নিউজ ডেক্স : মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে নমুনা পরীক্ষার পরিমাণ বাড়িয়ে দ্রুত আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্তের কথা বলা হলেও চট্টগ্রামে দুই দিনের ব্যবধানে অর্ধেকে নেমে গেছে নমুনা পরীক্ষার পরিমাণ।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৫৯০টি। যা গত ১৭ দিনে চট্টগ্রামে সর্বনিম্ন নমুনা পরীক্ষা এবং ২৫ জুন করা ১ হাজার ৯৩টি নমুনা পরীক্ষার প্রায় অর্ধেক।
এরআগে গত ১০ জুন চট্টগ্রামে ৩৬৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এরপর থেকে গত ১৬ দিনের মধ্যে ২ দিন ১ হাজারের বেশি, ৩ দিন ৯০০ এর বেশি, ৩ দিন ৮০০ এর বেশি, ৬ দিন ৭০০ এর বেশি, ১ দিন ৬০০ এর বেশি এবং ১ দিন ৫৯৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয় চট্টগ্রামে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী চট্টগ্রামে ১১ জুন ৭৩৮টি, ১২ জুন ৮৭৪টি, ১৩ জুন ৮৫৬টি, ১৪ জুন ৭০৩টি, ১৫ জুন ৫৯৯টি, ১৬ জুন ৭৮১টি, ১৭ জুন ৭৯৬টি, ১৮ জুন ৭২১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়।
এরপর ১৯ জুন ৭৭৩টি, ২০ জুন ৬৭০টি, ২১ জুন ১ হাজার ৪৯টি, ২২ জুন ৯২৬টি, ২৩ জুন ৯৯১টি, ২৪ জুন ৯৭১টি, ২৫ জুন ১ হাজার ৯৩টি, ২৬ জুন ৮৯০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয় চট্টগ্রামে।
গত ২৫ মার্চ থেকে চট্টগ্রামে করোনার নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়। ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) এর ল্যাবে এসব নমুনা পরীক্ষা করা হয়।
এরপর ২৫ এপ্রিল থেকে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্সস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু) ল্যাবে করোনার নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়। ৯ মে থেকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ল্যাব এবং ত্রুটি কাটিয়ে ১০ জুন থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবে করোনার নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়।
এর বাইরে কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ ল্যাবে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া এবং লোহাগাড়া উপজেলার নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। বেসরকারিভাবে খুলশীর ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল এবং শেভরণ ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরি ল্যাবে করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নমুনা পরীক্ষার ল্যাব বৃদ্ধি করা হলেও চট্টগ্রামে নমুনা পরীক্ষার পরিমাণ কমে যাওয়ায় এই অঞ্চলে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত শনাক্ত করা কঠিন হয়ে যাবে। নমুনার জট বাড়বে।
ল্যাবগুলোতে সক্ষমতার সবোর্চ্চ ব্যবহার করে করোনার নমুনা পরীক্ষা বৃদ্ধির পরামর্শ দিয়েছেন তারা। আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত শনাক্ত করা না গেলে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ আরও বাড়ার শঙ্কা তাদের।
এই প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া জানান, করোনার সংক্রমণ কমাতে বেশি নমুনা পরীক্ষা এবং শনাক্তের বিকল্প নেই। কারণ আক্রান্ত ব্যক্তিকে শনাক্ত করা না গেলে তাকে আইসোলেশনে রাখা বা করোনার চিকিৎসা দেওয়া যায় না।
তিনি করোনার নমুনা পরীক্ষার ল্যাবগুলোর সর্বোচ্চ সক্ষমতা ব্যবহার করে বেশি নমুনা পরীক্ষার পরামর্শ দেন।
নমুনা কম, তাই পরীক্ষাও কম!
শুক্রবার ল্যাবগুলোতে সংগৃহীত নমুনা কম যাওয়ায় শনিবার কম নমুনা পরীক্ষা হয়েছে বলে দাবি করেছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি।
তিনি বলেন, শুক্রবার করোনার নমুনা পরীক্ষার ল্যাবে নমুনা কম গেছে। তাই নমুনা পরীক্ষা কম হয়েছে। কয়েকটি ল্যাবের নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন পেতে দেরি হওয়ায় প্রতিবেদনে সেগুলো উল্লেখ করা হয়নি। এ কারণে নমুনা পরীক্ষা কম দেখা যাচ্ছে।
‘কিটের কিছুটা সংকটও আছে। ঢাকায় কিট আনতে পাঠানো হয়েছে। নতুন কিট এলে আমরা আবারও নমুনা পরীক্ষার পরিমাণ বাড়াতে পারবো।’ যোগ করেন সিভিল সার্জন।
৩ এপ্রিল চট্টগ্রাম নগরের দামপাড়া এলাকায় ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তির শরীরে প্রথম করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়। সর্বশেষ ২৮ জুন সকালে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী চট্টগ্রামে এখন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৭ হাজার ৬৮৯ জন। বাংলানিউজ