Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | ব্ল্যাক হোলের এই প্রথম ছবি দেখলো মানুষ

ব্ল্যাক হোলের এই প্রথম ছবি দেখলো মানুষ

P-1-2-8

নিউজ ডেক্স : প্রথমবারের মতো ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বরের ছবি তুলেছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। ৪০ বিলিয়ন বা ৪ হাজার কোটি কিলোমিটার আকৃতির এই কৃষ্ণগহ্বরের ছবি তোলা হয়েছে দূরবর্তী একটি গ্যালাক্সি বা ছায়াপথ থেকে। গতকাল বুধবার বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে স্থাপিত আটটি টেলিস্কোপ বা দূরবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে এই কৃষ্ণ গহ্বরের ছবি তোলা হয়েছে। এটি পৃথিবীর আকৃতির চেয়ে প্রায় ৩০ লাখ গুণ বড়। কৃষ্ণ গহ্বরটির অবস্থান প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ট্রিলিয়ন (১ মিলিয়ন=১০ লাখ, ১ ট্রিলিয়ন=১ লাখ কোটি) কিলোমিটার দূরে এম৮৭ নামে একটি ছায়াপথে। আমাদের পৃথিবী থেকে প্রায় ২৬ হাজার আলোকবর্ষ দূরে। বিজ্ঞানীরা একে ‘দানব’ বলে অভিহিত করছেন। এ যেন ভয়ঙ্কর এক দৈত্য। এটা রয়েছে মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সির ঠিক মাঝখানে। এর নাম ‘স্যাজিটেরিয়াস এ’। সর্বনাশা খিদে মেটাতে এটি বিশাল বিশাল নক্ষত্রের হাড়-মাংস গিলে নিচ্ছে। একে দেখার আগ্রহ প্রায় এক শতাব্দী ধরেই। অনেক চেষ্টা করে দুই বছর ধরে তার ছবি তোলা হয়েছে। ছবি তোলা হয়েছে ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপ দিয়ে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি একটি বিরলতম ঘটনা। যা ব্রহ্মাণ্ডের অনেক জটিল রহস্যের জট খুলে দিতে পারে।

কৃষ্ণগহ্বর কী : মহাকাশের এক অনন্ত বিস্ময় ব্ল্যাকহোল। একে কৃষ্ণবিবর বা কৃষ্ণগহ্বর বলা হয়। জেনারেল থিওরি অব রিলেটিভিটি অনুসারে, কৃষ্ণগহ্বর মহাকাশের এমন একটি বিশেষ স্থান, যেখান থেকে কোনো কিছু, এমনকি আলো পর্যন্ত বের হয়ে আসতে পারে না। এটি এমন একটি জায়গা, যেখানে খুবই অল্প স্থানে অনেক ভর ঘনীভূত হয়ে রয়েছে। এটা এতই বেশি যে, কোনো কিছুই এর কাছ থেকে রক্ষা পায় না। এমনকি সর্বোচ্চ গতিসম্পন্ন আলোও।

গতকাল অ্যাস্ট্রোফিজিকাল জার্নাল লেটার নামে এক জার্নালে বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়। এই পরীক্ষার নেতৃত্ব দেওয়া নেদারল্যান্ডসের রাডবাউড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হেইনো ফাল্ক বলেন, এম৮৭ নামের গ্যালাঙিতে এই কৃষ্ণগহ্বরের সন্ধান মিলেছে। তিনি বলেন, এর আয়তন আমাদের পুরো সৌরজগতের চেয়ে বড়। তিনি জানান, এর ভর সূর্যের চেয়ে ৬৫০ গুণ বেশি। আমাদের ধারণা, এটিই সবচেয়ে ভারী কৃষ্ণগহ্বর। এটা একটা দানব।

প্রকাশিত ছবিতে একটি উজ্জ্বল আগুনের বলয় দেখা যায়। অধ্যাপক ফাল্ক বলেন, এটি অন্ধকার এক গর্ত ঘিরে রেখেছে। এই গর্তে প্রচুর গ্যাস পতিত হওয়ায় উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। ওই অন্ধকার গর্তই এর কেন্দ্র।

গবেষক দলের সদস্য ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক ড. জিরি ইউনসি বলেন, এই ছবিটি যেন বিজ্ঞানীদের তাত্ত্বিক ধারণা ও হলিউডের নির্মাতাদের কল্পনারই প্রতিফলন। কৃষ্ণগহ্বর সাধারণ বস্তু দ্বারা গঠিত হলেও এতে সময় ও স্থানের অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে।

নক্ষত্র যখন জ্বালানি পুড়িয়ে শেষ করে ফেলে, তখন তা সংকুচিত হতে থাকে। সাধারণ গ্যালাঙিগুলোর মাঝে অবস্থানরত বড় বড় নক্ষত্র তাদের বিবর্তনের সর্বশেষ পরিণতিতে ব্ল্যাকহোল সৃষ্টি করে। নক্ষত্রগুলো অনেক বেশি সংকুচিত হয়েই কৃষ্ণগহ্বরের জন্ম দেয়।

ব্ল্যাকহোলের ভেতরে ঢুকে নক্ষত্রসহ যাবতীয় মহাজাগতিক বস্তু অদৃশ্য হয়ে যায়। সেগুলো আসলে কোথায় যায় সেটিই রহস্যময়। এর মধ্য দিয়ে পৃথিবীর মতো অন্য কোনো জায়গায় যাওয়া যায় কি না, সেটি নিয়েও আলোচনা আছে। গাণিতিক তথ্যের ভিত্তিতে ১৯৮২ সালে প্রথম কৃষ্ণগহ্বরের একটি ছবি আঁকা হয়। জঁ পিয়ের ল্যুমিয়ের ছবিটি এঁকেছিলেন। তবে সেটি ছিল কল্পনাপ্রসূত।

কৃষ্ণগহ্বর নিয়ে শেষ বয়সে অধ্যাপক স্টিফেন হকিং নতুন একটি তথ্য দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ধ্রুপদি তত্ত্ব অনুযায়ী কৃষ্ণগহ্বর থেকে কোনো কিছুরই বেরিয়ে আসার উপায় নেই। কিন্তু কোয়ান্টাম তত্ত্ব অনুযায়ী, কিছু শক্তি বেরিয়ে যেতে পারে। হকিংয়ের এমন মন্তব্যের পর কৃষ্ণগহ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

আলো আসে কোত্থেকে সবসময় ‘খাই খাই’ অবস্থায় থাকে ব্ল্যাক হোল। কখনো তার খিদে কমে না। চারপাশে থাকা কোনো গ্যালাঙির যে নক্ষত্র, ধুলোবালি, ধুলো আর গ্যাসের মেঘকে জোরালো অভিকর্ষ বলের টানে কাছে নিয়ে আসে ব্ল্যাক হোলগুলো। সেগুলো ব্ল্যাক হোলের পেটে পড়ার আগে ছুটে আসার সময় একে অন্যকে ধাক্কা মারে। ধাক্কা মারে ব্ল্যাক হোলের চারপাশে থাকা ধুলোবালি আর জমাট বঁাঁধা গ্যাসের মেঘকে। তার ফলে সৃষ্টি হয় এক ধরনের আলোর। যাকে বলা হয় এঙ-রে; যা আমরা দেখতে পাই না। তবে সেগুলোও তড়িৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গ বা ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ। যা খুব বেশি দূর যেতে পারে না। তাই খুব দূর থেকে তা দেখা সম্ভব হয় না।

কীভাবে সম্ভব হলো ছবি তোলা বিজ্ঞানীরা জানান, প্রচুর আধানযুক্ত কণা ইভেন্ট হরাইজনে থাকে বলে ব্ল্যাক হোলের চারপাশের ওই এলাকায় শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্রের জন্ম হয়। সেই শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে দিয়ে ইভেন্ট হরাইজন থেকে ঠিকরে বেরিয়ে আসে আরো এক ধরনের আলো। এটি আসলে রেডিও তরঙ্গ। যার তরঙ্গ দৈর্ঘ্য অনেক গুণ বেশি। তা অনেক অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে। যা এঙ-রে পারে না।

সেই রেডিও তরঙ্গকে দেখেই ব্ল্যাক হোলের চেহারাটা বুঝতে পারা সম্ভব। পৃথিবীর ৮টি মহাদেশে বসানো অত্যন্ত শক্তিশালী ৮টি রেডিও টেলিস্কোপ দিয়ে সেই রেডিও তরঙ্গকেই দেখা হয়েছে। ফলে, এতদিনে ছবি তোলা সম্ভব হয়েছে ব্ল্যাক হোলের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!