Home | উন্মুক্ত পাতা | সঞ্চয়পত্রের সুদ, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশি টাকা ও একজন ব্যারিষ্টার সুমন

সঞ্চয়পত্রের সুদ, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশি টাকা ও একজন ব্যারিষ্টার সুমন

484

ডায়বেটিক রোগী হওয়ায় প্রতিদিন সকালে আমাকে হাঁটতে বের হতে হয়। হাটা পথে মিরপুর পোষ্ট অফিস। ৩০ শে জুন সকালে পোষ্ট অফিসের সামনে ২/৩ শত লোকের জটলা দেখলাম, যার মধ্যে মহিলার সংখ্যা বেশি। কৌতূহলী হয়ে জটলার কাছে এগিয়ে গেলাম। মহিলারা বলাবলি করছে, সরকার আগামীকাল ১ লা জুলাই ২০১৯ ইং থেকে সঞ্চয়পত্রের সুদের উপর ৫% উৎস কর বৃদ্ধি করেছেন। যাদের সুদ পাওনা হয়েছে তারা আজকে টাকা উত্তোলন করলে ৫% উৎস কর থেকে বেঁচে যাবেন।

বাসায় এসে শুনলাম কাজের মহিলা আজকে আসবে না, সঞ্চয়পত্রের সুদ উঠাতে গিয়েছে। আমার বাসার কাজের মহিলা রুনা ৫/৬টি বাসায় কাজ করে মাসে ৫/৬ হাজার টাকা রোজগার করে। তার স্বামী রিক্সা চালায়। দুজনের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের টাকা থেকে তারা কিছু কিছু সঞ্চয় করে। তিল তিল করে গড়ে উঠা সঞ্চয় তারা সঞ্চয়পত্রে জমা করে। রুনার এক ছেলে, এক মেয়ে ভাল স্কুলে লেখাপড়া করে। রুনার স্বপ্ন তার ছেলে-মেয়েরা অনেক বড় হবে। তারা সঞ্চয়পত্রের সুদের আয় থেকে তার ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচ যোগায়। এমনি অনেক দরিদ্র মহিলার ভরসা হচ্ছে সঞ্চয়পত্র। গ্রাম বা শহরের অনেক দরিদ্র, নিু-মধ্যবিত্ত যাদের অন্য কোথায় বিনিয়োগের সামর্থ নাই, সঞ্চয়পত্র তাদের একমাত্র ভরসা।

সঞ্চয়পত্রের উৎস কর বৃদ্ধি নিয়ে খোদ সরকারী দলের মধ্যেই ক্ষোভ রয়েছে। সর্বশ্রদ্ধেয়া মতিয়া চৌধুরী সংসদে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে , সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) ‘ব্যাংকস ইন সুইজারল্যান্ড’ শীর্ষক প্রতিবেদন মোতাবেক জানা যায়, গত বছর (মাত্র ১ বছরে) সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশি অবৈধ আমানত বেড়েছে এক হাজার ২৩৪ কোটি টাকা। বর্তমানে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের অবৈধ জমা টাকার পরিমাণ প্রায় পাঁচ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকা। জমাকৃত এ টাকার পরিমাণ দেশের কমপক্ষে ১২টি বেসরকারি ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনের সমান।

সুইস ব্যাংক শুধুমাত্র বাংলাদেশী টাকার পরিমাণ উল্লেখ করেছে। কিন্তু আমানতকারীদের নামের তালিকা প্রকাশ কর নাই। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, কোন বাংলাদেশীকে সুইস ব্যাংকে টাকা জমা রাখার অনুমতি দেয়া হয় নাই। বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্ষমতা আছে সুইস ব্যাংকে আমানতকারীদের তালিকা নিয়ে আসা এবং এই টাকা ফেরত নিয়ে এসে দেশের কাজে লাগানো। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক তা করছে না, তা হলে যে থলের বিড়াল বেড়িয়ে পড়বে।

এভাবে ধনীদের টাকা দেশের কাজে না লাগিয়ে নিরব থেকে টাকা পাচারে উৎসাহিত করা হচ্ছে, অন্য দিকে গরীব ও মধ্যবিত্তদের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমে তিল তিল করে জমে উঠা সঞ্চয়ের উপর বাড়ান হচ্ছে উৎস কর। কি আজব দেশেই না বাস করি আমরা ! অথচ এই টাকা দেশে নিয়ে এলে সঞ্চয়পত্রে হাত দিতে হয় না।
ব্যারিষ্টার সুমন সমাজের বিভিন্ন অসংগতি, দুর্নীতি ফেসবুকের মাধ্যমে তুলে ধরে রীতিমত সেলিব্রেটি হয়ে গেছেন। একজন বরেণ্য ব্যারিষ্টার হওয়া সত্বেও তিনি দেশের ছোটখাট দুর্নীতিগুলি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়ার জন্য নোংরা ডাষ্টবিন ও পচা পানিতে নেমেছেন। ইতিমধ্যে তিনি বেশ কয়েকটি রিট করে সকলের নজরে এসেছেন। কয়েকটি রিটের রায় দেশের উন্নতি, সুশাসন ও জনগণের মঙ্গলে অবদান রাখবে। তার এসব ভাল কাজ বাংলাদেশের ইতিহাসে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তাই তার কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক। আমি আশা করি, এবার তিনি ছোট-খাট দুর্নীতি থেকে বড় বড় দুর্নীতির দিকে নজর দিবেন।

তিনিই পারেন দেশ থেকে সুইস ব্যাংকে পাচার হয়ে যাওয়া টাকা বাজেয়াপ্ত করে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য হাইকোটে একটি রিট করতে। কিন্তু তিনি তা করবেন কি? লোকে বলে, উপর দিকে থুথু ফেললে নাকি নিজের গায়েই পড়ে।

লেখক : সৈয়দ মোহাম্মদ আলমগীর, প্রবন্ধকার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!