এলনিউজ২৪ডটকম : লোহাগাড়া উপজেলার হাটবাজার,পাড়া-মহল্লা,পথে-ঘাটেসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে চলছে ক্রিকেট ও লুডুর খেলার নামে ডিজিটাল জুয়া খেলা। এতে সর্বস্বান্ত হচ্ছে অনেকেই। ডিজিটাল জুয়া খেলার বিরুদ্ধে প্রশাসনের নজরদারী বাড়ানোর দাবী জানিয়েছেন এলাকার সচেতন মহল।
জানা যায়, জানা যায়, এক সময় দেখা যেত বাশঁঝাড় কিংবা মাঠে, বাড়িতে তাশ,ডাবুর গুটি দিয়ে অবাধে জুয়া খেলত। প্রশাসন ও স্থানীয়দের তৎপরতার কারণে ওইসব খেলা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে এন্ড্রয়েট মোবাইল সেটে লুডু সফটওয়্যার লোড করে ডিজিটাল পদ্ধতিতে জুয়া খেলছে। পাশাপাশি আরেকটি বিশ্ববাসীর সবচেয়ে বড় জুয়া খেলার অন্যতম পদ্ধতি সেটা হল ক্রিকেট জুয়া। আর এই খেলায় মেতে উঠে হাজার, হাজার টাকা বাজি করে অনেকে সর্বসান্ত হয়ে গেছে। জুয়া খেলায় প্রতিদিন জুয়াড়িদের সঙ্গে বেকার তরুণ, রিকশা, ভ্যানচালক, হোটেল কর্মচারী এমনকি স্কুল-কলেজের ছাত্ররাও মেতে উঠেছে।
গ্রামে সাধারণ শ্রমিকরা সারাদিন মাঠে কাজ করে যে মজুরি পায় সেটা দিয়ে পরিবারের খরচ না করে রাতে হাট-বাজারের দোকানে বসে, গাছ তলায় বসে মোবাইলে লুডুর মাধ্যমে অবাধে জুয়া খেলে নিঃসহ হচ্ছে। অপরদিকে জুয়া খেলে হেরে পরিবারের খরচ জোগাতে না পেরে নানা রকম ঝগড়া ফাসাদে লিপ্ত হচ্ছে।
এদিকে, আইপিএল, বিপিএলসহ বিভিন্ন ক্রিকেট খেলা যখন শুরু তখন হাট-বাজারের বিভিন্ন দোকানের টেলিভিশনের সামনে বসে যুবক ও বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ বসে আরেক বাজিমাতে লিপ্ত হয়ে থাকে। আর সেখানে সবচেয়ে বড় ক্রিকেট বাজিমাত জমজমাট জুয়ার আসর হয়। ক্রিকেট খেলায় রানের টার্গেট, উইকেট পতন, কে কত রান করবে, বলে রান, কোন দল জিতবেসহ নানা ধরনের অজুহাতে হাজার, হাজার টাকা বাজি ধরে থাকে এসব খেলায়। আবার শক্তিসালী দলের সঙ্গে দুর্বল দলের খেলা থাকলে সেক্ষেত্রে দেয়া হয় লোভনীয় অফার। সরাসরি জুয়ার বাজি ধরার মতো মোবাইল ফোনেও জুয়ার বাজি ধরে হয় তবে এ ক্ষেত্রে একজন মাধ্যম থাকে। একাধিক সূত্রে জানা যায় ক্রিকেট বাজি এ খেলায় অনেক তরুণ ও ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ নিঃস হয়ে গেছে। খেলাধুলা থাকবে তবে বাজিমাত থাকবে না। যেভাবে ক্রিকেট বাজিমাতে যুবকসহ বিভিন্ন পেশাজীবীর মানুষ লিপ্ত হয়ে নিঃসহ হয়েছে এখন যদি বন্ধ না হয় তাহলে ভবিষ্যৎতে এর ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে বলে অনেকের মন্তব্য করেন।
এছাড়াও যুক্তরাজ্যভিত্তিক ক্রীড়া বাজির ওয়েবসাইট ‘বেট ৩৬৫’ ডটকম। ‘বেট ৩৬৫’ মূলত ক্রীড়াবিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক বেটিং (বাজি ধরার) সাইট; যেখানে বিশ্বের যে কোনো স্থানের ১৮ বছর বা এর বেশি বয়সের যে কেউ যে কোনো খেলা নিয়ে অন্যদের সঙ্গে বাজি ধরতে পারেন। ১০ টাকায় ৭০০ টাকা, ২০ টাকায় ১৪০০ টাকা; অর্থাৎ প্রতি টাকার বদলে ৭০ গুণ লাভ এমন আশায় হুমড়ি খেয়ে পড়ে সর্বস্ব হারাচ্ছেন শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশার তরুণ ও যুবকরা। যেহেতু এ ব্যবসায় ১৮ বছরের নিচে কেউ অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন না, তাই অন্যের অ্যাকাউন্ট কিনেই জুয়ায় বা বাজিতে অংশ নিচ্ছে তারা। ল্যাপটপ, ডেস্কটপ বা মোবাইল সবকিছু দিয়েই এ সাইটে ব্রাউজ করা সম্ভব। আর আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বিবেচনায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় নেটেলার এবং স্ক্রিল নামক দুটি সাইট।
আইটি বিশেষজ্ঞের মতে, বর্তমানে লোহাগাড়ায় শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন বয়সের নানা পেশার অর্ধলক্ষাধিক তরুণ এ অনলাইন জুয়া খেলায় জড়িত রয়েছে। মূলত যুক্তরাজ্য থেকে নিয়ন্ত্রণ হয়ে থাকে এ ‘বেট ৩৬৫’ সাইটটি। নিম্ন আয়ের লোকসহ সব ধরনের পেশার লোক এটি এখন খেলছে। সবার হাতেই স্মার্টফোন। এ কারণে এটি খেলতে অন্য কোথাও যাওয়া লাগে না। বাসায় বসেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে খেলা যায়।
এলাকার সচেতন মহল মনে করছেন, বিভিন্ন হাটবাজার,পাড়া-মহল্লা,পথে-ঘাটেসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রশাসনের নজরদারী বাড়িয়ে এসব ডিজিটাল জুয়া খেলা বন্ধ করা প্রয়োজন। নচেৎ যুবসমাজ দিন দিন বিপথগামী হচ্ছে। হবে।