ব্রেকিং নিউজ
Home | ব্রেকিং নিউজ | বাবাকে কখনো দেখবে না অনাগত সন্তান

বাবাকে কখনো দেখবে না অনাগত সন্তান

মোহাম্মদ মারুফ : পৃথিবীর সব ধরণের বিপদ থেকে পরম যত্নে আগলে রাখেন বাবা। এই শব্দটির সঙ্গে যেন জড়িয়ে আছে ভালোবাসা, নির্ভরতা আর ভরসার ছায়া। আর সেই বাবাকে কখনো দেখবে না অনাগত সন্তান।

গত বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টায় (সৌদি সময়) সৌদিয়া আরবের সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যান লোহাগাড়ার যুবক মোহাম্মদ আলমগীর (৩৮)। তিনি উপজেলার পুটিবিলা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের জকরিয়া পাড়ার আশরফ আলীর পুত্র।

নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, সৌদিয়া আরবের আবাহা মাহাইল এলাকায় একটি বেকারিতে চাকুরী করতেন আলমগীর। ঘটনার রাতে ডিউটি শেষে কর্মস্থল থেকে বের হন। এরপর বাসায় ফেরার আগে রুমমেটকে দাঁড়িয়ে রেখে দোকান থেকে কিছু প্রয়োজনী সামগ্রি কিনে বের হতেই একটি মোটরসাইকেল তাকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় ফেলে দেয়। এরপর দ্রুতগতির একটি লরি গাড়ি তাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। নিহতের মরদেহ বর্তমানে সেখানকার একটি হাসপাতাল মর্গে রয়েছে।

নিহতের চাচা নুরুল ইসলাম জানান, রাত আড়াইটার দিকে মুঠোফোনে রুমমেট মো. ফারুক ভাতিজা আলমগীরের মৃত্যুর সংবাদ জানায়। দীর্ঘ ১৫ বছর যাবত তার ভাতিজা সৌদিয়া আরবে আসা-যাওয়ার মধ্যে ছিলেন। সর্বশেষ ২০২৩ সালের অক্টোবরে ৬ মাসের ছুটি কাটিয়ে সৌদিয়া আরব চলে যান। গ্রামে বসতঘর না করায় প্রায় ২ বছর যাবত আধুনগর খাঁন হাট বাজারের পাশে একটি ভবনে ভাড়া বাসা নিয়ে পরিবারকে রেখেছেন। বাসায় তার স্ত্রী শামিমা আক্তার ও শাহরিয়ার মোহাম্মদ শোয়াইব নামে সাড়ে ৪ বছর বয়সী শিশু থাকেন। শিশুটি স্থানীয় একটি কিন্ডার গার্টেনের নার্সারীতে পড়ে। এছাড়া শামিমা আক্তার ছয় মাসের গর্ভবতী। ভাতিজার পরিবারকে দেখভাল করার দায়িত্বও তার ছিলেন বলে জানান তিনি। এজন্য তার ভাড়া বাসার পাশের বাসাটি ভাড়া নিয়ে ভাতিজা আলমগীর পরিবারকে রেখেছেন।

বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ভাড়া বাসায় সরেজমিনে দেখা যায়, বাসায় সুনসান নীরবতা, স্তব্ধ পুরো বাসা। অনেক আত্মীয়-স্বজন এসেছেন আলমগীরের পরিবারকে শান্তনা দিতে। অনেকের চোখের কোনায় অশ্রু। অন্তস্বত্বা স্ত্রী শামিমা আক্তার স্বামীর মৃত্যুর শোক সহ্য করতে না পেরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন। কারো সাথে কোন কথা বলতে পারছেন না। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রবাসী আলমগীর স্ত্রীর সাথে মুঠোফোনে শেষ বারের মতো কথা বলেছেন। শিশু শাহরিয়ার মোহাম্মদ শোয়াইবকে বাবা কখন আসবে জিজ্ঞেস করা হলে জানায়, বাবা আর কোনোদিন আসবেন না।

নিহতের চাচাতো ভাই রায়হানুল ইসলাম জানান, অনাগত সন্তান কখনোই বাবাকে দেখতে পাবে না ভাবতে খুব খারাপ লাগছে। পরিবারের সকলে আমার ভাই আলমগীরের মরদেহ দেশে ফেরত আনতে চান। শেষ ঠিকানা যেন দেশের মাটিতে হয়। তারজন্য পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

পুটিবিলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেন মানিক জানান, সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত আলমগীরের মরদেহ দেশে আনা কিংবা সেখানে দাফনের ব্যাপারে সকল ধরণের সহযোগিতা করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!