নিউজ ডেক্স : আজ ভয়াল ২৫ মার্চ, জাতীয় গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে মধ্যরাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত হয়ে কাপুরুষের মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ঘুমন্ত বাঙালিদের ওপর। স্বাধিকারের আন্দোলনরত বাঙালিদের কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দিতে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে পরিকল্পিত এক অভিযানে এই রাতে হত্যা করা হয় অসংখ্য নিরপরাধ মানুষকে। গণহত্যার তাণ্ডবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজারবাগ পুলিশলাইনসহ গোটা ঢাকা পরিণত হয় মৃত্যুপুরীতে।
বুড়িগঙ্গা নদীর দুই তীর ভরে যায় লাশের স্তূপে। একই সময় ঢাকার বাইরেও চলে হত্যাকাণ্ড। পরবর্তী সময়ে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ২৫ মার্চের গণহত্যা শুধু এক রাতের হত্যাকাণ্ডই ছিল না, এটি ছিল মূলত বিশ্ব সভ্যতার এক কলঙ্কজনক জঘন্যতম গণহত্যার সূচনা মাত্র।
অস্ট্রেলিয়ার ‘সিডনি মর্নিং হেরাল্ড’ পত্রিকার ভাষ্যমতে, শুধু ২৫ মার্চ রাতেই বাংলাদেশে প্রায় এক লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল, যা গণহত্যার ইতিহাসে এক জঘন্যতম ভয়াবহ ঘটনা। পরবর্তী ৯ মাসে একটি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে ৩০ লাখ নিরপরাধ নারী-পুরুষ ও শিশুকে হত্যার মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি হানাদার এবং তাদের দোসররা পূর্ণতা দিয়েছিল সেই ঘৃণ্য ইতিহাসকে।
সেনা অভিযানের শুরুতেই হানাদার বাহিনী বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের আগে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং শেষ শত্রু বিদায় না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধুর এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালি জাতি পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
এর পর দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র লড়াই শেষে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পূর্ণ বিজয় অর্জন করে। বিশ্ব মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে বাংলাদেশের। জাতীয় সংসদে ২০১৭ সালের ১১ মার্চ ২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস পালনের প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হওয়ার পর থেকেই দিনটি বিশেষ মর্যাদায় পালন হয়ে আসছে।
২৫ মার্চ স্মরণে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে আজ রাত ৯টা থেকে ৯টা ১ মিনিট পর্যন্ত জরুরি স্থাপনা ও চলমান যানবাহন ব্যতীত সারাদেশে প্রতীকী ব্ল্যাকআউট কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। এ ছাড়া স্কুল-কলেজ ও মাদরাসাসহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কণ্ঠে ২৫ মার্চ গণহত্যার স্মৃতিচারণ ও আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে গণহত্যার ওপর দুর্লভ আলোকচিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে।