ব্রেকিং নিউজ
Home | ব্রেকিং নিউজ | আলমগীর হত্যাকান্ড : ছয় সপ্তাহেও থামছে না স্বজনদের কান্না

আলমগীর হত্যাকান্ড : ছয় সপ্তাহেও থামছে না স্বজনদের কান্না

161

নুরুল ইসলাম : পার্বত্য বান্দরবানের লামা উপজেলায় নির্মমভাবে হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন লোহাগাড়ার যুবক মোহাম্মদ আলমগীর সিকদার (৪৩)। এ হত্যাকান্ডের ঘটনার ৬ সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও লোহাগাড়ার গৌড়স্থান গ্রামের বাড়িতে থামছে না স্বজনদের কান্না। আলমগীরের মা-বাবা, স্ত্রী, ৩ সন্তান ও ভাই-বোনসহ স্বজনদের আহাজারীর শেষ নেই। আলমগীরের কথা বলেই কেঁদে উঠেন সবাই। বিশেষ করে তার দু’ছেলে ও এক মেয়ে তাদের আব্বার কথা বলে নীরবে অশ্র“ ঝরাই। মনের অজান্তে খুঁজছে বাবাকে তারা।

হত্যকান্ডের শিকার মোহাম্মদ আলমগীর লোহাগাড়া উপজেলার পুটিবিলা ইউনিয়নের গৌড়স্থান গ্রামের হাজী মোহাম্মদ আলীর প্রথম ছেলে। আলমগীরের হত্যকান্ডের সময় বাবা মোহাম্মদ আলী ও মা বেগম মোহাম্মদ আলী পবিত্র হজের উদ্দেশ্যে ছিলেন সৌদিয়া আরবের মক্কায়। হজ শেষে গত ৩১ আগষ্ট তারা দু’জনই গৌড়স্থান গ্রামের নিজ বসতঘরে এসে পৌঁছেন। দু’দিন পর মোহাম্মদ আলী ও বেগম মোহাম্মদ আলীর সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। হাজী মোহাম্মদ আলী বলেন, মক্কায় ছেলে হত্যার সংবাদ পেয়ে বেগম মোহাম্মদ আলীসহ তাৎক্ষণিকভাবে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। পুত্র হত্যার যন্ত্রণা বুকে চেপে রেখে হজ পালন করেছেন তারা। তিনি আরো বলেন, প্রতি মুহুর্তে মনে পড়ছে ছেলে আলমগীরের কথা। মনের পর্দায় বার বার ভেসে উঠছে ছেলের স্মৃতিগুলো। মোহাম্মদ আলীর দাবী তার ছেলের হত্যাকারীদের যেন যথাযথ বিচার হয়, সর্বোচ্চ শাস্তি হয়। আর যেন কোন মা-বাবার পুত্র নিষ্ঠুর হত্যাকান্ডের শিকার না হয়। কোন শিশু সন্তান যেন পিতাহারা না হয়। কোন স্ত্রী যেন অকালে বিধবা না হয়। বেগম মোহাম্মদ আলী পুত্র শোকে মুহ্যমান। বার বার বলছেন ছেলে আলমগীর কই। সে তো মা-বাবাকে হজ করতে পাঠিয়েছিলেন। ছেলে এখন মা বলে ঢাকছে না কেন। কাছে আসছে না কেন সে।

নৃশংস হত্যার শিকার লোহাগাড়ার এ যুবক মোহাম্মদ আলমগীর পার্বত্য লামা উপজেলার সরই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-সভাপতি ছিলেন। তার বাবা মোহাম্মদ আলীও সরই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন দু’বার। তাদের জায়গা-জমি ও ব্যবসা-বাণিজ্য রয়েছে সরই ইউনিয়নে। সরই ইউনিয়নে পারিবারিকভাবে তাদের খ্যাতি রয়েছে।

মোহাম্মদ আলমগীরকে দুর্বৃত্তরা নির্মমভাবে হত্যা করে গত ২৩ জুলাই মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টায়। লোহাগাড়া উপজেলার পুটিবিলা ইউনিয়নের গৌড়স্থান গ্রাম সংলগ্ন হাছনা ভিটা এলাকায় ঘটেছে এ হত্যাকান্ড। ঘটনাস্থলটি পার্বত্য লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের অংশ। আলমগীর হাছনা ভিটা এলাকায় নিজের প্রতিষ্ঠান খামার থেকে গৌড়স্থান গ্রামের বসতঘরে ফেরার পথে পূর্ব থেকে পাহাড়ের পাশে ওৎপেতে থাকা দুর্বৃত্তরা তাকে কুপিয়ে হত্যা করে। ঘটনাস্থলেই তিনি প্রাণ হারান। ঘটনার পর হত্যাকান্ডে জড়িত সন্দেহে প্রথমে সায়মন ত্রিপুরা ও পরে বীর বাহাদুর ত্রিপুরা আটক হয়। তারা এখন বান্দরবানের শ্রীঘরে। স্থানীয় সূত্র ও লামা থানা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম এসব তথ্য জানিয়েছেন। এছাড়াও লোহাগাড়া উপজেলার তৈয়ব তাহের নামে এক ব্যবসায়ী ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছেন। ঘটনার ব্যাপারে পার্বত্য লামা থানায় রুজুকৃত মামলার বাদী আলমগীর সিকদারের ভাই মানিক সিকদার।

সূত্র মতে, আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিতে গিয়ে বীর বাহাদুর ত্রিপুরা প্রকাশ করেছে লোহাগাড়ার সাংবাদিক সেলিম উদ্দিনের নাম। বীর বাহাদুর ত্রিপুরা জবানবন্দী মতে হত্যাকান্ডে ওই সাংবাদিক জড়িত ছিলেন। পরিকল্পনাকারীও তিনি। অভিযুক্ত সাংবাদিক সেলিম উদ্দিন গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে রয়েছেন বলে জানা গেছে। এ হত্যাকান্ডে সহযোগী ছিল আরো ৪/৫ জন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম মুঠোফোনে জানিয়েছেন, অভিযুক্ত আসামীদের গ্রেফতারের জন্য তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!