নিউজ ডেক্স : পতেঙ্গা সাগরপাড়ের লোকাল গাড়ির চলাচলকে আউটার রিং রোডের গাড়ি চলাচলের ক্ষেত্রে বড় ধরনের বাধা বলে মনে করা হচ্ছে। যা বহুল প্রত্যাশিত কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পের উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করবে। আর এ বাধা দূর করতে চার হাজার কোটিরও বেশি টাকা ব্যয়ে নতুন প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এতে সাব রোড নির্মাণসহ বেশ কিছু উদ্যোগের মাধ্যমে আউটার রিং রোড এবং টানেল নির্মাণের লক্ষ্য অর্জনের বাধা কাটাতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, চীনের সাংহাইর আদলে চট্টগ্রামেও ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়ে কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে টানেলের কাজ প্রায় আটান্ন শতাংশের কাছাকাছি সম্পন্ন হয়েছে। দুইটি টিউবের একটি নির্মিত হয়েছে। অপর টিউবের নির্মাণ কাজও চলছে। টানেলটি চালু হলে বছরে ৬৩ লাখ গাড়ি চলাচল করবে বলে সড়ক ও জনপথ বিভাগের সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে। ক্রমান্বয়ে গাড়ির সংখ্যা বাড়বে। টানেল চালু হলে দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ কক্সবাজারমুখী গাড়িগুলো যাওয়া-আসার ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম শহরে প্রবেশ না করে আউটার রিং রোড ব্যবহার করবে। কিন্তু আউটার রিং রোডের সামনের অংশটিতেই রয়েছে চট্টগ্রামের পর্যটন স্পট পতেঙ্গা সী বিচের অবস্থান। যেখানে রয়েছে রিক্সা, টেঙি, টেম্পো, মাইক্রোবাস বা প্রাইভেট কারসহ নানা ধরনের গাড়ির যত্রতত্র চলাচল। এতে করে টানেল থেকে বের হওয়া কিংবা টানেলে প্রবেশ করতে যাওয়া গাড়িগুলো প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়বে। যানজট সৃষ্টি হওয়ারও আশংকা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এই অবস্থার অবসানে আউটার রিং রোডের ঢালুতে পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত আলাদা একটি সাব রোড নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম ইপিজেডের অংশ বাদ দিয়ে পতেঙ্গা থেকে ইপিজেড পর্যন্ত এবং তিন কিলোমিটার বাদ দিয়ে হালিশহর থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত মোট ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ ৪০ ফুট প্রস্থের এই সাব রোড নির্মাণ করা হবে। আর সাব রোড ধরেই পতেঙ্গা বিচ কিংবা আশেপাশের এলাকার লোকাল গাড়িগুলো চলাচল করবে। টানেল থেকে বের হওয়া গাড়িগুলো যাতে আউটার রিং রোডে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতায় না পড়ে সেজন্যই এ সাব রোড নির্মাণ করা হচ্ছে।
অপরদিকে আউটার রিং রোড পতেঙ্গা থেকে শুরু করে সাগরিকা পর্যন্ত আসার পর বন্দর টোল রোডে যুক্ত হয়েছে। বিদ্যমান অবস্থায় টানেলের সব গাড়িকে আউটার রিং রোড ধরে আসলেও সাগরিকা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত টোল রোড ব্যবহার করতে হবে। আবার ঢাকা থেকে আসা গাড়িগুলোকেও ফৌজদারহাট থেকে টোল রোড ধরে সাগরিকা পর্যন্ত আসার পরই আউটার রিং রোডের নাগাল পাবে। টানেল চালু হওয়ার পর প্রত্যাশিত বিপুল সংখ্যক গাড়ির চাপ বন্দর টোল রোড সামলাতে পারবে না। ফৌজদারহাট থেকে সাগরিকা পর্যন্ত নতুন রোড করে টোল রোড এবং আউটার রিং রোডকে আলাদা করা না হলে পুরো উদ্দেশ্যই মুখ থুবড়ে পড়বে। পোর্ট ট্রাফিকের সাথে টানেল ট্রাফিক যুক্ত হয়ে সিটি ট্রাফিকের অবস্থা বেহাল করে তুলবে বলেও বিশেষজ্ঞরা আশংকা প্রকাশ করেছেন।
এই আশংকা থেকেই মূলত সিডিএ সাগরিকায় টোল রোডের সাথে আউটার রিং রোডকে যুক্ত না করে আলাদা একটি রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। প্রায় ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ চার লেনের রাস্তাটি আউটার রিং রোডকে সাগরিকা থেকে ফৌজদারহাটে নিয়ে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাথে যুক্ত করবে। এতে টানেলের গাড়ি আউটার রিং রোডে এবং বন্দর এবং শহরের গাড়ি টোল রোড ধরে চলাচল করতে পারবে।
অপরদিকে আউটার রিং রোডকে শহর ট্রাফিকের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার করার জন্যই সাগরপাড় থেকে বড়পুল পর্যন্ত তিন কিলোমিটারের একটি ফিডার রোড নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই ফিডার সড়কের দুই কিলোমিটার ৬০ ফুট প্রস্থ এবং এক কিলোমিটার ৯০ ফুট প্রস্থ করে নির্মাণ করা হচ্ছে। ফিডার রোডটি নির্মাণের ক্ষেত্রে ওয়াসার সাথে কিছু জটিলতা থাকলেও তা মিটিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই এটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলেও সিডিএর দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামস নতুন এই প্রকল্প গ্রহণের কথা স্বীকার করে বলেছেন, বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। টানেলের গাড়ি চলাচল নির্ঝঞ্জাট করতে প্রকল্পটি গ্রহণ করতে হয়েছে। পতেঙ্গা থেকে ফৌজাদরহাট পর্যন্ত সাগরপাড়ে রাস্তাটি আউটার রিং রোড হলেও কার্যত টানেলের কারণে এটি একটি ‘ডেটিকেটেড হাইওয়ে’ হয়ে উঠেছে। এই রাস্তাটির সুফল পুরোপুরি পেতে হলে নতুন একটি সাব রোড নির্মাণ করে লোকাল গাড়ি নামিয়ে আনতে হবে। অন্যথায় ‘ডেডিকেটেড হাইওয়ে’র সুফল মিলবে না। বিষয়টি অনুধাবণ করেই সিডিএ নতুন প্রকল্প গ্রহণ করেছে বলেও কাজী হাসান বিন শামস দৈনিক আজাদীকে জানিয়েছেন। দৈনিক আজাদী