নিউজ ডেক্স : লোহাগাড়া–সাতকানিয়ার সীমান্তবর্তী স্থানে টংকাবতী নদীটি ডলু নদীর সাথে মিশেছে। এ স্থানটি টর মুখ হিসেবে খ্যাত। টংকাবতীর সাথে আবার বোয়ালিয়া খালের স্রোতও মিশে একাকার। স্মরণাতীতকাল থেকে লোহাগাড়া–সাতকানিয়ার অধিবাসীরা প্রতিকূল অবস্থা অতিক্রম করে যাতায়াত করে আসছেন। বর্তমানে টর খালের উপরে এলাকাবাসীরা একটি বাঁশের তর্জা দিয়ে সেতু নির্মাণ করেছেন। বর্ষাকালে নৌকার সাহায্যে পারাপার হতে হয়। এখানে একটি স্থায়ী ব্রীজ নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। বহুবার বহুস্থানে আবেদন করা হয়েছে। ভূক্তভোগীদের চোখের জলের সাথে নদীর পানি মিশে একাকার হয়েছে। ব্রীজ নির্মিত হয়নি। স্থায়ী কাঠামোর উপরে একটি ব্রীজ নির্মিত হলে ঘোর পথে লোহাগাড়া সদর ও সাতকানিয়া সদরের সাথে দূরত্ব কমে যায়। মানুষের সৌভাগ্যের সুবর্ণরেখা প্রসারিত হয়। অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে। ব্রীজটি হবে সাতকানিয়া– লোহাগাড়ার মানুষের অন্যতম সেতুবন্ধন। সম্প্রতি দক্ষিণ সাতকানিয়া গোলামবারী উচ্চ বিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মুহাম্মদ জয়নুল আবেদীন বীরবিক্রম পিএসসি আশার বাণী শুনিয়েছেন। তিনি বলেছেন, অনতিবিলম্বে ব্রীজটি নির্মিত হবে। কবে নাগাদ এ কার্যক্রম শুরু হবে তা অবশ্য এলাকাবাসীরা জানতে পারেননি। তারা আশায় বুক বেঁধে রয়েছেন। জানা যায়, লোহাগাড়া বটতলী মোটর ষ্টেশন অতিক্রম করে উপজেলার সর্বদক্ষিণ–পূর্ব সীমান্ত কেয়াজুপাড়া, ফারেঙ্গা, পানত্রিশা এমনকি লামা উপজেলার অধিবাসীরা দরবেশহাট ডিসি রোড ও স্কুল রোড ধরে সাতকানিয়া সদরে যাতায়াত করতেন। অবিভক্ত সাতকানিয়া বিভক্ত হয়ে ৯ ইউনিয়ন নিয়ে ৮০’র দশকে লোহাগাড়া উপজেলা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রবীণরা জানিয়েছেন, আগে লোকজন লোহাগাড়া বটতলী মোটর স্টেশনে একটি প্রকান্ড বটগাছের নিচে যাত্রাবিরতি করতেন। সেখানে পীরে কামেল হযরত মাওলানা আবুল খায়ের সাহেবের একটি ব্যবসা কেন্দ্র ছিল। সেখানে তিনি ক্লান্ত পথিকদেরকে নানাভাবে সহযোগিতা করতেন। শান্তির পরশ বুলিয়ে দিতেন। তখন থেকে লোহাগাড়া আমিরাবাদ এ স্থানটি বটতলী নামে খ্যাতি অর্জন করে। এলাকার কৃতিসন্তান মাষ্টার আশরাফ আলী আমিরাবাদের দক্ষিণ সাতকানিয়া গোলামবারী উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তখন থেকে বটতলী হতে টর মুখ পর্যন্ত রাস্তাটি স্কুল রোড নামে খ্যাতি অর্জন করে। আমিরাবাদের জনহিতৈষি বসন্ত কুমার দাশ বাইন্যা হাট এলাকায় একটি সরাইখানা নির্মাণ করেন। যেটি স্থানীয় ভাষায় ঝিরানীখোলা হিসেবে খ্যাত। ১৯৩৭ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয় বলে জানা যায়। বাইন্যাহাট এলাকায় বসন্তকুমার দাশের বাড়িটি এখনো শতাব্দীর সাক্ষী হিসেবে দেদীপ্যমান। তিনি গতায়ু হয়েছেন। তবে তার স্মৃতির সরাইখানাটি এখনো রয়েছে। এটি ঝোপ–জঙ্গলে পরিপূর্ণ। আগে যেখানে ক্লান্ত পথিকরা আশ্রয় নিতেন, জলপান করতেন, অনেক সময় ঘুমিয়ে পড়তেন। সেখানে বর্তমানে শিয়াল ও সরিশৃপের আবাসস্থল। টর ব্রীজের সাথে সরাইখানাটিও সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। উত্তর আমিরাবাদের বিস্তৃর্ণ অঞ্চলে বর্তমানে প্রচুর রবিশষ্য উৎপাদিত হয়। ধান চাষাবাদ হয়। অপরদিকে, টংকাবতীর অপর পাড়ে বারদোনাসহ সাতকানিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে রবিশষ্য উৎপাদিত হয়। এলাকাবাসীরা এসব পণ্য যথাসময়ে বাজারজাত করতে পারেননা বলে ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। টর মুখের উত্তর পাশে ডেপুটিহাট অবস্থিত। সেখানেও আমিরাবাদের কৃষকরা কৃষিপণ্য বাজারজাত করতেন। বর্তমানে পারেন না। ডেপুটীহাট এলাকায় ডলু নদীর উপর ষ্টিলের একটি ব্রীজ গারাংগীয়া মাদ্রাসার সাথে যুক্ত হয়েছে। এ ব্রীজ অতিক্রম করে পশ্চিমে বাংলাবাজার, দক্ষিণে সোনাকানিয়া, সেনেরহাট, হাতিয়ারকুল প্রভৃতি এলাকায় যাতায়াত করা যায়। টর মুখের সামান্য দক্ষিণে রকিয়ার পর ঘাটায় একটি অস্থায়ী বাঁশের সেতু নির্মাণ করে টোল আদায় করা হয়। এটি দায়েমিয়া সেতু নামে খ্যাতি অর্জন করেছে। এখানেও একটি ব্রীজ নির্মিত হলে গারাঙ্গিয়া ও দক্ষিণ সাতকানিয়ার সাথে লোহাগাড়ার যোগাযোগ ব্যবস্থা সুগম হয়। বর্তমানে সাতকানিয়া চৌকিতে উচ্চ আদালতের চৌকি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আদালতে যাতায়াত করতে হলে দক্ষিণ–পূর্ব লোহাগাড়ার লোকজনকে লোহাগাড়া বটতলী হতে যানবাহনে প্রথমে সাতকানিয়ার রাস্তার মাথা অতিক্রম করে ডলু ব্রীজ পর্যন্ত যেতে হয়। ফলে সময়ের অপচয় হয়। দূর্ভোগ বাড়ে। অনেক সময় বিচারপ্রার্থীরা দূর্ঘটনায় পতিত হন। যথাসময়ে আদালতে উপস্থিত হতে না পারার কথাও ভূক্তভোগীরা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্ব সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সাহসী পদক্ষেপে যোগাযোগ ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন হয়েছে। তবে লোহাগাড়ার টর মুখের ব্রীজটি নির্মিত না হওয়ায় এলাকাবাসীরা তা নিয়ে বিরূপ সমালোচনা ও মর্মবেদনায় দিনাতিপাত করছেন বলে জানা যায়। তারা বলছেন, জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালে সাতকানিয়া কাচারী মাঠে এক জনসভায় ৬ দফা প্রচারে এসেছিলেন। তাঁকেও তখন টংকাবতীর মানুষের দূর্দশার কথা বলা হয়েছিল। সভায় আমিরাবাদের অধিবাসী ও সাতকানিয়া আদালতের আইনজীবী জিয়াবুল হক সভাপতিত্ব করেছিলেন। দেশ স্বাধীন হবার পর ১৯৭৩ সালে এম ছিদ্দিক নৌকার টিকেটে এমপি হয়েছিলেন। পরবর্তীতে দীর্ঘদিন আওয়ামীলীগের কোন এমপি নির্বাচিত হননি। ২০১৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকেটে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজাম উদ্দিন নদভী এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি এ প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন, টর মুখের ব্রীজটি নির্মাণ তাঁর সরকারের অন্যতম অঙ্গীকার। আশা করা যায় অনতিবিলম্বে এটি নির্মাণের কার্যক্রম শুরু হবে। এলাকাবাসীদের দাবি ব্রীজটি নির্মাণের কাজ শুরু করা হোক। আজই। এক্ষুণি।
-মোঃ জামাল উদ্দিন