নিউজ ডেক্স : প্রবাসে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নেওয়ার জন্য যারা সংশ্লিষ্ট দেশে বসেই আবেদন করছেন, তাদের পাসপোর্ট ও জন্ম নিবন্ধনের তথ্যে মিল থাকতে হবে। একইসঙ্গে আবেদনের সঙ্গে দাখিল করা দলিলাদির তথ্যে অসঙ্গতি থাকলেও মিলবে না এনআইডি।
ইসি সূত্রগুলো জানিয়েছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাসরত বাংলাদেশিদের ভোটার নিবন্ধনপূর্বক জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান’ বিষয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র, ভোটার তালিকা এবং নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োগ কমিটির সভায় এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে।
কমিটির সভাপতি নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট শাখাকে নির্দেশনাও দিয়েছেন। এক্ষেত্রে কমিটির সিদ্ধান্তগুলো অনুমোদনের জন্য কমিশনের কাছে উপস্থাপনের জন্যও নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
বৈঠকের কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, আবেদনকারীকে নিজ দায়িত্বে পাসপোর্ট ও জন্মনিবন্ধন সনদ, উভয় দলিলের সঙ্গতি বজায় রাখা বাঞ্ছনীয়। প্রয়োজনে আবেদনকারীকে পাসপোর্ট অথবা জন্ম নিবন্ধন সনদ সংশোধন করতে হবে। অসঙ্গতিপূর্ণ দলিলাদির ভিত্তিতে কোনো আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না।
এদিকে আবেদন ও দাখিলকৃত দলিলাদির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কিনা তা যাচাই করা হবে। কোনো অমিল পাওয়া গেলে প্রয়োজনে ডাটা অ্যান্ট্রির সময় আবেদনকারীর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে নেবেন সংশ্লিষ্টরা। আবার প্রুফ রিডিং-এর কাজটিও অধিকতর যত্ন ও ধৈর্য নিয়ে করার বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয়েছে ওই বৈঠকে। এক্ষেত্রে দূতাবাসের ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে এ কাজের দায়িত্বে যারা আছেন তাদের নিয়মিতভাবে ডাটা অ্যান্ট্রি ও প্রুফ রিডিং কার্যক্রম মনিটরিং করতে হবে।
অন্যদিকে দ্বৈত নাগরিকত্বের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এক্ষেত্রে দুবাইতে অবস্থিত বাংলাদেশ কনসাল জেনারেলের কার্যালয় থেকে কিছু কেস স্টাডি আকারে বিস্তারিত তথ্য প্রাপ্তির পর সেগুলোকে যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনাধীন রয়েছে।
জানা গেছে, সম্প্রতি কার্যক্রম শুরু করার পর সংযুক্ত আবর আমিরাতে ২২ আগস্ট পর্যন্ত এনআইডি পাওয়ার জন্য মোট পাঁচ হাজার ৯০ জন ব্যক্তি আবেদন করেছেন। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবেদন পড়েছে চট্টগ্রামে, দুই হাজার ৩২১টি। এরপরে কুমিল্লা থেকে আবেদন পড়েছে এক হাজার ২৩৫টি। ঢাকায় আবেদন পড়েছে ৪৭৭টি। সবচেয়ে কম আবেদন পড়েছে রংপুর থেকে ৩৪টি।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত আবেদন অনুমোদন হয়েছে এক হাজার ২০৪টি। তদন্ত সম্পন্ন হওয়ার পর আবেদন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে ৩৯৪টি। এছাড়া ৫৭৯টি আবেদন বাতিল করা হয়েছে। আবেদনকারীদের উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের অধীনে তদন্তাধীন রয়েছে দুই হাজার ৯১৩টি আবেদন।
সবচেয়ে বেশি আবেদন বাতিল হয়েছে কুমিল্লায় ২৪৯টি, এরপরেই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আবেদন বাতিল হয়েছে চট্টগ্রামে ১১৮টি। ঢাকায় বাতিল হয়েছে ৭০টি আবেদন। গত ২২ আগস্ট পর্যন্ত আঙুলের ছাপ দিয়েছেন তিন হাজার ৭৯১ জন। এদের মধ্যে এনআইডি পেয়েছেন ৩৩৬ জন। পুনরায় আবেদন করেছেন নয়জন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা পেয়ে কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন ২০১৯ সালে প্রবাসে এনআইডি সরবরাহের উদ্যোগটি হাতে নেয়। ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের অনলাইনে ভোটার করে নেওয়ার কার্যক্রম উদ্বোধন করে ইসি। এর আগে ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর ইউএই প্রবাসীদের মধ্যে এ কার্যক্রম শুরু করা হয়। তার আগে একই বছর ৫ নভেম্বর মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশিদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি এবং স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার অংশ হিসেবে অনলাইনে আবেদন নেওয়ার কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। এরপর সৌদি আবর, সিঙ্গাপুর ও মালদ্বীপে থাকা বাংলাদেশিদের জন্যও এ সুযোগ চালু করা হয়।
সে সময় অনলাইনে আবেদন নিয়ে সেই আবেদন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির উপজেলা থেকে যাচাই করে সত্যতা পেলে সংশ্লিষ্ট দেশে দূতাবাস থেকে এনআইডি সরবরাহের পরিকল্পনা ছিল। এরপর করোনা মহামারির কারণে থমকে যায় দূতাবাসের মাধ্যমে এ কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনা।
কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই কার্যক্রমকে ফের উজ্জীবিত করেন। এক্ষেত্রে আগের আবেদনগুলো পাশ কাটিয়ে নতুন করে কার্যক্রম শুরু করেন তারা। ভবিষ্যতে আরও ৪০টি দেশে এনআইডি সেবা নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির।