নিউজ ডেক্স : সাতকানিয়ায় চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কে এখনো রয়ে গেছে মাটির প্রলেপ। সড়কের মৌলভীর দোকান থেকে কেরানীহাটের মধ্যে বিভিন্ন স্থানে বিটুমিনের উপর লেগে থাকা মাটি যেন দুর্ঘটনার হাতছানি দিচ্ছে। বৃষ্টি হলেই সড়ক পিচ্ছিল হয়ে ঘটতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা। আবারো বন্ধ হয়ে যেতে পারে সড়ক যোগাযোগ। ফলে দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়ক থেকে মাটির প্রলেপ অপসারণ এবং মহাসড়কে মাটিভর্তি ট্রাক চলাচলে বিধি নিষেধ আরোপের দাবি জানিয়েছেন পরিবহন শ্রমিক ও স্থানীয়রা।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম–কক্সবাজার সড়কের সাতকানিয়া অংশের মৌলভীর দোকান থেকে কেরানীহাট পর্যন্ত এলাকায় সড়কের বিটুমিনের উপর জমাট বেঁধে থাকা মাটির প্রলেপে মঙ্গলবার সকালে বৃষ্টির পর সড়ক পিচ্ছিল হয়ে টানা ৪ ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। এসময় সড়কের দুই পাশে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হওয়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে সাধারণ মানুষ ও যাত্রীদের।
গতকাল বুধবার সকালে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার সড়কের কেরানীহাট থেকে মৌলভীর দোকান পর্যন্ত সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে সড়কের বিটুমিনের উপর এখনো এক থেকে দেড় ইঞ্চি উঁচু মাটির প্রলেপ। মঙ্গলবার সকালে সড়ক থেকে কিছু কাদামাটি সরিয়ে নিলেও সড়ক শুকানোর পর যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হলে মাটি সরানোর কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে সড়কের বিভিন্ন স্থানে এখনো রয়েছে গেছে জমাট বাঁধা মাটি। সড়কের বিটুমিনের সাথে মাটিগুলো এমন ভাবে লেগে আছে যা অপসারণও কঠিন হয়ে পড়েছে। এদিকে, সড়ক পিচ্ছিল হয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হওয়ার পর থেকে ঊধাও হয়ে গেছে মাটি ব্যবসায়ীরা। সড়কের কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে প্রতিদিন কয়েকশ’ মাটিভর্তি ট্রাক চলাচল করলেও গতকাল কোন মাটির গাড়ি চলতে দেখা যায়নি। কিন্তু সড়ক থেকে কাউকে মাটি সরাতেও দেখা যায়নি। এ অবস্থায় বৃষ্টি হলে আবারো মরণ ফাঁদে পরিণত হবে সড়ক। আবারো বন্ধ হতে পারে যানবাহন চলাচল।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, আমন ধান কাটার পর থেকে শুরু হয় মাটি ব্যবসায়ীদের দৌঁড়ঝাপ। সিন্ডিকেট করে তারা স্কেভেটর দিয়ে আবাদি জমি থেকে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করে। আর মাটিভর্তি সব ট্রাক চলাচল করে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কে। মাটি ব্যবসায়ীরা আবাদি জমিগুলো থেকে ৩৫–৪০ ফুট গভীর করে মাটি কেটে নিয়ে যায়। অভিযোগ রয়েছে, তারা জমির মালিকদেরকে মাটি বিক্রিতে বাধ্য করে। কোনভাবে একটি জমির মাটি কিনে নিতে পারলে অন্যান্য জমির মালিকরাও বাধ্য হয়ে তাদের নিকট বিক্রি করে দেয়। না হলে মাটি ব্যবসায়ীরা জমির সীমানা ধরে ৩০–৪০ ফুট গভীরভাবে মাটি কেটে নেয়। তখন অন্যের জমি তাদের দিকে ভেঙে পড়ে যায়। এতে প্রতিবাদ করলেই নেমে আসে শাস্তির খড়গ। মাটি ব্যবসায়ীদের হাতে অনেক জমির মালিককে মারও খেতে হয়েছে। আবাদি জমির উপরের অংশের মাটিগুলো শুকনো হলেও গভীরের মাটিগুলো ভেজা, নরম ও কাদাযুক্ত। অনেক সময় পানিযুক্ত নরম মাটি স্কেভেটর দিয়ে ট্রাকে তুলে দেয়া হয়। এরপর মাটিভর্তি এসব ট্রাক চলাচলের সময় সড়কের উপর নরম মাটি ও ফোটা ফোটা পানি পড়ে। সড়কে পড়া এ মাটির উপর দিয়ে বিভিন্ন যানবাহন চলতে চলতে মাটিগুলো সড়কের বিটুমিনের উপর লেগে যায়। এভাবে গত কয়েক মাস যাবৎ দিন রাত সমান তালে নরম ও কাদাযুক্ত মাটির গাড়ি চলছে মহাসড়কে। মাটিভর্তি ট্রাক চলতে চলতে সড়কের সাতকানিয়া অংশের মৌলভীর দোকান থেকে কেরানীহাট পর্যন্ত এলাকায় সড়কের বিটুমিনের উপর কয়েক ইঞ্চি উঁচু মাটির প্রলেপ পড়ে যায়। অনেক স্থানে মাটির প্রলেপের নিচে হারিয়েছে গেছে সড়কের বিটুমিন। সড়কের উপর জমাট বাঁধা মাটির প্রলেপ বৃষ্টিতে ভিজে পিচ্ছিল হয়ে যায় পুরো সড়ক।
সাতকানিয়ার ছদাহা এলাকার বাস চালক নুরুল কবির জানান, চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে এখনো মাটির প্রলেপ রয়েছে। বৃষ্টি হলে আবার পিচ্ছিল হয়ে যাবে। গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। ঝুঁকি নিয়ে চলতে গেলে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। এজন্য সড়কের উপরে জমাট বেঁধে থাকা মাটি দ্রুত সময়ের মধ্যে অপসারণ করা দরকার।
সাতকানিয়া ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি ফরিদুল আলম বলেন, কোন ইটভাটার মালিক মাটি ব্যবসার সাথে জড়িত নয়। মাটি ব্যবসায়ীরা জমির মালিকদের কাছ থেকে মাটি কিনে ইটভাটায় বিক্রি করে। এরপরও সড়ক পিচ্ছিল হয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকার জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। এ ঘটনায় আমরা সত্যিই মর্মাহত। ওইদিন অনেক মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। সড়ক পিচ্ছিল হয়ে যান চলাচল বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে আমরা শ্রমিক দিয়ে সড়কের কিছু কিছু এলাকা পরিস্কার করে দিয়েছি। তবে এখনো কিছু কিছু রয়ে গেছে। এখন সড়কে থাকা মাটিও দ্রুত সময়ের মধ্যে সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
দোহাজারী হাইওয়ে থানার ওসি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, হাইওয়ে থানার কর্মকর্তাসহ বেশির ভাগ পুলিশ মঙ্গলবার সড়কের মাটি অপসারণের কাজে ব্যস্ত ছিলেন। অনেক কষ্ট করে সড়ক থেকে পিচ্ছিল কাদাযুক্ত মাটি সরিয়ে নেয়ার পর যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। তবে এখনো কিছু কিছু এলাকায় সড়কের উপর মাটির প্রলেপ রয়েছে। এগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে সরিয়ে নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোবারক হোসেন বলেন, সকল ইটভাটার মালিককে ডাকা হয়েছে। সড়কে থাকা মাটি অপসারণ এবং মাটিভর্তি ট্রাক মহাসড়কে না চলার বিষয়ে তাদের সাথে আলোচনা করা হবে। সড়কের উপর জমাট বেঁধে থাকা মাটি অপসারণ না করলে এবং মহাসড়কে মাটিভর্তি ট্রাক চলাচল অব্যাহত থাকলে বৃষ্টি হলে আবারো সড়ক পিচ্ছিল হয়ে যাবে। তখন মানুষকে আবারো ভোগান্তিতে পড়তে হবে। এটা হতে দেয়া যাবে না। এ বিষয়ে আমরা কঠোর হবো।
দোহাজারী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তোফায়েল মিয়া বলেন, মাটিভর্তি ট্রাক চলাচলের কারণে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। সড়ক সংস্কারের সময়ও এ ধরনের মাটির প্রলেপ আমাদেরকে চরম বেকায়দায় ফেলে দেয়। সড়কের বিটুমিন থেকে মাটির প্রলেপ আলাদাভাবে খুঁড়ে নেয়াটা কঠিন হয়ে যায়। তাছাড়া মাটি আঠার মতো লেগে যায়। এতে সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেকগুণ বেড়ে যায়। তিনি আরো জানান, সড়কে থাকা মাটির প্রলেপ দ্রুত সময়ের মধ্যে সরিয়ে না নিলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। -আজাদী