নিউজ ডেক্স : কক্সবাজার এখন লাখো পর্যটকে ভরপুর। কিন’ বৈরি পরিবেশের কারণে বঙ্গোপসাগর উত্তাল থাকার কারণে নৌ-চলাচল বন্ধ থাকায় লোকজন প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন, মহেশখালীর সোনাদিয়া ও আদিনাথ মন্দির যেতে পারছেন না। কেউ কেউ ঝুঁকি নিয়ে মহেশখালী আদিনাথ মন্দির ও বৌদ্ধ মন্দিরসহ রাখাইন পল্লী যাচ্ছেন।
হোটেল মালিকরা জানান, ঈদের দ্বিতীয় দিন সকাল থেকে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত সৈকতে জড়ো হয়েছে প্রায় তিন লক্ষাধিক পর্যটক। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে স’ানীয় আরও অন্তত ৫০ হাজার মানুষ। সব মিলিয়ে পাঁচ কিলোমিটারের বিশাল সৈকত পর্যটকে ভরে গেছে। আজ শনিবার পর্যন্ত আরো লক্ষাধিক পর্যটক সৈকত ভ্রমণে থাকবে বলে আশা হোটেল মালিকদের।
কক্সবাজার হোটেল মোটেল ও গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির মুখপাত্র মোহাম্মদ কলিমুল্লাহ বলেন, ‘ঈদকে কেন্দ্র এক সপ্তাহে হোটেল, মোটেল, কটেজ ও গেস্টহাউস, রেস্তোরাঁয় প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ব্যবসা হবে। বর্ষা মৌসুমের ভ্রমণকে কাজে লাগানোর জন্য ইতিমধ্যে হোটেল-মোটেল মালিকেরা ৪০-৬০ শতাংশ পর্যন্ত কক্ষ ভাড়ায় বিশেষ রেয়াত দিচ্ছেন।’
গতকাল শুক্রবার দুপুরে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে গিয়ে দেখা গেছে, হাজার হাজার পর্যটক পানিতে নেমে গোসল করছেন। উত্তাল সাগরে ঢেউয়ের ধাক্কায় কোনো পর্যটক যেন সমুদ্রে ভেসে না যান, সে জন্য লাইফগার্ডের কর্মী, ডুবুরি ও টুরিস্ট পুলিশ লোকজনকে সতর্ক করছেন। ভাটার সময় গোসলে নামলে স্রোতের টানে লোকজন গভীর সাগরে ভেসে যেতে পারে, সে ব্যাপারে লোকজনকে সতর্ক করতে বালুচরে উড়ানো হচ্ছে লাল পতাকা। লাল পতাকা উড়তে দেখা গেলে গোসলে নামা বিপদ। আর জোয়ারের সময় গোসল নিরাপদ। এ সময় উড়ানো হয় সবুজ পতাকা।
এসময় সৈকতের কলাতলী পয়েন্টে কথা হয় রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে আসা হাসান জাবেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে একটু নিরিবিলি পরিবেশে থাকার জন্য কক্সবাজার সৈকতে ছুটে এসেছি। কিন’ এখানে এসে দেখছি লাখো মানুষে ভরপুর।
ঢাকা থেকে আসা আরেক পর্যটক আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘বর্ষায় সমুদ্রের রূপ অন্য রকম। উত্তাল সমুদ্রেরএকেকটা ঢেউ এবং সমুদ্রের বিশালতা মানুষের মনকে জাগিয়ে তুলছে।
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টুয়াক) এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এস এম কিবরিয়াহ বলেন, ‘বিপুলসংখ্যক পর্যটক নিরাপত্তা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। সন্ধ্যার পর শহরের অলিগলি অন্ধকারে ডুবে থাকে। মেরিন ড্রাইভ সড়ক অরক্ষিত। সৈকতের অরক্ষিত ৯০ কিলোমিটার সৈকতে পর্যটকদের দেখভালের কেউ নেই। সেখানে গোসলে নেমে কোনো পর্যটক বিপদে পড়লে উদ্ধারেরও কেউ নেই।’
কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার ফজলে রাব্বী বলেন, ‘ঈদের কয়েক দিনের ছুটিতে পাঁচ লাখের বেশি পর্যটকের সমাগম ঘটবে। বিপুলসংখ্যক পর্যটকের নিরাপত্তার জন্য ১২২ জন টুরিস্ট পুলিশসহ আরও কিছু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য কাজ করছেন।’
টুরিস্ট পুলিশ সূত্র জানায়, জোয়ার-ভাটা দেখে গোসলে নামার জন্য পর্যটকদের সতর্ক করে প্রতিদিন প্রচারণা চালানো হলেও কেউ তা আমলে নিচ্ছেন না। ভাটার সময়ও অনেকে উত্তাল সমুদ্রে ঝাঁপ দিয়ে অনেকে বিপদে পড়ছেন। গত ২০ দিনে সৈকতের গোসলে নেমে তিনজনের মৃত্যুও হয়েছে। এর মধ্যে একজন বিদেশি, তিনি জাতিসংঘের কর্মকর্তা। অপর দুজন রাজধানীর দুটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। সৈকতের পর্যটকদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ইয়াছির লাইফগার্ড স্টেশনের পরিচালক ও নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ডুবুরি মোস্তফা কামাল বলেন, ‘সৈকতে এখন উত্তর-দক্ষিণ লম্বা কয়েকটি গুপ্ত খালের সৃষ্টি হয়েছে। ভাটার স্রোতে ভেসে গিয়ে কেউ খালে আটকা পড়লে উদ্ধার করা কঠিন।’ সৈকতে জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের দায়িত্বে নিয়োজিত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সেলিম শেখ বলেন, ‘ঈদের দিন থেকে সৈকতে ভ্রাম্যমাণ আদালত সক্রিয়। হোটেল মোটেলগুলোতে অতিরিক্ত কক্ষ ভাড়া ও রেস্তোরাঁগুলোতে খাবারের অতিরিক্ত দাম হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে কি না, তা-ও দেখছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।’