Home | উন্মুক্ত পাতা | রাসুল(সা.) এর মাঝে নিহিত মু’মিনদের জন্য অসাধারণ ব্যক্তিত্ব

রাসুল(সা.) এর মাঝে নিহিত মু’মিনদের জন্য অসাধারণ ব্যক্তিত্ব

আবু বকর মুহাম্মদ হানযালা: বসন্তের প্রারম্ভ। বসন্তের আবহে জাগরিত নবীপ্রেমিক হৃদয়। ইসলামি সংস্কৃতির অনন্য ধারায় পালিত হয় পবিত্র মাহে রবিউল আউয়াল। এই মাসে রাসুল (সা.) এর শুভাগমন। যখন ঊসর-ধূসর মরুপ্রান্তরে পৌত্তলিকতা,শিরক,বিদআত ও বহুত্ববাদের জমাট অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিলো,তখনই আল্লাহ তা’আলা চির ভাস্বর ইসলামের আলোয় আলোকিত করার লক্ষ্যে তৃণশস্যহীন অঞ্চলে(মক্কায়) বনু হাশিম বংশে ১২ রবিউল আউয়াল সোমবারে এক মহামানব প্রেরণ করেন, তিনি হচ্ছেন হযরত মুহাম্মদ (সা.)। তিনি পুরো বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ। তাঁর কর্ম দীপ্ত জীবন পুরো জাতির জন্য এক প্রতিষ্ঠিত অনুকরণীয় অনুসরণীয় আদর্শ। তিনি অসামান্য সৌন্দর্যমন্ডিত ও পরিপূর্ণ স্বভাবের এমন এক ব্যক্তিত্ব, মানবসমাজে কোনকালে যাঁর তুলনা মেলে না। তিনি সর্বগুণে গুণান্বিত ও সর্বপ্রকার চরিত্র ভূষণে বিভূষিত এমন এক ব্যক্তিত্ব,যাঁর সংশ্রবে আসা যেকোনো ব্যক্তি তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা -সম্পদে হৃদয়-মন পরিপূর্ণ না করে ফিরতে পারতেন না। তিনি ছিলেন জাতি,ধর্ম-বর্ণ-শ্রেনি নির্বিশেষে সকল মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু, একান্ত নির্ভরযোগ্য সুহৃদ ও পরম হিতৈষী আপনজন। তাঁর অসাধারণ চারিত্রিক মাধুর্য ও অনুপম ব্যক্তিত্বের স্বীকৃতি দিয়ে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসুলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।’ (সুরা আহজাব : ২১)।
রাসুল (সা.) ছিলেন সকল মানবিক গুণে গুণান্বিত এক অসাধারণ ব্যক্তিত্ব। তিনি ধৈর্যশীলতা,সহনশীলতা, ক্ষমাশীলতা, মহানুভবতা, বিনয়-নম্রতা,সত্যনিষ্ঠতা,জাতি-ধর্ম-বর্ণ-দল-মত নির্বিশেষে সব মানুষের সঙ্গে সদাচরণ প্রভৃতি বিরল চারিত্রিক মাধুর্য দিয়ে পৃথিবীর বুকে শ্রেষ্ঠতর স্বভাব-চরিত্রের অতুলনীয় আদর্শ স্থাপন করেছেন। তাঁর চারিত্রিক গুণাবলি সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেছেন, ‘নিশ্চয় আপনি সুমহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত।’ (সুরা কলম : ৪)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি উত্তম চরিত্রের পরিপূর্ণতা সাধনের জন্যই প্রেরিত হয়েছি।’ (মুসনাদে আহমাদ, মেশকাত)।

তিনি বাগ্মিতার জন্যও প্রসিদ্ধ ছিলেন। অসাধারণ বাকপটু ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তাঁর সঠিক শব্দ চয়ন ও সংযোজনের মাধ্যমে পরিচ্ছন্ন বাক্যবিন্যাসের ক্ষমতা ছিল অসাধারণ। তিনি একদিকে প্রত্যন্ত মরু অঞ্চলের বেয়ারা বেদুইনের সঙ্গে যেমন সঙ্গতপন্থায় ভাব বিনিময় করতে ও বক্তব্য পেশ করতে পারতেন,অন্যদিকে নগরবাসী আরবের সঙ্গেও অত্যন্ত উন্নত ও মার্জিত ভাষায় কথোপকথন এবং বক্তব্য পেশ করতে সক্ষম হতেন। রাসুল (সা) এ নশ্বর ধরাতে আগমন করেছেন মানবজাতিকে সচ্চরিত্রবান হওয়ার অনুশীলনে অভ্যস্ত করে তোলার লক্ষ্যে।

তাঁর হায়াতে জিন্দেগী ছিল অনন্য। তিনি স্বীয় আত্মার পবিত্রতা রক্ষার জন্য তিনটি পন্থা অবলম্বন করতেন যথাক্রমে ১)কথায় অতিরিক্ত আড়ম্বরতা বর্জন,২) কোন কিছুর আধিক্য পরিহার, ৩) অনর্থক কথাবার্তা এড়িয়ে চলা। আর তিনটি অপ্রীতিকর বিষয় থেকে মনকে মুক্ত রাখতেন,১) গিবত বা পরনিন্দা, ২) অন্যকে লজ্জা দেয়া,৩) অন্যের দোষ-ত্রুটি অনুসন্ধান করা। তাঁর সৌন্দর্যমন্ডিত আচার-আচরণ, গুণাবলি ও চারিত্রিক মাধুরি মুমিন জীবনে অনুকরণ ও অনুসরণ করার মাধ্যমে মুমিন জীবন হয়ে উঠবে সুরভে সুশোভিত। এছাড়াও রাসুল (সা.) এর জীবন কৃতিত্বপূর্ণ জীবন। সমাজ,রাজনীতি, অর্থনীতিসহ মানবজীবনের সকল ক্ষেত্রে তিনি কল্যাণময় সাধন করেছেন। সমাজে সাম্য,সুবিচার, সৌহার্দ্য, সহিষ্ণুতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবিসংবাদিত কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছেন। সমাজে নারীর অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় রাসুল (সা.) এর অসামান্য অবদান ছিলো। আইয়ামে জাহেলিয়া যুগে নারী জাতির অবস্থা ছিল অত্যন্ত শোচনীয়। বিশ্ব মানবতার মুক্তির শাশ্বত আহবান নিয়ে রাসুল (সা.) এর আগমনের পূর্বে পৃথিবীর কোথাও নারীর মর্যাদা ও অধিকার স্বীকৃতি ছিল না। সকল সভ্যতায় নারী ছিল অমঙ্গল ও দুঃখের বাহন। বিভিন্ন সভ্যতা ও ধর্মে নারীকে অলক্ষী, অপয়া, অনিবার্য পাপ,নরকের দরোজা,আনন্দদায়ক প্রেমদায়িনী মনে করা হতো। সপ্তদশশতকে রোমে অনুষ্ঠিত Council of wise -এর সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল যে,”Women has no soul” অর্থাৎ নারীর কোন আত্মা নেই। চীনের ধর্ম গ্রন্থে নারীকে “Water of woe” তথা দুঃখের প্রসবন হিসেবে বিবেচনা করা হতো। আরবে নারীকে বিবেচনা করা হতো সন্তান প্রজননকারী যন্ত্র ও ভোগ পণ্য হিসেবে। লুণ্ঠিত হতো নারীর ইজ্জত। নির্বিঘ্নে নারীদেহকে পুঁজি করে নির্লজ্জ বেশ্যাবৃত্তির ঘৃণিত ব্যবসা চালাতো প্রভাবশালী আরবরা। মর্যাদাহানির এ কলঙ্কজনক হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য মেয়ে শিশু জন্ম নিলে সাথে সাথে জীবিত কবর দেয়া হতো। রাসুল (সা.) আগমণ পরবর্তীতে তিনি নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। বঞ্চনা, অবহেলা, লাঞ্চনা ও যন্ত্রণার জীবন থেকে মুক্ত করে তাদেরকে সম্মানের জীবন দান করেছেন। প্রকৃত মর্যাদায় তাদেরকে অধিষ্ঠিত করেছেন। তিনি ঘোষণা দেন,” যে ব্যক্তির একটি কন্যা সন্তান বা বোন আছে এবং সে তাকে জীবিত কবর দেয়নি,অবজ্ঞা বা তাচ্ছিল্যের ভাব দেখায়নি এবং পুত্রসন্তানকে তার কন্যা সন্তানের ওপর প্রাধান্য দেয়নি,সে জান্নাতি”।(সুনান আবু দাউদ)। নারীর উপর আরোপিত সকল অব্যবস্থা এবং অমানবিকতার বিরুদ্ধে রাসুল (সা.) সর্বাত্মক বিদ্রোহ ঘোষণা করেন।নারীকে তিনি মানুষের মর্যাদা এবং পুরুষের সমান অধিকার দিয়ে সম্মানিত করেছেন। জীবনের সকল দিক ও বিভাগে প্রাপ্য প্রকৃত মর্যাদা ও যথাযথ অধিকার তিনি নারী জন্মকে সার্থক ও মর্যাদাকর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

আসুন,আমরা আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর অনুপম গুণাবলী অনুশীলন করে চলি। তাহলে আমরা ইহকালীন কল্যাণ ও পারলৌকিক মুক্তি লাভ করব ইনশাল্লাহ।

লেখক : শিক্ষার্থী, আরবি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। মুঠোফোন : 01829910500

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!