ব্রেকিং নিউজ
Home | শীর্ষ সংবাদ | শুভ্রতার সুখ-দুঃখ (৩য় পর্ব)

শুভ্রতার সুখ-দুঃখ (৩য় পর্ব)

237

ফিরোজা সামাদ : রমিজা শুভ্রতার কক্ষে গিয়ে তোষক সড়িয়ে ছাদে মেলে দিয়ে অাসলো। ঘর ফার্নিচার ঝারা মোছা করে কক্ষের দরজা অালতো করে ভেজিয়ে রেখে এলো। মেয়ে কলেজ থেকে ফেরার সময় ঘনিয়ে অাসছে দেখে শাহানা বেগম নিজেই একবার শুভ্রতার কক্ষ এক নজর দেখে অাসার জন্য ঢুকলেন। তারপর রমিজাকে ডেকে বললেন,

…. রমিজা তোমার অাপার তোষকটি রোদ থেকে এনে বিছিয়ে দাও।

বলেই হঠাৎ চোখ পড়ে যায় শূন্য খাটে পড়ে থাকা নীল খামটার ওপর। কয়েক সেকেন্ড ভেবে খামটি হাতে তুলে নিয়ে নাড়াচাড়া করতেই শুকনো গোলাপ ও ভাঁজ করা চিঠির উপর চোখ অাটকে যায়। চিঠিটা হাতে নিয়ে ভাবতে থাকেন, খুলে দেখবেন কিনা ? কিন্তু তার বিবেক বাঁধা দেয়। চিঠিটা যথাস্হানে রেখে দিয়ে নিজ হাতেই বিছানা গুছিয়ে ধোয়া পরিস্কার একটি চাদর বিছিয়ে দিয়ে চলে অাসে। মায়ের মনটা অস্হির হয় গেলো নিমিষেই। মেয়েটা ভুল কিছু করছে না তো ?

কলেজ থেকে ফিরে রুমে ঢুকেই শুভ্রতা অাঁচ করে ফেললো, ওলোট পালোট কিছু একটা হয়েছে। তোষক তুলে দেখে চিঠিটা যথাস্হানে না হলেও পড়ে অাছে। দরজায় মুখ দিয়ে ডাকে…….

.. রমিজা এদিকে এসো ,
.. জ্বি অাফা কিছু কইবেন ? বলতে বলতে সামনে
দাড়ালো।
.. রুম কে গোছালো রে ?
.. মুই অার খালাম্মা ,
.. ঠিক অাছে তুমি যাও !

শুভ্রতা ভেবে পায়না মা চিঠিটা পড়েছে কি না? মায়ের প্রতিক্রিয়া ভাবতে গিয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে অাসছে । কিভাবে মুখোমুখি হবে মায়ের ? সংসারে মা’ই শুভ্রতাকে বেশি বিশ্বাস করে ভালোবাসে । অাজ কি সেই বিশ্বাস ভালোবাসা হারিয়ে যাবে ? অার কিছু ভাবতে পারেনা শুভ্রতা। মা একটু ভারী ও গম্ভীর কন্ঠে বললেন…..

.. রমিজা অাপাকে ক্ষেতে দাও,
.. খালাম্মা টেবিলে সব দেওয়া অাছে,
অাফা অাপনে খাইতে অায়েন।

শুভ্রতার ততক্ষণে ক্ষুধা শেষ হয়ে গেছে । ভয় ও কান্নায় বুকটা ভারী হয়ে অাসছে। কারন, কলেজ থেকে ফিরলে মা’ই ওকে সামনে বসে খাওয়ায় । অাজ তার ব্যাতিক্রম হচ্ছে । কিছুতেই খেতে ইচ্ছে করছে না । তারপরেও স্বাভাবিক থাকার জন্য খাবার টেবিলে গিয়ে বসলো। খাবার মুখে দিয়ে বুকের ভেতর থেকে কান্না উথলে উঠে চোখ পানিতে টলমল করে উঠলো। মনে হচ্ছে একটি ঝর হয়ে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে।

শুভ্রতার মা সামনে এসে বসলো এবং জিজ্ঞেস করলো ,

.. ছেলেটি কে? কতোদিন হচ্ছে এসব সব সত্যি বলবি,
একটুও মিথ্যে বলার চেষ্টা করবি না।
.. মা বিশ্বাস করো অামি চিনিনা, কালকেই পেয়েছি।

কিন্তু শুভ্রতার মা কিছুতেই বিশ্বাস করলেন না মেয়েকে। এখানেই মা ভুল করে ফেললেন। রাতে শুভ্রতার বাবাকে জানাতেই গোঁয়ার গোবিন্দ বাবা ভীষণ রেগে গেলেন। শুভ্রতাকে ডেকে প্রথমতঃ গালাগাল করলেন । তারপর ওর বড়ো দুই ভাইকে ডেকে শুভ্রতাকে চরম অপমান করলেন , বাপ বেটা মিলে । সে এক এলাহী কাণ্ড। মা তখন অসহায় মূর্তি । এতোকিছুর পরেও শুভ্রতা কিন্তু কিছুতেই ছেলেটির নাম পরিচয় বললো না। বাবা রেগে কাণ্ডজ্ঞানহীন হয়ে ঠাই ঠাই করে কয়েকটি চর থাপ্পড় দিয়ে ঘোষণা দিয়ে দিলো কাল থেকে কলেজ যাওয়া বন্ধ। এতোদ্রুতো ঘটনা ঘটে যাবে শুভ্রতার মা শাহানা বেগম ভাবতেই পারেননি। মেয়ের মুখের দিকে চেয়ে তারও চোখে পানি গড়িয়ে পড়লো। ভাবলো অামিই কি মেয়ের জীবনটা শেষ করার জন্য দায়ি ?

সব কিছু মিলিয়ে শুভ্রতার কেনো যেনো মরে যেতে ইচ্ছে হলো। রাতে না ঘুমিয়ে কেঁদে কেঁদে নিজের অসহায়ত্বের কাছে অাত্মসমর্পণ করলো। কোন এক সময় একটু তন্দ্রার মতো চোখের পাতা মিলিত হতেই মায়ের কোমল হাতটি ও মাথা স্পর্শ করলো। শুভ্রতা চোখ বুজে রইলো। কিন্তু দু’চোখের দু’পাশ দিয়ে ঝরঝর করে পানি গড়িয়ে পড়তে থাকে……….(চলবে)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!