ব্রেকিং নিউজ
Home | শীর্ষ সংবাদ | ফেসবুক

ফেসবুক

1531

ডাঃ ফরিদা ইয়াসমিন সুমি : কী শুরু করলো এই ছেলেটা! ফেসবুক খোলামাত্রই তুহিনের ম্যাসেজ! তিন্নির প্রতিটা ছবিতে, লেখায় খুব আবেগ দিয়ে কমেন্ট করে। ইনবক্সে তিন্নি বারণ করেছে এমন খোলামেলা মন্তব্য না করার জন্য। তুহিন দুঃখ প্রকাশ করেছে। আর হবে না তাও বলেছে। ছেলেটা যে কী! দু’দিন পরে আবার ভুলে যায়। অভিযোগ করতেই বলে, সে নাকি তিন্নির প্রেমে পড়েছে, গভীরভাবে! তাই লাগাম টানতে পারছে না। তিন্নি ফেসবুক খুলেছে দু’বছর হলো। তার অনার্স পড়ুয়া মেয়েই খুলে দিয়েছে। এজন্য মনে মনে মেয়ের প্রতি কৃতজ্ঞ সে। সময় কাটানোর জন্য ফেসবুকটা খুব ভালো জায়গা। তিন্নির দুই মেয়ে। বড়টা ঢাকায় বিবিএ পড়ছে। ছোটটা তাদের সাথে চট্টগ্রামেই আছে। এবার ক্লাস টেনে উঠেছে। অল্পবয়সে বাচ্চা হয়ে যাওয়ায় তিন্নিকে দেখলে কেউ বিশ্বাসই করে না তার এত বড় মেয়ে রয়েছে। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে তিন্নি। দেখতে শুনতে ভালো হওয়ায় এইচএসসির পরেই বিয়ে হয়ে যায়। পড়ার খুব শখ ছিল। বিএ-তে এডমিশনও নিয়েছিল, কিন্তু দু’মাস না যেতেই কনসিভ করে ফেলে। তাছাড়া বিয়ের পর বাসার নানান ঝামেলা তো আছেই। এত সব সামাল দিয়ে বই নিয়ে বসা আর সম্ভব হয়ে উঠতো না। তিন্নির পড়াশুনাও শিকেয় উঠলো। বড় মেয়ে রিনতোনা হলো। তার চার বছর পরেই ছোটমেয়ে সানজানা হলো। মাঝেমাঝে বইগুলো নাড়াচাড়া করে। ঝেড়েমুছে রাখে। এখন মেয়েরা অনেক বড় হয়ে গেছে। আগের মত সংসারের কাজের চাপও নেই। কিন্তু তিন্নির আর ডিগ্রী পরীক্ষাটা দেয়া হলো না।

পড়তে খুব ভালোবাসে তিন্নি। প্রচুর আউটবুক পড়ে। টুকটাক লেখালেখিরও চেষ্টা করে। চট্টগ্রাম ছেড়ে বড়মেয়েটা ঢাকায় চলে যাবার পর বাড়িটা খালি খালি লাগে। ছোটটাও ব্যস্ত তার স্কুল আর কোচিং-এর পড়া নিয়ে। তিন্নির স্বামী গফুর ব্যবসায়ী। সংসারের প্রথমদিকে খুব স্ট্রাগল করতে হয়েছে তাদের। বিশেষ করে গফুর একবার ব্যবসায় অনেক টাকা লস করে খুব খারাপ অবস্থায় পড়ে যান। এখন আর্থিক দিক থেকে বেশ ভালো আছে তারা। শুধু তিন্নির একাকিতা ঘোচে না। ভীষণ একা লাগে তিন্নির। আগে রান্নাবান্না, ঘরের কাজ সব নিজেকেই করতে হতো। এখন একটা ছুটা বুয়া আছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি সব কাজ গুছিয়ে দিয়ে যায়। একটা সময় একটু অবসরের জন্য মুখিয়ে থাকতো তিন্নি। আর এখন অবসর যেনো কাটতেই চায় না। সময় কাটাতে ডায়েরিতে লেখালেখি করে তিন্নি। কখনো কবিতা, কখনো গল্প, কখনোবা দিনলিপি যখন যা মন চায়, তাই লেখে। গত আট/নয় মাস ধরে কিছু কিছু লেখা ফেসবুকেও আপলোড করেছে। প্রথম প্রথম একটু দ্বিধা আর লজ্জা ছিল। কিন্তু ওর লেখায় এত বেশি লাইক আর কমেন্ট পড়তে শুরু করলো যে, তিন্নি দ্বিগুণ উৎসাহে লিখতে শুরু করলো। ও নিজেও টের পেলো তার লেখা সত্যিই আগের চেয়ে পরিপক্ব হয়ে উঠতে লেগেছে! একদিন তো রিনতোনা ফোন করে বললো, তিন্নি নাকি স্টার হয়ে গেছে! ওর ফ্রেন্ডসরাও নাকি তিন্নির লেখা পছন্দ করতে শুরু করেছে। খুব লজ্জা পেয়েছিল মেয়ের কথা শুনে। ফেসবুকে লেখালেখি এখন নেশার মত হয়ে গেছে তিন্নির! একটু পরপর ফেসবুকে লগ ইন না করলে ভালো লাগে না। রোজ দশ/বিশটা করে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসতে শুরু করেছে। তিন্নির এখন অনেক ফেসবুক ফ্রেন্ড। সবকিছুই ঠিক ছিল। মুশকিল হলো, ম্যাসেঞ্জার নিয়ে। নানান জন নানান কিছু লিখতে শুরু করেছে ম্যাসেঞ্জারে। প্রশংসাবাক্যে সয়লাব তিন্নির ইনবক্স- তিন্নি খুব সুন্দরী, আকর্ষণীয়। ওকে খুব ভালো লাগে। মনের গহীনে প্রেমিকার যে চিরকালীন রূপ সবাই কল্পনা করে তিন্নি ঠিক তেমনই। তিন্নির ভক্তরা ফোন নং পেতে চায়, দেখা করতে চায় ইত্যাদি ইত্যাদি! শুরুর দিকে এসবে একটু ভয়ই পেতো। এখন অনেকটা হ্যান্ডেল করতে শিখে গেছে। বাজে ইঙ্গিত করে মন্তব্য করলে বা ম্যাসেজ পাঠালে সাথেসাথে ব্লক করে দেয় তিন্নি। দু’একজন ভদ্রলোকের সঙ্গে সখ্য গড়ে উঠেছে তিন্নির। মাঝেমধ্যে ইনবক্সে চ্যাটিং হয়। তবে ফোন নাম্বার দেয় না কাউকেই। ফেসবুক খোলার সময়েও অব্যবহৃত একটা নাম্বার দিয়ে খোলা হয়েছিল। লেখার পাশাপাশি তিন্নি এখন ছবিও আপলোড করে। আর তাতে শতশত লাইক আর কমেন্ট পড়ে। ভালোই লাগে তিন্নির। অবসর কাটানোর এত সুন্দর উপায় আর হতে পারে না! গফুর সকালে যান রাতে ফেরেন! ব্যবসার কাজে সারাদিন ব্যস্ত থাকেন। রাতের খাবারটা একসাথে খাওয়ার চেষ্টা করে তিন্নি। কিন্তু প্রায় সময়ই গফুর বাইরে থেকে খেয়ে আসেন। ব্যবসার প্রয়োজনে বিভিন্ন পার্টির সাথে বায়ারের সাথে ডিনার করতে হয়। এসব নিয়ে আগে অভিযোগের অন্ত ছিলো না তিন্নির। এখন আর করে না। ক্লান্তবোধ করে। গফুরের ইচ্ছে অনুযায়ী রাতের শয্যাসঙ্গী হওয়া আর সাংসারিক প্রয়োজন ছাড়া গফুরের সাথে তিন্নির সেই অর্থে কোনো সম্পর্ক নেই বললেই চলে। তিন্নিও এখন নিজের আলাদা জগৎ গড়ে নিয়েছে। কী পেয়েছে আর কী পায়নি এসব নিয়ে ভেবে অশান্তি বাড়াতে চায় না! গতকাল ছাদে তোলা কিছু ছবি আপলোড করেছিল ফেসবুকে। প্রতিটি মন্তব্য পড়ছিল তিন্নি। হঠাৎ একটা মন্তব্যে চোখ আটকে যায় তিন্নির! মহসিন নামের একজন লিখেছে, ‘ইউ লুক সেক্সি, ওয়ান্ট টু মেইক লাভ উইদ ইউ!’ ছি ছি ছি, এত বাজেকথা কেউ লিখে এরকম ওপেনলি? সাথে সাথে ব্লক করে দিলো তিন্নি! তার দুই মেয়েই ফেসবুকে তার সাথে এটাচ। ওরা দেখলে কী ভাববে? ভীষণ বিব্রতবোধ করলো তিন্নি। আরও সাবধানী হয়ে গেলো ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করার ব্যাপারে! দু’তিনজনের সাথে মোটামুটি নিয়মিতই চ্যাটিং চলছিল, তার মধ্যে একজন তুহিন। তিন্নির প্রায় ছয় বছরের ছোট। তুহিনের ওয়াইফ মাস্টার্সে পড়ছে। সে একটা মোবাইল কোম্পানিতে জব করে। এখনও ছেলেপুলে হয় নি। ওয়াইফের পড়া শেষ হলেই বেবী নিবে প্ল্যান করেছে। এই ছেলেটা একেবারে নাছোড়বান্দা! রোজ সকালে ‘শুভ সকাল’ আর রাতে ‘শুভ রাত্রি’ না লিখে ছাড়বেই না। এর মাঝে একটু পরপর ম্যাসেজ, ‘কী করছো’, ‘নাস্তা করেছো’, ‘লাঞ্চ করেছো’? সারাদিন জুড়েই এরকম নানা প্রশ্ন। প্রথম দিকে রেসপন্স না করলেও ধীরে ধীরে ছেলেটা কেমন করে যেনো ওর মনোযোগ কেড়ে নিলো। কোনো কোনো দিন সারাদিন চ্যাটিং করেই কাটতো দু’জনের। তুহিনের ওয়াইফ রাজশাহী ভার্সিটিতে পড়ে। তুহিন ঢাকায় তার বড় ভাইয়ের সাথে থাকে। ভাই-ভাবির চার বছরের একটা ছেলে আছে। অরিজিনালি ওরা রাজশাহীর। চ্যাটিং-এ ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়ে ওরা। তুহিন প্রায়ই চট্টগ্রামে আসতে চায়, তিন্নির সাথে দেখা করতে। ভীষণ ভয় পায় তিন্নি। কোনোভাবে যদি জানাজানি হয়ে যায়, সর্বনাশ হয়ে যাবে! তবে তুহিনের আহবান উপেক্ষা করতে কষ্ট হয় তিন্নির। তার এতদিনকার নিস্তরঙ্গ জীবনে তুহিন যেনো বাঁধভাঙ্গা ঢেউ! মুখে মুখে নিষেধ করলেও ভেতরে ভেতরে সেও চায় একটু দেখা হোক। আরও কিছু কি ইচ্ছে করে তিন্নির! নাহ, এর বেশি আর ভাবতে পারে না তিন্নি! লজ্জা আর অস্বস্তি ঘিরে ধরে তাকে! চল্লিশ, বিয়াল্লিশ বছর বয়সের জীবনে এরকম অনুভূতি আর হয় নি কখনো! অকপটে ওর বয়সের কথা বলেছে তুহিনকে। বিন্দুমাত্র পাত্তাই দেয় নি তুহিন। তিন্নিকে দেখতে নাকি ত্রিশ, বত্রিশের বেশি মনেই হয় না! তাছাড়া তিন্নিকে নাকি ভালোবেসে ফেলেছে। বয়সে তার কিছুই এসে যায় না! তিন্নির বুকে কাঁপুনি হয়, সারা শরীরে শিহরণ জাগে! প্রতিদিন বলে তুহিন চট্টগ্রামে আসবে, দুজনে কোথাও বসে চা খাবে, গল্প করবে। তিন্নির সাহসে কুলায় না। চট্টগ্রাম শহরটা ছোট। কার সাথে কখন দেখা হয়ে যায়। তিন্নি রাজি হয় না। তবে তিন্নির ঢাকায় যাবার একটা সুযোগ এসে যায়। অবশ্য এরকম সুযোগ আগেও এসেছিল কিন্তু তিন্নি সেটা গ্রহণ করেনি। রিনতোনার বেশ কিছু বইপত্র আর কাপড়চোপড় পৌঁছে দিতে হবে। মেয়ে নিজেই আসতো। সামনে নাকি এসাইনমেন্ট আছে, তাই এখন আসতে চাইছে না। গফুর তার অফিসের লোক দিয়েও পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে পারবেন। কিন্তু তিনি নিজেই তিন্নিকে অফার করলেন, ‘তুমিই নিয়ে যাওনা, মেয়েটাকেও দেখে আসো, কেমন পড়াশোনা করছে’। ঢাকায় যাবার কথা শুনেই তিন্নির শরীর বেয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেলো। আনন্দ আর ভয় একসাথে জড়ো হলো! মনটা বিক্ষিপ্ত হয়ে রইলো। কোথাও মন বসাতে পারলো না। গফুর ফ্লাইটের টিকিট করে আনলেন। বৃহস্পতিবার সকাল সাতটার ফ্লাইট। আটটা নাগাদ পৌঁছে যাবার কথা। এয়ারপোর্ট থেকে উবার নিয়ে চলে যাবে বসুন্ধরায়। নর্থ-সাউথ ভার্সিটির কাছাকাছিই একটা ফ্ল্যাট ভাড়া করে দিয়েছে মেয়েদের। রিনতোনাসহ আরও চার বান্ধবী থাকে একসাথে। ক্লাস শেষে এসাইনমেন্ট জমা দিয়ে আসতে আসতে প্রায় পাঁচটা বেজে যাবে ওদের। তিন্নির কাছে বাসার এক্সট্রা চাবি আছে। শুক্রবার একটা দিন মেয়ের সাথে কাটিয়ে শনিবারেই ফিরে যাবে। ছোটমেয়েটার আবার ক্লাস টেস্ট শুরু হবে। প্রবল উত্তেজনা আর ভয়ে ভয়ে তুহিনকে জানালো সবকিছু। রাতে আর ঘুম হলো না তিন্নির। তুহিনের প্রোফাইল পিকচারটা দেখতে লাগলো। মোটর বাইকের ওপর বসে হেলমেট হাতে নিয়ে ছবিটা তোলা। দারুণ পৌরুষদীপ্ত! মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো তিন্নি। আচ্ছা, তিন্নিকে দেখে তুহিনের যদি ভালো না লাগে! তুহিন ওর কত ছোটো! ভালো না লাগার সম্ভাবনাই তো বেশি! গফুরের দিকে পিঠ দিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে মোবাইলে তুহিনের ছবি দেখতে দেখতে নানান কথা ভাবতে লাগলো তিন্নি। মাঝরাতে অভ্যাসমতো গফুর হাত বাড়ালে ঘুমের ভান করে শক্ত হয়ে রইলো তিন্নি। আজ তার দায়সারা গোছের মিলনে ইচ্ছে করছে না। হাতটা সরিয়ে দিলো তিন্নি। কখন ঘুমিয়ে পড়লো টেরই পেলো না। এলার্মের শব্দে ঘুম ভাঙলো।

ল্যান্ড করতে না করতেই তুহিনের ফোন! হ্যালো বলতেই গলা কেঁপে গেলো তিন্নির! লাগেজ নিয়ে বেরিয়ে আসতেই দেখে তুহিন দাঁড়িয়ে। চিনতে একটুও কষ্ট হলো না তিন্নির। তিন্নির লাগেজ বলতে রিনতোনার কিছু কাপড় আর বই। ওর নিজের তেমন কিছুই আনেনি, একসেট কাপড় ছাড়া। তুহিনের সাথে কীভাবে কথা শুরু করবে ভেবে পাচ্ছিল না। তুহিনই সহজ করে নিলো ওকে। চলো, বলেই ওর হাত থেকে লাগেজটা নিজের কাঁধে নিয়ে নিল। ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের কর্নারে দাঁড় করিয়ে রাখা একটা বাইক দেখিয়ে বললো, ‘পারবে না আমার পঙ্খিরাজে চড়তে’? মোটরবাইকে চড়া খুব পছন্দ তিন্নির! অনেক শখ ছিলো একটা সময়! সেসব শখ ভুলেই গেছে কবে! স্বামীর সাথে তার বয়সের ব্যবধান বেশি হওয়ায় কোনো ছেলেমানুষী শখের কথা কখনো মুখ ফুটে বলতে পারে নি বা আবদার করতে পারে নি। আজ মনে হলো সে ফিরে গেছে তার কলেজ জীবনে, তার বয়স বিয়াল্লিশ নয়, শুধু বিশ! ‘কী এতো ভাবছো? পারবে না আমার সাথে চড়তে’? তিন্নিও স্বতঃস্ফুর্তভাবে বললো, নিশ্চয় পারবো, কিন্তু লাগেজ? লাগেজটা তুহিন সামনের দিকে রেখে সামলে নিলো। হেলমেটটা নিজে না পড়ে তিন্নিকে পড়িয়ে দিলো। সিটে বসে স্টার্ট নিতেই তিন্নিও উঠে বসলো পেছনের সিটে। ঝাঁকুনিতে তিন্নির ভয় করতে লাগলো। তুহিন ওর হাতটা নিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরতে সাহায্য করলো। ছবি দেখে যতোটা ভেবেছিল তার চেয়েও অনেক বেশি পৌরুষদীপ্ত তুহিন। সব দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বসলো তিন্নি। দুজনেরই এমন ভাব যেনো ওরা পরস্পরের বহুদিনের চেনা। সব প্ল্যান তুহিনই করেছে। তিন্নি আজ শুধু ওর নীরব ফলোয়ার। প্রথমে মেয়ের বাসায় লাগেজ ড্রপ দিয়ে ওরা বেরিয়ে পড়লো মোটর সাইকেলে। দুজনই শারীরিক উষ্ণতা বিনিময় উপভোগ করছিলো। বড় একটা গলিতে ঢুকে একটা বিল্ডিঙের সাইড করে নামলো তুহিন। হাত বাড়িয়ে তিন্নিকেও নামতে সাহায্য করলো।

– এটা কি রেস্টুরেন্ট? ওপরের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো তিন্নি।

– হুমম, এখানে প্রেমিক-প্রেমিকারা আসে। তুমি আসবে বলে খোঁজখবর নিয়ে এটা বের করেছি।

তুহিনকে ফলো করলো তিন্নি। ভেতরে ঢুকে চোখ-মুখ লাল হয়ে গেলো তিন্নির। সারা ফ্লোর জুড়ে একটু গ্যাপ দিয়ে সোফা পাতা রয়েছে। প্রতিটিতেই জোড়ায় জোড়ায় ছেলেমেয়েরা বসেছে। বেশিরভাগের অবস্থাই আপত্তিকর। কেউ জড়িয়ে ধরে চুমু খাচ্ছে, কেউবা আধশোয়া অবস্থায় আছে!

এখানে কেনো এসেছি আমরা, একটু রাগ করেই বললো তিন্নি। তুহিনও কিছুটা বিব্রত। বিশ্বাস করো, আমি নিজেও জানি না এর ব্যাপারে। বেশি কমন রেস্টুরেন্টগুলোতে যাওয়া রিস্কি বলে এখানে নিরিবিলিতে এসেছি। তোমার ভালো না লাগলে পনেরো, বিশ মিনিট বসে অন্য কোথাও চলে যাবো। তুহিনের ভনিতাহীন কথা ভালো লাগলো তিন্নির। কেনো যেনো মনে হলো, এই ছেলেটার উপর আস্থা রাখা যায়। তার কোনো ক্ষতি অন্তত ছেলেটি করবে না। চারপাশে সবাই সোনালি, রূপালি লম্বা লম্বা অনেকটা সেক্সোফোনের মকো কী একটা থেকে যেনো হুকোর মত টেনে টেনে কী খাচ্ছে। ধোঁয়ার মত। তুহিনের কাছে জানলো, এটাকে সীসা বলে। বারোশ’, পনেরোশ’ বিভিন্ন দামের আছে। এত দাম? অবাক হলো তিন্নি! তিন্নির আজ কী হয়েছে জানে না। আজ কোনো নিয়মের তোয়াক্কা করতে মন চাইছে না। আজ সে সকল নিয়ম ভাঙবে! দুজনে মিলে একটা সীসা নিলো। ভালো লাগছে তিন্নির। খুব চাইছে, তুহিন ওকে জড়িয়ে ধরে চুমু খাক! আশ্চর্য কা ! ভাবতে না ভাবতেই তিন্নির মুখটা গভীর আবেগে আঁজলায় তুলে নেয় তুহিন। প্রবল আবেশে মুখে পুরে নেয় তিন্নির পুরুষ্টু দুটো ঠোঁট! কতক্ষণ জানে না তিন্নি! মনে হয় অনন্তকাল কেটে গেছে, একটি চুমুতে! চুমু কী তবে এমনটাই হয়! এতো মধুর! এতো শিহরণ-জাগানিয়া! বহুক্ষণ কোনো কথা বলে না দুজনেই! তুহিনই মুখ খোলে, ভাইয়া, ভাবি রাজশাহী গেছে। বাসায় কেউ নেই। আমি একা। যাবে?

তিন্নির হাত ধরে টেনে তোলে তুহিন। ওর উত্তরের অপেক্ষা করে না। তিন্নিও কোনো কথা না বলে তুহিনকে অনুসরণ করে। পঙ্খীরাজের পিঠে চেপে অল্পসময়েই পৌঁছে যায় গন্তব্যে। তালা খুলে খালি ঘরে ঢোকে ওরা। তীব্র আদরে আদরে ভরে দেয় তুহিন ওকে। তিন্নির বাঁধ ভেঙে যায়। গভীর আবেগে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে তুহিনকে! তিন্নি পৌঁছে যায়, অজানা, অচেনা এক ভিনগ্রহে! শান্ত হয়ে এলে পরম যত্নে তিন্নিকে কোলে করে তুলে নেয় তুহিন। আদর করে একে একে পরিয়ে দেয় জামাকাপড়গুলো। তুহিনের কপালে চুমু খায় তিন্নি, ‘অল দ্য বেস্ট’, ভালো থেকো’। তুহিন নিজেই তিন্নিকে বসুন্ধরায় নামিয়ে দিয়ে এলো।

জীবনের এই শ্রেষ্ঠতম পাওয়া, এই মধুরতম স্মৃতি কিছুতেই ম্লান হতে দেবে না তিন্নি! ফেসবুক অন করেই তুহিনের ছবিতে পরম মমতায় হাত বোলালো। চোখে পানি এসে ঝাঁপসা করে দিলো চারপাশ। নিজেকেই নিজের অচেনা মনে হলো। ভয় করতে লাগলো নিজেকেই!

প্রোফাইলে ঢুকে তুহিনকে ব্লক করে দিলো তিন্নি। বাসায় এসেই রিনতোনা চিৎকার শুরু করলো, ‘উফ মা! তুমি তো আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছো! সেই কখন থেকে ফোন করছি, ধরছো না কেন?’ ওদিকে বাবাও আমাকে ফোন করে করে হয়রান’।

– মোবাইলটা হারিয়ে ফেলেছি, মা!

– নো প্রব্লেম, চলো, গ্রামীণের অফিসে গিয়ে সিম তুলে আনি। আমার কাছে পুরোনো একটা সেট আছে।

রিনতোনা, আমি ভেবেছি কী, তোকে নিয়ে আজ বসুন্ধরা সিটি যাবো, মা মেয়ে সারাদিন ঘুরবো, তোর যা মন চায় কিনবি আর আমার জন্য নতুন সীম আর একটা সুন্দর মোবাইল সেট কিনে দিবি!

মায়ের মুখের দিকে একটু অবাক চোখে চাইলো রিনতোনা। তার অসম্ভব সুন্দরী, সাধাসিধে গৃহিণী মা আজ অন্যরকম করে চাইছে। ক্ষতি কী! তাই হোক না!

লেখক : সহকারী অধ্যাপক, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!