এলনিউজ২৪ডটকম : গতো দুই দিনে অতি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি পানির ঢলে লোহাগাড়ার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এলাকার নদী, খাল ও ছড়ায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়িবাঁধের ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এতে খাল পাড়ের মানুষ আতংকের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। বহু বসতঘর ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) স্ব স্ব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এলাকায় ক্ষয়ক্ষতির তথ্য জানান।
চুনতি ইউপি চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন জানান, ভারী বর্ষণে ইউনিয়নের সাতগড় ছড়া ও হাতিয়ার খালের ভাঙ্গনে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্রীজ-কালভার্ড ও চলাচলের রাস্তা। এছাড়া রহমানিয়া পাড়া, পাঠিয়াল পাড়া ও সাতগড় এলাকায় ৭টি বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আধুনগর ইউপি চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন জানান, টানা বৃষ্টিতে ডলুখাল ও হাতিয়ার খালের পানি বেড়ে ইউনিয়নের সিপাহি পাড়া, মিয়া পাড়া, সর্দানী পাড়া, চৌধুরী পাড়া, মরা ডলুকুল, ক্যামেলিয়া পাড়া, পাল পাড়া ও উজা পাড়াসহ প্রায় ১০টি এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া সিপাহি পাড়ায় শাহ মজিদিয়া-রশিদিয়া সড়ক, মিয়া পাড়া সড়ক ও রোস্তমের পাড়া সড়ক ভেঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সকাল থেকে পানিবন্দি এলাকায় পরিদর্শনপূর্বক শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
পুটিবিলা ইউপি চেয়ারম্যান হাজী মো. ইউনুচ জানান, ভারী বর্ষণে ইউনিয়নের আ.স.ম দিদারুল আলমে মাছের খামার, পেঁপে ও মাল্টা বাগান, ফারুক মিয়ার ৩টি মাছের খামার ও জানের আলমের ৫টি মাছের খামার পানিতে ডুবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এছাড়া ডলুখানের পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে রাস্তাঘাট।
চরম্বা ইউপি চেয়ারম্যান মাষ্টার শফিকুর রহমান জানান, ইউনিয়নের রাজঘাটা এলাকায় টংকাবতী খাল ঘেষা সড়ক ভাঙ্গনে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। এছাড়া বহু রাস্তাঘাট ও ব্রিজ-কালভার্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিতে ডুবে গেছে একাধিক মাছের খামার।
কলাউজান ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল ওয়াহেদ জানান, ভারী বর্ষণে ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। টংকাবতী খালের ভাঙ্গনে বহু বসতঘর বিলীন হওয়ার মুখে। এছাড়াও রাস্তাঘাট ও ব্রিজ-কালর্ভাটের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
আমিরাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান এস. এম ইউনুচ জানান, ইউনিয়নের সুখছড়ি এলাকায় টংকাবতী খালের পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ওই এলাকায় প্রায় ২০টি বসতঘর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এছাড়া রাস্তাঘাটের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
লোহাগাড়া সদর ইউপি চেয়ারম্যান নুরুচ্ছফা চৌধুরী জানান, ইউনিয়নের দক্ষিণ লোহাগাড়া হাজির পাড়া ও মজিদার পাড়ায় ২টি বসতঘর বন্যার পানিতে ভেঙ্গে গেছে। এছাড়া সুখছড়ি খালের বেঁড়িবাধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যে কোন মুহুর্তের ভেঙ্গে এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশংকা রয়েছে। অতি বর্ষণে এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত ও রাস্তাঘাট ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
পদুয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. জহির উদ্দিন জানান, হাঙ্গর খালের ভাঙ্গনে নিচতালুক এলাকায় প্রায় ১০টি বসতঘর ভেঙ্গে গেছে। অনেক বসতঘর হুমকির মুখে। এছাড়া রাস্তাঘাট ও ব্রিজ-কালর্ভাটের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
বড়হাতিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মুহাম্মদ জুনাইদ জানান, অতি বর্ষণে ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পানিবন্দী মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
খাল পাড়ের বাসিন্দারা জানান, অপরিকল্পতভাবে বালু উত্তোলন করায় নদী ও খালের গভীরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই অতি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নদী ও খালের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানির তীব্র স্রোতে নদী ও খালের পাড় ভেঙ্গে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত এবং জনবসতি ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে পড়েছে। এছাড়াও উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে হয়েছে বলে জানা গেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম জানান, বর্ষণ ও পাহাড়ি পানি ঢলে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ৭.৮ হেক্টর জমির বীজতলা পানিতে ডুবে গেছে। বীজতলায় পানির সঙ্গে বালু জমেছে। দ্রুত পানি নেমে গেলে বীজতলার কোন ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
লোহাগাড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মাহবুব আলম শাওন জানান, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার সংবাদ পেয়েছি। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।