ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | সবুজ পাহাড়ে বইছে রক্তের স্রোতধারা : কেন ?

সবুজ পাহাড়ে বইছে রক্তের স্রোতধারা : কেন ?

khagrachari-pic-01-20180504163254

নিউজ ডেক্স : রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় শক্তিমান চাকমা, তপনজ্যোতি চাকমাসহ ৬ জন মারা গেছেন। সবুজ পাহাড়ে বইছে রক্তের স্রোতধারা। নিত্য দিন ঘটছে হত্যার ঘটনা। পাল্টাপাল্টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় উদ্বেগ বেড়েছে। তবে গতকাল নানিয়ারচরে ৫ জনের নিহত হওয়ার ঘটনা শান্তিচুক্তি পরবর্তী গত দুই দশকের রাজনীতিতে বড় হত্যাকাণ্ড। পাহাড়ের আঞ্চলিক দলগুলোর নেতাদের সাথে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শান্তিচুক্তির পরবর্তী সময়ে নানিয়ারচর উপজেলা প্রসীত খীসার নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফের দুর্গ হিসেবে পরিচিত ছিল। ২০০৮ সালে জেএসএস (এমএন লারমা) সৃষ্টির পর থেকেই শক্তিমান চাকমার নেতৃত্বে নানিয়ারচরে শক্ত ঘাঁটি ওঠে। গত দুই বছরে নানিয়ারচরে ইউপিডিএফের (প্রসীত) আধিপত্য অনেকটা কমে যায়।

এদিকে তপনজ্যোতি চাকমার নেতৃত্বে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সৃষ্টির পর থেকে নানিয়ারচর এলাকায় অনাদি ও অনীল বিকাশ নামে দুই ইউপিডিএফ (প্রসীত) নেতা নিহত হন। এছাড়া হিল উইমেন্স ফেডারেশনের দুই নেত্রী দয়া সোনা ও মন্টি চাকমাকে নানিয়ারচর থেকেই অপহরণ করা হয়। দৃশ্যত নানিয়ারচর এলাকায় দীর্ঘদিন পর নিজেদের প্রভাব হারায় প্রসীত খীসার ইউপিডিএফ। সাম্প্রতিককালে নানিয়াচর উপজেলা ‘ডেথ জোন’–এ পরিণত হয়েছে। বৃহস্পতিবার শক্তিমান চাকমা হত্যা ও গতকাল ৫জনের মৃত্যুর ঘটনায় আলোচিত হয়েছে উঠে হৃদ ও পাহাড় বেষ্টিত নানিয়ারচর।

এসব হত্যাকাণ্ডে শংকিত সাধারণ মানুষ। সচেতন মহল বলছে, ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতে ঝরছে তাজা প্রাণ। একই সাথে নিহত হচ্ছে দলের সমর্থক ও সাধারণ মানুষ। গতকাল নানিয়াচরের ঘটনায় প্রাণ হারান মাইক্রোবাসের চালক সজিব। নিরাপরাধ চালকের মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না তার পরিবার। পরিবারের একমাত্র উপার্জনের মানুষকে হারিয়ে দিশেহারা সজিবের পিতা বজলু হাওলাদার। স্বামীকে হারিয়ে শোকে বিহ্বলঞ্জ স্ত্রী মৌসুমী আক্তার। সজিবের শিহাব নামে সাত বছর বয়সী এক পুত্র রয়েছে।

চলতি বছরের মধ্য এপ্রিলের পর থেকে রক্ত য়ী সহিংসতায় প্রাণ গেছে প্রায় ১০ জনের। নিহতের মধ্যে রয়েছেন নানিয়াচর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেএসএস (এমএন লারমা) কেন্দ্রীয় সহ–সভাপতি শক্তিমান চাকমা, ইউপিডিএফের (গণতান্ত্রিক) প্রধান তপনজ্যোতি চাকমাসহ ৬ জন। এছাড়া জেএসএস (এমএন লারমা) সমর্থিত যুব সমিতির ৩ সদস্য নিহত হন। রাঙামাটির নানিয়াচর উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শক্তিমান চাকমার দাহক্রিয়ায় যাওয়ার পথে ব্রাশফায়ারে নানিয়ারচরের বেতছড়িতে ৫ জন মারা যান। এই ঘটনায়ঞ্জআহত হয়েছেন ৯ জন।

এর আগে গত ১৫ এপ্রিল খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় জোড়া খুনে তপন চাকমা (৪০) ও বাঘাইছড়ির বিজয় চাকমা (৩২) নিহত হলেও তাদের মৃতদেহ খুঁজে পায়নি পুলিশ। দুই হত্যাকাণ্ডের রেশ না কাটতেইঞ্জপর দিন ১৬ এপ্রিল খাগড়াছড়িতে খুন হন সূর্য বিকাশ চাকমা নামে এক সমাজকর্মী। এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানায় ইউপিডিএফ (প্রসীত)। একই সপ্তাহের বুধবার খাগড়াছড়ির পানছড়িতে খুন হন ইউপিডিএফ সংগঠক নতুন কুমার ত্রিপুরা (৪০)। নতুন কুমার চাকমা হত্যার ঘটনায় জেএসএসকে (এমএন লারমা) দায়ী করে ইউপিডিএফ। তবে জেএসএস (এমএন লারমা) তা অস্বীকার করে। এরপর কয়েক দিন শান্ত থাকলেও একাধিক হামলার অভিযোগ ছিল।

তবে গত বৃহস্পতিবার শক্তিমান চাকমা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পাহাড়জুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। জেএসএসের (এমএন লারমা) শীর্ষ নেতাকে হত্যার জন্য ইউপিডিএফকে (প্রসীত খীসা) দায়ী করা হচ্ছে। এছাড়া গতকালের ৫ জনের হত্যাকাণ্ডের জন্যও ইউপিডিএফকে দায়ী করেছে জেএসএস (এমএন লারমা) ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক)।

তবে ইউপিডিএফের (প্রসীত) প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগের প্রধান নিরণ চাকমা বলেন, এসব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। এর সাথে ইউপিডিএফের কোনো সংযোগ নেই।

বর্তমানে পাহাড়ে চারটি আঞ্চলিক সংগঠনের কার্যক্রম রয়েছে। এর মধ্যে শান্তিচুক্তির বিরোধিতা করে ১৯৯৮ সালে আত্মপ্রকাশ ঘটে ইউপিডিএফের। সাবেক পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) নেতা প্রসীত খীসা দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। শান্তিচুক্তির বিরোধিতা করার কারণে শুরুতেই ইউপিডিএফ জনপ্রিয়তা পায়। কিন্তু সংগঠনটির বিরুদ্ধে খুন, গুম, অপহরণ ও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। এই কারণে দলটির প্রতিষ্ঠাকালীন অনেক সদস্য দল ও দেশ ত্যাগ করে বিদেশে পাড়ি জমান।

ইউপিডিএফের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ এনে ২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) এর আত্মপ্রকাশ ঘটে। ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) এর নেতৃত্ব দেন ইউপিডিএফের সাবেক সামরিক শাখার প্রধান তপনজ্যোতি চাকমা। মৃত্যুর আগে তপন জ্যোতি চাকমার সঙ্গে একাধিকবার এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তিনি জানিয়েছিলেন, ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) কোনো মহলের সৃষ্ট নয়। পাহাড়ি জনগণের আকাঙক্ষা থেকেই তিনি দল গড়ে তোলেন।

ইউপিডিএফের (গণতান্ত্রিক) আত্মপ্রকাশের ছয় মাসের মাথায় গতকাল দলটির প্রধান তপনজ্যোতি চাকমা নিহত হন। তবে ওই সময় ইউপিডিএফকে (গণতান্ত্রিক) আলবদর–রাজাকারের সাথে তুলনা করে ইউপিডিএফ (প্রসীত) এর অন্যতম সংগঠক মাইকেল চাকমা বলেন, ১৯৯৬ সালের সৃষ্ট মুখোশ বাহিনীর সাথে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) এর সাদৃশ্য রয়েছে।

এদিকে ২০০৮ সাল থেকে জনসংহতি সমিতি বিভক্ত হয়ে পড়ে। সুধা সিন্ধু খীসার নেতৃত্বে জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা) নামে নতুন দলের আত্মপ্রকাশ হয়। এই দুই সংগঠনের মাঝেও একাধিক সংঘাতের ঘটনা ঘটে।

সচেতন মহলের আশংকা, সংঘাতের প্রভাব পড়তে পারে পাহাড়ের রাজনীতি, অর্থনীতি ও পর্যটন খাতে।

সূত্র : দৈনিক আজাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!