নিউজ ডেক্স : কঠোর নিরাপত্তা, উৎসাহ উদ্দীপনা ও উৎসবের আমেজে আগামীকাল (শনিবার) ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ৮টায় ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে বিরতিহীনভাবে চলবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত।
নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে ভোটগ্রহণের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। আজ সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২ হাজার ৪৬৮টি ভোট কেন্দ্রে ভোটের সরঞ্জাম পাঠানো হচ্ছে। দুই সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাশেম ও আব্দুল বাতেন সকাল থেকে তা তদারক করছেন। -বাসস
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা জানান, নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রয়েছে। তিনি নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দেয়ার জন্য ভোটারদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন কারও সহায়ক না, কারও পক্ষে বা বিপক্ষেও না। সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে আইন অনুযায়ী কমিশন দায়িত্ব পালন করছে।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বলেন, ভোটার, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, ভোট কেন্দ্রে প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টসহ সংশ্লিষ্ট সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ভোটগ্রহণের সকল প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
টানা ২০ দিন প্রচারণা শেষে নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী বৃহস্পতিবার রাত ১২টায় সকল প্রকার প্রচারণা শেষ হয়েছে। ভোট উপলক্ষে রাজধানীতে ইতোমধ্যে মটরসাইকেল চলাচল বন্ধ হয়েছে। আজ রাত ১২টায় বন্ধ হবে সব ধরনের যান চলাচল। এ ছাড়াও আজ রাত ১২টা থেকে শনিবার রাত ১২টা পর্যন্ত নৌ চলাচলও বন্ধ থাকবে।
নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ৫০ হাজার সদস্য মোতায়েন করেছে ইসি। এদের মধ্যে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ ও আনসার নিয়োজিত থাকছে এবং বিজিবি, র্যাব ও নৌ-পুলিশ নির্বাচনী এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী বিভিন্ন বাহিনী বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ভোটের দায়িত্বে নিজ নিজ সদস্যদের নির্দিষ্ট জায়গায় মোতায়েন করেছেন।
ইসির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দুই সিটিতে ২ হাজার ৪৬৮ কেন্দ্রের মধ্যে ১ হাজার ৫৯৭টি কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ। আর সাধারণ কেন্দ্র রয়েছে ৮৭১টি। নিরাপত্তার স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে ৬ জন অস্ত্রসহ পুলিশ (একজন এসআই, একজন এএসআই ও চারজন কনস্টেবল), ২ জন অস্ত্রসহ অঙ্গীভূত আনসার এবং ১০ জন লাঠিসহ অঙ্গীভূত আনসার/ভিডিপি সদস্য (চারজন নারী ও ছয়জন পুরুষ) মোতায়েন থাকবে। আর সাধারণ ভোটকেন্দ্রে অস্ত্রসহ চারজন পুলিশ (এসআই/এএসআই ১ জন ও ৩ জন কনস্টেবল), ২ জন অস্ত্রসহ অঙ্গীভূত আনসার, ১০ জন লাঠিসহ অঙ্গীভূত আনসার/ভিডিপি সদস্য মোতায়েন থাকবে। এই হিসেবে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিয়োজিত থাকবে আনসার ও পুলিশের ৪২ হাজার ৬৮২ জন সদস্য। আর ভোট কেন্দ্র এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জন্য ৭৫ প্লাটুন বিজিবির ২ হাজার ২৫০ জন জোয়ান নিয়োজিত রয়েছে।
এছাড়া, পুলিশ ও এপিবিএন সমন্বয়ে ১২৪টি ভ্রাম্যমাণ ও ৪৩টি স্ট্রাইকিং টিম, র্যাবের ১২৯ টিম নিয়োজিত থাকছে। অর্থাৎ র্যাব, পুলিশ, এপিবিএন স্ট্রাইকিং ও ভ্রাম্যমাণ টিম মিলিয়ে প্রায় ৪ হাজারের মতো ফোর্স মোতায়েন থাকছে। সব মিলিয়ে এ নির্বাচনে ৫০ হাজারের মতো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত থাকবেন।
ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বাসসকে জানান, প্রয়োজনে মাঠ প্রশাসন তাৎক্ষণিক যেখানে যেমন দরকার সে অনুযায়ী যেকোনো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিয়োজিত করার নির্দেশনা দিয়ে রেখেছেন নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচনী আচরণ বিধি প্রতিপালন ও অপরাধের বিচার কাজের জন্য দুই সিটিতে ১২৯ জন নির্বাহী হাকিম ও ৬৪ জন বিচারিক হাকিম নিয়োগ করা হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটিতে ৫৪ জন ও দক্ষিণ সিটিতে ৭৫ জন নির্বাহী হাকিম আজ থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে থাকবেন।
এছাড়া উত্তর সিটিতে ২৭ জন ও দক্ষিণে ৩৭ জন বিচারিক হাকিম ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ঢাকার এ দুই সিটি নির্বাচন গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে দেশবাসী ও বিদেশিরা। এ নির্বাচনে মোট ২২ প্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ১৩ দেশি পর্যবেক্ষক কাজ করবেন। তাদের মধ্যে উত্তরে ৫০৩, দক্ষিণে ৪৫৭ এবং কেন্দ্রীয়ভাবে ৫৩ পর্যবেক্ষক পর্যবেক্ষণ করবেন। আর বিদেশি পর্যবেক্ষক হিসেবে কাজ করবেন মোট ৭৪জন। তাদের মধ্যে ৪৬ বিদেশি এবং ২৮ বাংলাদেশি নাগরিক রয়েছেন।
ইসি সূত্র জানায়, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে ভোটার সংখ্যা ৩০ লাখ ১০ হাজার ২৭৩ জন। এরমধ্যে পুরুষ ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ৫৬৭ এবং নারী ১৪ লাখ ৬০ হাজার ৭০৬ জন। উত্তরে মোট ভোটকেন্দ্রে ১ হাজার ৩১৮। মোট সাধারণ ওয়ার্ড ৫৪ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড সংখ্যা ১৮টি। এ ছাড়াও ভোটকক্ষ রয়েছে ৭৫৪টি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে ভোটার ২৪ লাখ ৫৩ হাজার ১৯৪ জন। এরমধ্যে পুরুষ ১২ লাখ ৯৩ হাজার ৪৪১ এবং নারী ১১ লাখ ৫৯ হাজার ৭৫৩। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১ হাজার ১৫০। সাধারণ ওয়ার্ড ৭৫ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড ২৫টি। এ ছাড়াও ভোটকক্ষের সংখ্যা রয়েছে ৮৭৬টি।