নিউজ ডেক্স : সদরঘাট থেকে বাকলিয়ার চর পর্যন্ত কর্ণফুলী নদী ড্রেজিং–এর যাবতীয় যন্ত্রপাতি এসে গেছে। হামিদচর পর্যন্ত পাইপ লাইন সংযোগ কাজ শিগগির আরম্ভ হবে। সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে শুরু হবে ড্রেজিং। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চিফ হাইড্রোগ্রাফার কমান্ডার আরিফুর রহমান দৈনিক পূর্বকোণকে জানান, বাংলাদেশ নৌ বাহিনীকে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ( ডিপিএম) এই কাজ দেয়া হয়েছে। তাদের সব প্রস্তুতি এখন প্রায় শেষ। ব্রিজঘাটের সন্নিকটে স্টক ইয়ার্ডে পাইপসমূহ রাখা হয়েছে। দু’টি ড্রেজারও কর্ণফুলীতে। ড্রেজার দু’টি হল সাফির–১ এবং মিথাইল–১। ড্রেজার দু’টি এবং পাইপসমূহ মিরসরাইয়ে নির্মীয়মান বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজে ব্যবহার হয়েছে। এখানে নিয়ে আসা হয়েছে সেখান থেকে। জানা গেছে, সদরঘাট থেকে হামিদচর পর্যন্ত সাড়ে ৪ কিলোমিটার পাইপ সংযোগ করা হবে। তা করতে আগস্টের শেষ–সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ লেগে যেতে পারে। বর্ষা মওসুম শেষ হলেই আরম্ভ হবে ড্রেজিং। সেপ্টেম্বরের শেষদিকে তা শুরু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। নৌ বাহিনীর সাথে চট্টগ্রাম বন্দরের এ ব্যাপারে চুক্তি হয় গত ৫ মে। মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫৮ কোটি টাকা। সদরঘাট থেকে বাকলিয়ার চর পর্যন্ত কর্ণফুলী থেকে ৪৩ লাখ কিউবিক মিটার পলি ও আবর্জনা অপসারণ করে হামিদচরে প্রায় ৩০০ একর এলাকা ভরাট করা হবে। পাইপলাইন দিয়ে পলি ও আবর্জনা সরাসরি নিয়ে ডাম্পিং করা হবে। হামিদচরে হওয়ার কথা বঙ্গবন্ধু ওয়ার্ল্ড মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়। নৌ বাহিনী ই–ইঞ্জিনিয়ারিং এবং চায়না হারবারকে নিয়োগ দিয়েছে এই প্রকল্পে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের চিফ হাইড্রোগ্রাফার কমান্ডার আরিফুর রহমান আরও জানান, সদরঘাটে যে ৪০০ মিটার লাইটারেজ জেটি তৈরি করা হয়েছে তা যাতে অবিলম্বে চালু করা যায় সেই লক্ষ্যে সেখান থেকে ড্রেজিং শুরু করা হবে। আমদানিকারকরা জানান, লাইটার জেটিগুলো দ্রুত চালু করা প্রয়োজন। কারণ, লাইটার সুবিধার অভাবে বহির্নোঙরে মাদার ভেসেলসমূহকে অধিক সময় ধরে অপেক্ষমান থাকতে হয় এবং বিপুল আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় আমদানিকারকদের। এই ৪০০ মিটার জেটি চালুর পথে প্রধান অন্তরায় সামনে জমে থাকা পলি। ড্রেজিং হলে এখানে ৪টি লাইটার জাহাজ ভিড়ানো সম্ভব হবে। আর তাতে মাদার ভেসেলের অপেক্ষাকাল কমে যাবে।
সদরঘাট থেকে বাকলিয়া চর পর্যন্ত কর্ণফুলী নদীর আড়াই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ড্রেজিং সম্পন্ন করতে সময় লাগবে প্রায় এক বছর। তাতে গভীরতা প্রায় ৪ মিটার বৃদ্ধি পাবে। পরবর্তী ৪ বছর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিং করাও চুক্তির আওতায় রয়েছে। দখল ও দূষণে কর্ণফুলীর অবস্থা খারাপ। ভাটার সময় দৃশ্যমান হয় বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল। কোথাও কোথাও নদী রূপ নিয়েছে সরু খালের মত। বহুবছর ধরে নাব্যতা সংকট কর্ণফুলীতে। মোহনা থেকে ৪/৫ মাইলের মধ্যে জেটিসমূহ হলেও উজানে কালুরঘাট সেতু পর্যন্ত বন্দরের সীমানা। কর্ণফুলী ড্রেজিং না হওয়ায় ধারণ ক্ষমতা কমে গেছে। বৃষ্টির পানি নামতে পারে না, নগরীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। নাব্যতা রক্ষায় কর্ণফুলীতে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের জন্য মালয়েশিয়ান মেরিটাইম এন্ড ড্রেজিং কর্পোরেশনকে নিয়োগ দিয়েছিল বন্দর কর্তৃপক্ষ ২০১১ সালে। ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৩০ কোটি টাকা। প্রকল্পের আওতায় ৩৬ লাখ কিউবিক মিটার ড্রেজিং, ৪০০ মিটার জেটি নির্মাণ, ২৬১৫ মিটার বেড়িবাঁধ এবং পাশে ১০ মিটার চওড়া ওয়াকওয়ে তৈরির কথা ছিল। কিন্তু অসমাপ্ত রেখে ২০১৩ সালের আগস্টে কাজ বন্ধ করে দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। এর আগেই ১৬৫ কোটি টাকা রানিং বিল হিসেবে আদায় করে নেয় তারা। এতে নানা আইনি জটিলতায় বন্ধ হয়ে যায় ক্যাপিটাল ড্রেজিং। অপরদিকে, যতটুকু ড্রেজিং হয়েছিল তা অল্পদিনের মধ্যে আবার আগের রূপ নেয় অর্থাৎ ভরাট হয়ে যায়। আইনি জটিলতায় বন্ধ থাকে ড্রেজিং। বন্দর কর্তৃপক্ষ কাজ বাতিল করে এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালামাল আটকে দেয়। মালয়েশিয়ান কোম্পানি উচ্চ আদালতে মামলা করে। নিষেধাজ্ঞা জারি হয় ড্রেজিং কাজের ওপর। আদালত দীর্ঘ শুনানিশেষে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেন। এরপর নতুন প্রকল্প নিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ নতুন নামে।
সূত্র : দৈনিক পূর্বকোণ