নিউজ ডেক্স : কক্সবাজারের মহেশখালীতে ১৬ ঘণ্টার ব্যবধানে পৃথক দুর্ঘটনায় শিশুসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে শুক্রবার (২২ জানুয়ারি) বেলা ১১টার মধ্যে এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
এরমধ্যে শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে মহেশখালীর মাতারবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বেলুন ফোলাতে ব্যবহার করা গ্যাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে মাদরাসার দুই শিশু শিক্ষার্থী নিহত হয়। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ১৪ জন। মাতারবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মাস্টার মোহাম্মদ উল্লাহ এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
নিহত মাদরাসা শিক্ষার্থীরা হলো আহমদ খান এহসান (১২) ও এরশাদুল রহমান (১০)। এহসান স্থানীয় দক্ষিণ মিয়াজির পাড়ার জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে ও এরশাদুল ইউনিয়নের বলিরপাড়ার আজিজুল রহমানের ছেলে।
আহতদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু। তারা হলো-মাতারবাড়ির পাশের শাপলাপুর ইউনিয়নের জেমঘাট এলাকার কবির আহমদের ছেলে নুরী (১৬), একই ইউনিয়নের সাইটমারা এলাকার নুরুল হকের ছেলে আক্কাস (১৮), মাতারবাড়ির উত্তর রাজঘাট এলাকার কাইছারুল ইসলামের ছেলে জিহাদুল ইসলাম আবদুল্লাহ (১২), নলবিলার নুর মোহাম্মদের ছেলে মারুফ (১২), সিকদার পাড়ার ফরিদুল আলমের ছেলে সাদেকুল ইসলাম রাহাত (১৩), মগডেইলের আবদুুল মান্নানের ছেলে মো. নুরী (১৩), সিকদারপাড়ার আবদুল মোনাফের ছেলে মো. তুহিন (১৪) ও বদন আলীর ছেলে জয়নাল আবেদীন (১২)।
আহত সবাইকে বিভিন্ন হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। অনেক শিশুর পা এবং শরীরের বিভিন্ন অংশ ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে। দুটি পা হারিয়ে আহত হয়েছেন বেলুন বিক্রেতাও। তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
চেয়ারম্যান মাস্টার মোহাম্মদ উল্লাহ জানান, শুক্রবার থেকে দুই দিনব্যাপী মাতারবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন আজিজিয়া মাদরাসার সভার প্রথম দিন ছিল আজ। মাহফিল উপলক্ষে স্কুলের মাঠে সিলিন্ডার থেকে গ্যাসের বেলুন ফুলিয়ে শিশুদের কাছে বিক্রি করছিলেন এক বেলুন বিক্রেতা। হঠাৎ বিকট শব্দে গ্যাস সিলিন্ডারটি বিস্ফোরিত হয় বলে স্থানীয়রা জানান। বিদ্যালয়ের মাঠে শিশুসহ নানা শ্রেণির-পেশার মানুষের উপস্থিতি ছিল।
ভয়াবহ বিস্ফোরণে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে আহতদের মাঝে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত ২ শিশুর মৃত্যু হয়। বাকি আহতদের মাঝে আরও কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন হাসপাতালে তাদের সঙ্গে থাকা স্বজনরা।
চেয়ারম্যান আরও জানান, স্থানীয় সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিকের নির্দেশে হতাহত সকল পরিবারকে নগদ ১০ হাজার টাকা করে দিয়ে দাফন ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ঘটনায় সার্বক্ষণিক খবর রাখা হচ্ছে। এখনো ঘটনাস্থলে একটি মাথা, দুটি পা ও একটি বিচ্ছিন্ন হাত পড়ে রয়েছে। তবে এগুলো কার তা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।
‘আমার এলাকার দুই শিশুর মরদেহ এলাকায় নিয়ে আসা হয়েছে। ধারণা করছি, ক্ষত-বিক্ষত অংশগুলো বেলুন বিক্রেতার শিশু সন্তানের। কিন্তু বেলুন বিক্রেতার পরিচয় জানা যায়নি।’
ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ফায়ার সার্ভিসের অফিসারসহ জনপ্রতিনিধিরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
অপরদিকে, বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) রাত ৯টায় উপজেলার ছোট মহেশখালী ইউনিয়নের মাইজপাড়ায় বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে আনোয়ার হোসেন (১৮) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। নিহত আনোয়ার মাইজপাড়া এলাকার নুরুজ্জামানের ছেলে।
একই দিন, সন্ধ্যায় হোয়ানক টাইম বাজারের কাঠ ব্যবসায়ী ভুতা মিয়া সওদাগরের বাড়িতে গাছ থেকে পড়ে গিয়ে আবুল কাশেম (২৩) নামের আরেক যুবকের মৃত্যু হয়। তিনি হোয়ানক রাজুয়ার ঘোনা গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে।
মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল হাই বলেন, ‘মাতারবাড়ী স্কুল মাঠে বিস্ফোরণের খবর পেয়ে পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। পুলিশ উদ্ধার তৎপরতা ও সেখানকার সার্বিক পরিস্থিতি দেখভাল করছে। এখনো পর্যন্ত দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে জেনেছি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বেলুন ফোলানোর গ্যাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এরপরও বিস্ফোরণের সঠিক কারণ বের করতে কাজ করছে পুলিশ।’ তিনি আরও জানান, গত রাতে পৃথক দুর্ঘটনায় আরও দুজনের মৃৃত্যু হয়। জাগো নিউজ