ফিরোজা সামাদ : সঠিক সময় অাকাশে উড়লো সৌদিয়া বিমানটি। অাস্তে অাস্তে বিমান অাকাশে উড়ছে, অার দলছুট মেঘের মতো হারিয়ে যাচ্ছে শুভ্রতার জীবনের জন্মস্হান, বাল্য কৈশর অার যৌবনের সব স্মৃতিকাতরতা। বাবা ভাইদের শাসন শোষন, মায়ের নিবির ভালোবাসা, বন্ধু বান্ধব ও সর্বোপরি সেই একনজর দেখা প্রেমিক পুরুষের প্রেমের চিটি। যে চিঠির ফলশ্রুতিতে অাজ শুভ্রতার অচিন দেশে কেমন ভবিষ্যত জীবনে যাত্রা শুভ্রতা নিজেও জানেনা। মনে হয় বিধাতা শুভ্রতার হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছে অদেখা এক ভবিষ্যতের পথে।
শুভ্রতার চিঠখানা যথাসময় মামা জলফু ও লাবনীর হাত হয়ে মারুফের কাছে পৌঁছে গেলো। চিঠি পড়ে মারুফের মনে হলো শুভ্রতার সূচীশুভ্র জীবনে যে অনিশ্চয়তা, তার সব দায় একমাত্র মারুফের। অাজ নিজেকে নিজের কাছে বড্ড কাপুরুষ মনে হচ্ছে। মরে যেতে পারলে হয়তো এমুখ অার কাউকে দেখাতে হতো না। তাই মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো শুভ্রতার মনে কষ্ট লাগবের একটাই পথ, শুভ্রতার স্মৃতি বুকে নিয়ে বাকিটা জীবন কাটিয়ে দেয়া। কি হয় এক জীবনে বিয়ে না করলে ?
শুভ্রতা লিখেছিলো……
“_____”
সেদিন কলেজ গেটে কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে দাড়িয়ে তোমায় কথা দিয়েছিলাম, তোমার চিঠির উত্তর দিবো। হয়তো এখন অার তার কোনো প্রয়োজন ছিলোনা। কারন তোমার চিঠির প্রতিটি শব্দই মিথ্যা ও প্রতারনায় পরিপূর্ণ ছিলো। যে কথা কোনদিন রাখতে পারোনা, সেই কথা কাউকে দিতে দশবার ভেবে নিও। তোমার চিঠিটি অামার জীবনে শ্রেষ্ঠ প্রেমের চিঠি হয়ে অামার জীবনে সাঁতরে বেড়াবে নিশ্চিত। কিন্তু অাশার অালোয় নয়, শুধু অমাবস্যার অাঁধারীতে ঢেকে। তোমার সেই ঐতিহাসিক প্রেমের চিঠির প্রতিটি লাইন, প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি অক্ষর যতোটা না অামায় অানন্দে প্রেমে বিগলিত করেছিলো, ঠিক তার সহস্রগুণ অামার হৃদয় কন্টক জ্বালায় কুড়ে কুড়ে রক্তাক্ত করছে অবিরত। ভালোবাসা, প্রেম বুঝি এমনই হয়। তুমি লিখেছিলে তোমার চিঠি অামার কোনো শংকার কারন হবেনা, সত্যি অাজ অামি সব শংসয়, ঘৃণা, স্বপ্নের সীমারেখার গণ্ডি পেরিয়ে অজানার পথে। তোমার সেই কাঙ্খীত রমণীর অাখ্যান বুকে নিয়ে অচেনা নিষ্ঠুর ভালোবাসাহীন
এক পুরুষের কাহুলগ্না হয়ে যাপিত হবে অামার স্বপ্নবিহীন জীবন।
কতো রক্তের বিনীময়ে একফোটা অশ্রুর সৃষ্টি হয় তুমি জানো? জানোনা। ক’ফোটা অশ্রুজলে সাগর হতে পারে ? তুমি জানো? জানোনা। কতো ঘৃণাভরা চোখের দৃষ্টি জীবনকে কলঙ্কিত করে? তুমি জানোনা। জানলে তোমার প্রতিক্রিয়ার পথে চোখ রেখেছিলাম অার সময় গুনে গুনে ক্লান্ত অামি নিরাশায় বুক বাঁধলাম। জেনে রাখো এটা অামার চিঠির জবাব নয় , কোনো অভিযোগ নয়, এ অামার তোমাকে দেয়া কমিটমেন্ট রক্ষা করা। অামি দেখতে চাই ভালোবাসা ছাড়া মানুষ পৃথিবীতে বাঁচতে পারে কি না ? অামি নির্মমতাকে জয় করে, নিরাশাকে অাশ্রয় করে বেঁচে থাকতে চাই। বেঁচে থেকে
তোমাদের দেখাতে চাই ।
পরিশেষে একটি কথা বলেই অামি চিরদিনের জন্য লেখা শেষ করবো, অামার জীবনের একসমূদ্র দুঃখ কষ্ট , এক অাকাশ ভালোবাসার বিনিময়ে অামি তোমায় সর্বান্তকরণে অভিশাপ দিচ্ছি, অভিশাপ দিচ্ছি, অভিশাপ। দিচ্ছি, তুমি তোমার অনাগত জীবনে যেনো সুখি হও, সুখে থেকো চিরকাল,সুখে থেকো চিরকাল !!
“__________”
চিঠিখানা পড়ে হাতে নিয়ে নিরব নিস্তবতায় ঠায় বসে থাকে মারুফ……….
পাঠক শুভ্রতাকে জানতে অাপনাদের অপেক্ষা করতে হবে বারটি বছর………
(অপেক্ষায় থাকুন, অামি অাসছি)