এলনিউজ২৪ডটকম : লোহাগাড়ার বড়হাতিয়ায় করবস্থানের জায়গা ক্রয়কে কেন্দ্র করে ১৩ সদস্যের এক পরিবারকে ‘সমাজচ্যুত’ করেছেন সমাজের সর্দার। ঘটনাটি ঘটেছে ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের আনজু বাপের পাড়া এলাকায়। ভূক্তভোগীর নাম তৌহিদুল ইসলাম প্রকাশ মনু মেস্ত্রী। তিনি ওই এলাকার আবুল হাশেমের পুত্র।
জানা যায়, ওই সমাজের নিজস্ব কোন কবরস্থান নেই। তাই সমাজের মানুষ মারা গেলে অন্যদের কবরস্থানে দাফন করতে হয়। তাই সমাজের সর্দাররা সিদ্ধান্ত নেয় কবরস্থানের জন্য জায়গা ক্রয় করার। প্রথমে প্রতি পরিবার থেকে ১৫ হাজার টাকা করে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পরে তা বৃদ্ধি পেয়ে ২৫ হাজার টাকায় উন্নীত হয়। আবার সমাজের অনেকে সামর্থ না থাকায় ৫-১০ হাজার টাকা করেও দিয়েছেন।
সোমবার সরেজমিনে গিয়ে কথা বললে সমাজচ্যুত পরিবারের সদস্য তৌহিদুল ইসলাম প্রকাশ মনু মেস্ত্রী জানায়, কবরস্থানের জায়গা ক্রয় করার জন্য সমাজের সর্দারের কাছে তিন কিস্তিতে ২৫ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। পরে আরো ৫ হাজার টাকা দাবী করে সমাজপতিরা। তা পরিশোধ করতে সময় চাইলে তার নাম বাদ দিয়ে কবরস্থানের জমি রেজিষ্ট্রেরি করা হয়। এমনকি জমি রেজিষ্ট্রেরি করার সময়ও তাকে জানানো হয়নি। কবর স্থানের জমি ক্রয়ের দলিলে নাম না থাকায় প্রতিবাদ করায় গত শুক্রবার (২৪ জুন) সমাজের সর্দাররা তার পরিবারকে সমাজচ্যুত ঘোষণা করেন।
তিনি জানায়, সমাজের চলাচলের রাস্তাা দিয়ে হাঁটতে দিবে না বলে হুমকি দিচ্ছেন সমাজের সর্দররা। এছাড়া তার বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন ও কাজের লোকজন আসার পথে বাঁধা দিচ্ছে। সমাজের প্রতিটি ঘরে গিয়ে সর্দারের লোকজন সমাজচ্যুত পরিবারের লোকজনদের সাথে মেলামেশা করতে নিষেধ করা হচ্ছে। এমনকি কোন অনুষ্ঠানে সমাজচ্যুত পরিবারকে দাওয়াত না দেওয়া ও তাদের দাওয়াতেও সমাজের কেউ যাতে না আসে তাও বলে দেয়া হচ্ছে। এতে তিনি সমাজের সর্দারদের ষড়যন্ত্রের শিকার বলে জানায়।
স্থানীয় মো. মঈন উদ্দিন জানান, সমাজে একজন মানুষকে এভাবে অপমান করার কোন মানে হয় না। এ ব্যাপারে তিনি সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ কামনা করেছেন। অন্যথায় সমাজের সর্দররা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠবে।
সমাজের সর্দার আবদুল হাকিম মেস্ত্রি জানায়, কবরস্থানের জায়গা ক্রয়ের জন্য অতিরিক্ত ৫ হাজার টাকা দিতে না পারায় দলিল রেজিষ্ট্রিতে তার নাম আসে নাই। এছাড়া সমাজের সর্দারদের গালমন্দ করায় ওই পরিবারকে সমাজচ্যুত করা হয়েছে।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আবদুল আজিজ জানান, ধরে নিলাম তৌহিদুল ইসলাম প্রকাশ মনু মেস্ত্রী সমাজের সাথে অন্যায় করেছেন। শাস্তি দিলে তাকে দিতে পারে। কিন্তু মনু মেস্ত্রীর অপরাধে কারণে পরিবারের অন্যরা দোষী হতে পারে না। কবরস্থানের জন্য টাকা নিয়ে দলিলে নাম না রাখা অন্যায়। ভুক্তভোগীসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের চলাচল পথে বাঁধা দেয়া হচ্ছে। সমাজের সর্দাররা বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদেরকে একঘরে করে রাখার ঘোষণা দিচ্ছে। এতে ওই পরিবারের লোকজন চরম অপমানিত ও হেয়প্রতিপন্নের শিকার হচ্ছেন।
লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শরিফ উল্যাহ জানান, দেশের প্রচলিত আইনের বাইরে গিয়ে সমাজের সর্দাররা কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। সমাজচ্যুত পরিবারের পক্ষ থেকে কোন লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ ফেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।