Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | ভরা মৌসুমেও চড়া ইলিশ, মাঠে নামছে ভোক্তা অধিকার

ভরা মৌসুমেও চড়া ইলিশ, মাঠে নামছে ভোক্তা অধিকার

নিউজ ডেক্স : ইলিশ মাছ ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে। ইলিশ স্বাদে ও গুণে অতুলনীয়। পছন্দের তালিকায় শীর্ষে থাকলেও ইলিশ মাছ দামের কারণে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। ভরা মৌসুমেও অস্বাভাবিক চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। সরবরাহ ভালো থাকার পরও দামের কারণে ইলিশের স্বাদ নিতে পারছেন না মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো।

ইলিশের দাম ভোক্তাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্য আনতে মাঠে নামছে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিকার অধিদপ্তর। সংস্থাটি ইলিশের বাজার নিয়ে তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে। দাম নিয়ন্ত্রণে শিগগিরই মাঠে নামবে সংস্থাটি।

বুধবার (৩০ আগস্ট) রাজধানীর মিরপুরের কয়েকটি বাজারে গিয়ে দেখা গেছে সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। ক্রেতারা ভরা মৌসুমে ইলিশের অস্বাভাবিক দাম দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

ক্রেতাদের অভিযোগ, মাছের সরবরাহ যথেষ্ট হলেও ব্যবসায়ীরা দাম কমাচ্ছেন না। বাজার সিন্ডিকেটের কারণেই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ।

রাজধানীর এসব বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক থেকে দেড় কেজি ওজনের ইলিশ ১৬০০ থেকে ২০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, ছোট ইলিশের মধ্যে ৭০০-৮০০ গ্রামের ইলিশের দাম ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা, ২০০ থেকে ৪০০ গ্রামের ইলিশের কেজি ৫৫০ থেকে ৬৫০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।

এটা কীভাবে কিনে খাওয়া সম্ভব। ৫০০ গ্রামের মাছ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। একটি মাছ ৫০০ টাকা দিয়ে কিনলে বাজার থেকে আর কিছু কেনা সম্ভব না। খুচরা বাজারেও সিন্ডিকেট করে মাছ বিক্রি হচ্ছে, এভাবে চললে মানুষ বাঁচতে পারবে না বলে জানালেন শেওড়াপাড়ায় বাজার করতে আসা দেওয়ান মো. ইসমাইল।

তিনি বলেন, ইলিশ মাছ এখন স্বপ্ন হয়ে গেছে। দুই কেজি গরুর মাংসের দামে এক কেজি ইলিশ পাওয়া যায়, গতবছরও দামটা অনেকটা কম ছিল। গতবার বেশ কয়েকদিন কিনেছিলাম আর এবছর দাম শুনে শুনেই ফিরে যেতে হচ্ছে।

ইলিশ মাছ নিয়ে সারাদিন পথে পথে ঘুরেও দিন শেষে ৫০০ টাকা লাভ করতে পারি না। দামের কারণে ক্রেতা নেই বলে জানালেন ইলিশ মাছ নিয়ে ফেরি করে বেড়ানো রফিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, বড় মাছ আনি না, ছোট মাছ নিয়ে আসি। আমাদের ক্রেতা মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো। দাম চড়ার কারণে বিক্রি অর্ধেকে নেমেছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় সমুদ্রগামী ট্রলারগুলোর জ্বালানি, পরিচালনা, জেলেদের খোরাকি ব্যয়, বরফ, মজুরি বেড়ে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে দামের ওপর। শুধু তাই নয় সব পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকায় মাছের বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে বলেও তারা মনে করেন।

মিরপুরের মাছ বিক্রেতা হানিফ বলেন, গত বছরের তুলনায় ইলিশের বাজার চড়া। আড়ত থেকে চড়া দামে এনে কম দামে বিক্রি করার কোনো সুযোগ নেই। সরবরাহ বাড়ছে দাম কমলে আমরাও দাম কমিয়ে বিক্রি করবো। অন্য দিকে ডিম, পেঁয়াজ, তেল, কাঁচামরিচ ও আলুর মতো ইলিশেও সিন্ডিকেট ভর করেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এ সিন্ডিকেট ভাঙতে সরকারের হস্তক্ষেপ জরুরি। মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করলে ইলিশের দাম কমে আসবে বলেও মনে করেন তারা।

কারণ ছাড়াই কতিপয় ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছেমতো যেকোনো পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে এবং ভোক্তার পকেট থেকে অনৈতিকভাবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না বলে মনে করছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। বাংলার ইলিশ ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা কেজি দরে কিনে খেতে হবে তা কারো কাছে কাম্য নয় বলেও মনে করছে সংস্থাটি।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছ। এ মাছ প্রাকৃতিক সোর্স হতে আমরা আহরণ করছি। মাছ চাষে পুকুর লিজ, মাছের পোনা, খাবার, শ্রমিক, পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা ঠিক রাখা, পাহারা দেওয়াসহ অনেক খরচ আছে। চাষের মাছে মড়ক লাগলে কিংবা চুরি হলে… প্রচুর ঝুঁকি রয়েছে। অপরদিক প্রাকৃতিক ইলিশ আহরণ ছাড়া এখানে কোনো দৃশ্যমান খরচ নেই। এরপরও চাষের সবচেয়ে ভালো মাছ রুই কাতলের চেয়ে ভরা মৌসুমে ইলিশের মূল্য পাঁচ গুণ বেশি আমার কাছে অযৌক্তিক মনে হয়েছে। ইলিশের ল্যান্ডিং স্টেশন/আড়ত মূলত বরিশাল, চাঁদপুর, পাথরঘাটা। এসব এলাকার ইলিশের দাদন ব্যবসায়ীরাই এটির মূল্য নিয়ন্ত্রণ করে মর্মে আমার কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। বাংলার ইলিশ ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা কেজি দরে কিনে খেতে হবে তা কারো কাছে কাম্য নয়।

তিনি বলেন, আমরা ইলিশ নিয়ে কাজ করতে চাই। আমার কাছে এবিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য নেই। আমরা তথ্য সংগ্রহ করবো। ইলিশ নিয়ে গণমাধ্যমের সহযোগিতা চাই। আপনাদের সবার সাপোর্ট নিয়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ে এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে আমি কাজ করে যেতে চাই বলেও তিনি উল্লেখ করেন। -বাংলানিউজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!