নির্বাচনকালীন নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল সরকারি কর্মকর্ত/প্রতিষ্ঠান সুনির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন কমিশনের অধীনে ন্যস্ত হবে। নির্বাচন কমিশন তার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী স্বাধীনভাবে কাজ করে যাবে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রয়োজনে যা যা করার তার সবকিছু করবে। আমরা দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষককে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। যারাই পর্যবেক্ষক পাঠাতে চায় তারা পাঠাতে পারবে।
তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার ক্ষেত্রে আমাদের সরকার বদ্ধপরিকর। আওয়ামী লীগ সবসময়ই দেশে ওয়েস্ট মিনিস্টার স্টাইল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই-সংগ্রাম করেছে। আওয়ামী লীগের ইতিহাস গণতন্ত্রের ইতিহাস। মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার নিশ্চিত করার ইতিহাস। জাতির পিতাকে হত্যার পর ১৯৮১ সালে ১৭ মে বাংলাদেশের মাটিতে প্রথম পদার্পণ করি। তারপর থেকে স্বৈরতন্ত্রকে উৎখাত এবং গণতন্ত্র পুনপ্রতিষ্ঠার জন্য জীবন বাজি রেখে সংগ্রাম করেছি। জেল-জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতন, হত্যার হুমকিসহ নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার যাতে কেউ কেড়ে নিতে না পারে, তা রক্ষায় কাজ করেছি। আওয়ামী লীগ জনগণের ম্যান্ডেটের ওপর বিশ্বাসী। জনগণই ঠিক করবে কে দেশ চালাবে। এটা জনগণের ক্ষমতা। আমাদের সরকার জনগণের ক্ষমতা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ কখনও ক্ষমতা দখল করতে আসেনি বরং জনগণকে এ অধিকার ফিরিয়ে দিতে এসেছে, যাতে জনগণ তাদের সরকার বেছে নিতে পারে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশের জনগণ অর্জন করেছে গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও ভোটের অধিকার। এছাড়া নির্বাচন কমিশন আইন ২০২২ এর উদ্দেশ্যপূরণকল্পে রাষ্ট্রপতির নির্দেশক্রমে আমাদের সরকার যা যা আবশ্যক সে সকল বিধি করবে। ইতোমধ্যে যতগুলো জাতীয় সংসদ নির্বাচন, জাতীয় সংসদের শূন্যপদের নির্বাচন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান নির্বাচন/উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, তা সম্পূর্ণ অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। নির্বাচন কমিশন পূর্ণ ক্ষমতা নিয়ে স্বাধীনভাবে এসব নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেছে। সরকারের সকল দপ্তর/বিভাগ এতে সহযোগিতা করেছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সরকারের সময়ের কোনো নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়নি। আমরা নির্বাচনের ক্ষেত্রে একটি উচ্চ মানদণ্ড স্থাপন করতে পেরেছি। নির্বাচনে জনগণ যাকে ভোট দিয়েছে, সেই নির্বাচিত হয়েছে। বিএনপির আমলে অনুষ্ঠিত ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির মতো বিতর্কিত নির্বাচন কখনও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হয়নি এবং হবেও না। দেশের জনগণ যাতে তাদের মূল্যবান ভোটাধিকার প্রয়োগ করে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারে, সে লক্ষ্যে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশন স্বাধীন কর্মকাণ্ডকে এগিয়ে নিতে আমাদের সরকার সদা প্রস্তুত রয়েছে।