নিউজ ডেক্স : চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে নির্মিত অপরিকল্পিত স্লুইস গেইট, নদী, খাল-বিল, মাছ এবং জলজ জীববৈচিত্র্যের সর্বনাশ করছে। এই প্রক্রিয়া গত কয়েক দশক ধরে অব্যাহত থাকায় প্রকৃতিতে যে বিরূপ প্রভাব পড়েছে তাতে গভীরভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রামে এ বিষয়ে গবেষণারত প্রাণী বিজ্ঞানীরা।
তাদের মতে স্লুইস গেটের কারণে চট্টগ্রামের বহু নদী-খাল পানির প্রাকৃতিক প্রবাহ হারিয়েছে। হাজা-মজা ও বিলুপ্ত হয়ে গেছে মাছের যোগানদাতা বহু ছোট-বড় নদী-খাল। বেশ কিছু প্রজাতির মাছও বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
অভিযোগ উঠেছে, অপরিকল্পিত স্লুইস গেট নির্মাণের পেছনে সরকারি বহু সংস্থা ও মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা রয়েছে। অন্যদিকে প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত চট্টগ্রামে কতো সংখ্যক নদী, খাল আছে, কতো সংখ্যক বিলুপ্ত হয়ে গেছে তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যানও মিলছে না সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কাছে। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড, নদী গবেষণা কেন্দ্রের কাছে গিয়েও গবেষকরা সঠিক পরিসংখ্যান না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে আসছেন বলেও জানা গেছে।
চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন স্থানে কৃষি জমিতে পানির সেচের জন্য, কোথাও বা বর্ষাকালে বন্যা ও পাহাড়ি ঢল ঠেকাতে স্লুইস গেট নির্মাণ করা হয়। কিন্তু এসব স্লুইস গেট কাঙ্ক্ষিত উদ্দেশ্য পূরণ না করে উল্টো পরিবেশ-প্রকৃতির ব্যাপক ক্ষতি করেছে বলে বিশেষজ্ঞরা জানান।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া ইত্তেফাককে বলেন, অপরিকল্পিত স্লুইস গেট চট্টগ্রামের নদী-খাল ও প্রাকৃতিক প্রবাহসমূহের আন্তঃসংযোগ বিনষ্ট করেছে। ফলে চট্টগ্রামের বহু নদী, খাল ও সেসবের মাছ ও পরিবেশ বিনষ্ট হয়েছে। ফটিকছড়ির নাজিরহাট কলেজের পেছনে হালদা নদী ও মন্দাকিনী খালের সংযোগ প্রবাহটি স্লুইস গেটের কারণে শুকিয়ে গেছে। ফলে উভয় স্রোতস্বিনীই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে চট্টগ্রামের প্রধান নদী হিসেবে আলোচিত হয় কর্ণফুলী, হালদা, শঙ্খ বা সাঙ্গু নদীর কথা। কিন্তু এছাড়াও যে এখানে আরো কিছু নদী ছিল সেগুলোর তথ্য উপাত্ত কারো কাছে নেই। পরবর্তীতে স্লুইস গেটের কারণে অবলুপ্ত হওয়ার উপক্রম জেলার অসংখ্য খালেরও কোনো বিবরণ নেই। তিনি বলেন, বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত স্লুইস গেটসমূহ সঠিকভাবে পরিচালিত হয়নি। এমনকি এসব পরিচালনায় অপারেটরও নিয়োগ হয়নি।
ড. কিবরিয়া জানান, চট্টগ্রামে নির্মিত স্লুইস গেটগুলো জমির সেচ কিংবা বন্যা নিয়ন্ত্রণ কোনো কিছুরই কাজে আসছে না। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপিত এবং তার পরিচালনাধীন হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরি আগামী এক বছরে চট্টগ্রামের নদীসমূহের সঠিক পরিসংখ্যান প্রণয়নে একটি কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। -ইত্তেফাক