Home | ব্রেকিং নিউজ | লোহাগাড়ার সন্তান মুখতার আলম : কাবার গিলাফের প্রধান ক্যালিগ্রাফার হিসেবে বিরল সম্মান অর্জন

লোহাগাড়ার সন্তান মুখতার আলম : কাবার গিলাফের প্রধান ক্যালিগ্রাফার হিসেবে বিরল সম্মান অর্জন

আধুনগরের রশিদের ঘোনা কবির মোহাম্মদ সিকদার পাড়ায় কাবার গিলাফের প্রধান ক্যালিগ্রাফার মুখতার আলমের গ্রামের বসতঘরের গেইট। ইনসেটে মুখতার আলম।

এলনিউজ২৪ডটকম : পবিত্র কাবা ঘরের গিলাফ (কিসওয়াহ) প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের প্রধান ক্যালিগ্রাফার লোহাগাড়ার সন্তান মুখতার আলম বিরল সম্মান অর্জন করেছেন। সৌদি আরব সরকার তাকে বিশেষভাবে সে দেশের নাগরিকত্ব দিয়েছেন। মুখতার আলম উপজেলার আধুনগর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের রশিদের ঘোনা কবির মোহাম্মদ সিকদার পাড়ার মৃত মফিজুর রহমানের পুত্র।

জানা যায়, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ঘোষিত ‘ভিশন-২০৩০’-এর অংশ হিসেবে বিভিন্ন পেশার দক্ষ বিদেশিদের নাগরিকত্ব দেয়ার এ রাজকীয় নির্দেশনা দেয়। তারই প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) সৌদি বাদশার এক রাজকীয় নির্দেশনায় বিভিন্ন পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিদেরকে নাগরিকত্ব দেয়ার কথা জানানো হয়। এদের মধ্যে প্রথম দিন ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, ইতিহাসবিদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও চিকিৎসক, বিনিয়োগকারক, প্রযুক্তিবিদ, ক্রিড়াবিদসহ পাঁচ বিদেশি নাগরিক আছেন। এরমধ্যে লোহাগাড়ার সন্তান ক্যালিগ্রাফার মুখতার আলমও রয়েছেন।

ক্যালিগ্রাফার মুখতার আলমের গ্রামের বাড়িতে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, মুখতার আলম আনুমানিক ১৯৬৩ সালে গ্রামের বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। দেশ স্বাধীন হবার পূর্ব থেকে তারা সপরিবারে সৌদি আরব চলে যান। পিতা মফিজুর রহমান কাজের সুবাধে সপরিবারে সেখানে বসবাস করে আসছিল। মাঝে মধ্যে গ্রামের বাড়িতে আসতেন। চারদিকে বাউন্ডারী ওয়াল দেয়া একটি বসতঘরও রয়েছে। তবে ওই ঘরে কেউ থাকেন না। বাউন্ডারী ওয়ালের গেইটে ঝুঁলছে তালা। তারা মাঝে মধ্যে গ্রামের বাড়িতে আসেন। আত্মীয়-স্বজন ও আশপাশের লোকজনদের সাথে দেখা করে চলে যান চট্টগ্রাম শহরে নিজেদের বাসায়। প্রায় এক বছর পূর্বে মুখতার আলমের পিতা চট্টগ্রাম শহরের বাসায় অবস্থানকালীন সময় মারা গেছেন। তাকে দাফন করা হয়েছে গ্রামের বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে। মা শিরিন আক্তার বর্তমানে শারিরীকভাবে অসুস্থ। তিনি চট্টগ্রাম শহরের বাসায় অবস্থান করছেন।

তারা ৪ ভাই ১ বোন। মুখতার আলম সবার বড়। অন্যরা হলেন- মোরশেদ আলম, মমতাজ আলম, মোহাম্মদ আলম ও ফাতেমা বেগম। মুখতার আলম হাটহাজারী থেকে বিয়ে করেছেন। তিনি বর্তমানে স্ত্রী ও চার কন্যাসন্তান নিয়ে সৌদি আরবের মক্কায় বসবাস করছেন।

মুখতার আলমের মামাতো ভাই মো. খালেদ ও মো. ইব্রাহিম জানান, মুখতার আলম ছোটবেলা থেকে খুবই মেধাবী ছিলেন ও সৌদি আরবে অবস্থান করে আসছেন। মক্কার পবিত্র কাবাঘরের গিলাফ (কিসওয়াহ) প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের প্রধান ক্যালিগ্রাফার হিসেবে সে দেশের সরকার তাকে নাগরিকত্ব দিয়েছেন সেটা আত্মীয়-স্বজন ও সংবাদ মাধ্যমে জেনেছেন। তাঁর এ অর্জনে আমরা সকলে আনন্দিত। তিনি লোহাগাড়া উপজেলাসহ সারাদেশের মুখ উজ্জল করেছেন। প্রায় এক বছর পূর্বে মুখতার আলম গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন।

তারা জানান, মুখতার আলমের পিতা প্রথমে চুনতি হাকিমিয়া কামিল মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেছেন। কিছুদিন পর তিনি সপরিবারে সৌদি আরব চলে যান। সেখানে তিনি দীর্ঘসময় সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ফার্মাসিস্ট হিসেবে বিভিন্ন হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করেছেন। মূলতঃ পিতার কর্মসূত্রে পরিবারের সকলে দীর্ঘ সময় সৌদিতে কাটিয়েছেন।

সৌদি গেজেটের এক প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, মুখতার আলম বর্তমানে মক্কার কিসওয়া কারখানায় পবিত্র কাবার কিসওয়ার প্রধান ক্যালিগ্রাফার হিসেবে কাজ করছেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী ও ফোরামে তাঁর প্রধান ক্যালিগ্রাফিগুলো প্রদর্শিত হয়েছে। ক্যালিগ্রাফি দক্ষতা বিষয়ক প্রশিক্ষণে তিনি গুরুত্বপূর্ণ পাঠদান করেন। মক্কার দ্য ইনস্টিটিউট অব হলি মসকো তথা পবিত্র মসজিদুল হারাম পরিচালিত প্রতিষ্ঠানে ক্যালিগ্রাফি বিষয়ক তাঁর পাঠ শোখানো হচ্ছে।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, মুখতার আলম ১৯৭৭ সালে পবিত্র কোরআন হিফজ সম্পন্ন করেন। ১৯৯২ সালে মক্কার বিখ্যাত উম্মুল কোরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিল্পকলা বিষয়ে স্নাতক ও ২০০১ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। বর্তমানে পিএইচডি গবেষণারত। ১৯৯৫ সাল থেকে তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিল্পকলা বিষয়ে শিক্ষকতা করেন। ২০০২ সাল থেকে পবিত্র কাবা ঘরের গিলাফ (কিসওয়াহ) প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। দীর্ঘ ৪০ বছর যাবত তিনি আরবি ক্যালিগ্রাফি পেশায় কাজ করছেন।

এছাড়া তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপ্লোমা, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রিধারীদের সার্টিফিকেটের ক্যালিগ্রাফার হিসেবেও কাজ করেছেন। এছাড়াও বিভিন্ন সংস্থা থেকে অসংখ্য পুরস্কার ও প্রশংসার সনদ পেয়েছেন তিনি।

উল্লেখ্য, মোখতার আলম তাঁর পূর্বসূরি আবদুল রহিম বোখারির স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন। তিনি ১৯৯৬ সালে ৯০ বছর বয়সে মারা যান। মোখতার আলম ১৯৭৮ সালে গ্রান্ড মসজিদের ক্যালিগ্রাফি স্কুলে ভর্তি হন। সেখানে তিনি দুই বছর পড়াশোনা করেন। সে সময় তিনি ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্র ছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!