নিউজ ডেক্স : চলমান বন্যায় দেশের ৩২ জেলায় ৮১ লাখ ৭৭ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ১৩৪ জন। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ছয় লাখ ৯ হাজার ৭৬১ হেক্টর জমির ফসল। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বৃহস্পতিবারের (২৪ আগস্ট) বন্যার ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের জাতীয় দুর্যোগ সাড়াদান ও সমন্বয় কেন্দ্র (এনডিআরসিসি) বন্যাদুর্গত ৩২ জেলা থেকে ক্ষয়ক্ষতির এসব তথ্য সংগ্রহ করেছে। জেলা প্রশাসক, জেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও)ও জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তার (ডিআরও) মাধ্যমে এসব তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-মধ্যাঞ্চলে বন্যা দেখা দেয়। তবে বন্যা পরিস্থিতি এখন উন্নতির দিকে।প্রতিবেদন অনুযায়ী, বন্যার কারণে ৩২ জেলার ২০৩ উপজেলা, ৫৩ পৌরসভা, এক হাজার ২৭০ ইউনিয়ন ও ৯ হাজার ১৪০ গ্রামে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে, দিনাজপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, গাইবান্ধা, নওগাঁ, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, রাঙ্গামাটি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, যশোর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল সিলেট, শেরপুর, ঢাকা, মৌলভীবাজার, কুমিল্লা, রংপুর, মানিকগঞ্জ, জয়পুরহাট, মুন্সিগঞ্জ, মাদারীপুর, নাটোর ও চাঁদপুর।
বন্যায় আমন, আউশ ও সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। ৫ লাখ ৮০ হাজার ৩৩৫ হেক্টরের জমির ফসল আংশিক ও ২৯ হাজার ৪২৬ হেক্টরের জমির ফসল সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ফসলের ক্ষতি হয়েছে দিনাজপুরে, সেখানে এক লাখ ২১ হাজার ১৭০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে।
পানিতে ডুবে, সাপের কামড়সহ বিভিন্ন কারণে ১৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে এনডিআরসিস’র তথ্যে জানা গেছে। সবচেয়ে বেশি দিনাজপুরে মারা গেছে ৩০ জন। কুড়িগ্রামে ২৩, জামালপুরে ১৪ এবং গাইবান্ধায় ১৩ জন মারা গেছে। এছাড়া নীলফামারী, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, রংপুর ও লালমনিরহাটে ৬ জন করে মারা গেছে। নেত্রকোনা, শেরপুর ও যশোরে মারা গেছে চারজন করে।
বন্যায় টাঙ্গাইল, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, কুমিল্লা, জয়পুরহাটে দুইজন করে এবং মানিকগঞ্জ ও ঠাকুরগাঁওয়ে একজন করে মারা গেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বন্যায় ৭৮ লাখ ৭৪ হাজার ২৪১ জন মানুষ আংশিক ও ৩ লাখ ২ হাজার ৮৯৪ মানুষ সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জামালপুরে, সেখানে প্রায় সাড়ে ১০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মোট ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ১৬ লাখ ৮৩ হাজার ৪৭টি। এরমধ্যে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ১৬ লাখ ২০ হাজার ৪১৩ ও সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ৬২ হাজার ৬৩৪টি। মোট ৬ লাখ ৯২ হাজার বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৬ লাখ ৩৭ হাজার ৬২২টি বাড়িঘর আংশিক ও ৫৪ হাজার ৭০১টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তার পরিমাণ ৭ হাজার ৬১১ কিলোমিটার, যার মধ্যে ৭ হাজার ৩০ কিলোমিটার রাস্তা আংশিক ও ৫৮১ কিলোমিটার রাস্তা সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৪৭১টি ব্রিজ-কালভার্ট ও ৭০২ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হাঁস মুরগী মারা গেছে ৮ হাজার ৬১০টি। সারাদেশে ৬১ হাজার ৩৯৮টি টিউবওয়েল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বন্যা দুর্গত এলাকায় ৪২৪টি আশ্রয় কেন্দ্রে এক লাখ ৩১ হাজার ৮০৪ জন আশ্রয় নিয়েছিল উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ায় এদের বেশিরভাগই ঘরে ফিরে গেছে।
অপরদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, সার্বিকভাবে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত রয়েছে। তারপরও শুক্রবার ২২টি পয়েন্টে বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সর্বশেষ বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, দেশের উত্তর অঞ্চলে (কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ) বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত থাকবে। পদ্মা নদীর পানি কমতে শুরু করায় দক্ষিণ-মধ্যাঞ্চলের (মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর) নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে।
ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর পানি কমা আগামী ৪৮ ঘণ্টা অব্যাহত থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, ঢাকার চারপাশের নদী বুড়িগঙ্গা, বালু, তুরাগ, টুঙ্গী খাল বিপদসীমার যথাক্রমে ৮৫ সেমি, ১৫ সেমি, ১৩ সেমি এবং ৯ সেমি নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে শীতলক্ষা নদী নারায়ণগঞ্জে বিপদসীমার ১৪ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
প্রকৌশলী সাজ্জাদ আরও জানান, বাংলাদেশ অংশের ব্রহ্মপুত্র-যমুনার পানি বিভিন্ন পয়েন্টে আগামী ৭২ ঘণ্টায় হ্রাস অব্যাহত থাকবে। গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি আগামী ৭২ ঘণ্টায় হ্রাস অব্যাহত থাকবে। তবে মেঘনা অববাহিকার নদীগুলোর মধ্যে কুশিয়ারা, মনু ও খোয়াই নদীর পানি আগামী ২৪ ঘণ্টায় কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে।