কায়সার হামিদ মানিক, উখিয়া : কক্সবাজারের সর্বদক্ষিণে মিয়ানমার সীমান্ত সংলগ্ন ২শ ৬১ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের উখিয়া উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবহমান প্রায় ১৩টি খাল শুকিয়ে গেছে।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বঙ্গোপসাগরের মোহনা রেজুখাল অন্যতম। নাব্যতা হারিয়ে এসব খালগুলো পানি শূণ্য হয়ে পড়ার কারণে বোরো সহ রবি শস্য উৎপাদন নিয়ে কৃষকদের মাঝে দেখা দিয়েছে হতাশা। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
তাছাড়া বেগুন, মরিচ, ঢেঁড়শ, শিম, ফলুকপি, বাঁধাকপিসহ বিভিন্ন প্রকার শাকসবজি আবাদ করা হয়েছে খালের পাড়ে। কৃষকদের অভিমত খালের পানি দিয়ে তারা শাক সবজি আবাদ করে পরিবারের চাহিদা পূরণ করে উদ্বৃত্ত তরিতরকারি বাজারজাত করে পরিবারের চাহিদা মেটায়। রেজুখালের পাড়ে বসবাসরত কৃষক শামশুল আলম (৬০), জসিম উদ্দিন (৪৫) জানায়, বিভিন্ন স্থানে পাহাড় কাটা, মাটি ও বালির পলি জমে রেজুখালটি ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে জোয়ারভাটা হচ্ছে না।যে কারণে খালের উভয়পাশে বসবাসরত পরিবারগুলো তাদের আবাদ করা বোরোসহ শাক সবজি উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় কৃষিবিদ জামাল উদ্দিন জানান, এ উপজেলার খালগুলো কখনো ড্রেজিং করা হয়নি। উপরোক্ত খাল ছড়া দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণসহ পাহাড় কাটা মাটি ও বালিতে এসব খালগুলো নাব্যতা হারিয়ে ফেলার কারণে শুস্ক মৌসুমে খালগুলো শুকিয়ে মরুতে পরিণত হয়। বর্ষা মৌসুমে পানি প্রবাহে বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে খালের দু’পারে বসবাসরত অসংখ্য পরিবারকে পোহাতে হয় নানা সমস্যা। পশ্চিম ডিগলিয়া রাবার ড্যাম পানি ব্যবস্থাপনা সমিতির আওতাধীন কৃষক আব্দুর রহমান জানান,২০০৫ সালেও রেজুখালের পানি দিয়ে ডেইলপাড়া, চাকবৈঠা, দরগাহবিল, টাইপালং, হিজলিয়া, রাজাপালং, খারাশিয়া, সাদৃকাটা, তুতুরবিলসহ বেশকিছু এলাকায় হাজার হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষসহ বিভিন্ন প্রকার শাকসবজি উৎপাদন হয়েছে।
জালিয়াপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন চৌধুরী জানান, রেজুখাল থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধ বালি উত্তোলন ও খাল দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করায় এ খালটি অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। এ খালটি ড্রেজিংয়ের আওতায় আনা হলে নির্ধারিত বোরো আবাদসহ বেশ কিছু রবি শস্য উৎপাদনে অপার সম্ভাবনা দেখা দেবে। প্রতি শুষ্ক মৌসুমে খালের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় খালের পাড়ে বসবাসরত পরিবারগুলো পানির অভাবে শাক সবজি উৎপাদনসহ নিত্য ব্যবহার্য পানি সংকটে তাদের দিন কাটাতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে কৃষি অফিসার মো. শরিফুল ইসলাম জানান, ভূ-গর্ভস’ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে খালগুলি শুকিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি অধিকাংশ অগভীর নলকূপেও পানি পাওয়া যাচ্ছে না। তবে এতে বোরো উৎপাদনের কোন ক্ষতি হবে না বলে আশ্বস্ত করেন ওই কর্মকর্তা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রায় ৫ হাজারের মতো গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। যার ফলে বোরো চাষাবাদসহ বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত অগভীর নলকূপে পানি শুকিয়ে যেতে পারে। তিনি বিভিন্ন খালে অবৈধ ভাবে উত্তোলিত বালুখেকোদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে আশ্বস্ত করে বলেন,যে সমস্ত খাল বেদখল করা হয়েছে সেগুলো দখলমুক্ত করে পানি সমস্যা দূরীকরণের ব্যবস্তা নেওয়া হবে।